পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোবায়েদুর রহমান : বাংলাদেশে হিন্দু ভাইদের নির্যাতনের বিষয়টি একান্তভাবেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। অভিযোগ মোতাবেক বাংলাদেশে হিন্দু ভাইয়েরা নির্যাতিত হচ্ছেন, সেটি আংশিক সত্য হলেও সেই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব কাদের? এ ব্যাপারে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই যে, সেই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব প্রধানত বাংলাদেশ সরকারের এবং সে ব্যাপারে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ।
হিন্দু নির্যাতন সম্পর্কে একটি কথা বলা দরকার। হিন্দু সম্প্রদায় বাংলাদেশের জনগণের মোট জনসংখ্যার ৯ শতাংশ। সে হিসেবে তাদের সংখ্যা হলো ১ কোটি ৪৪ লাখ। হিন্দু ভাইয়েরা নির্যাতিত হচ্ছেনÑএর অর্থ এই নয় যে, বাংলাদেশের ১ কোটি ৪৪ লাখ হিন্দুর সকলেই নির্যাতিত হচ্ছেন। বাংলাদেশের কোনো জেলার কোনো থানায় বা কোনো এলাকায় হিন্দু ভাইয়েরা নির্যাতিত হয়েছেন, কবে কখন হয়েছেন এবং কারা তাদের ওপর অত্যাচার করেছেন, সেটি বের করবে সরকারি কর্তৃপক্ষ। এজন্য তদন্ত করা বা আইন মোতাবেক যা যা করা দরকার সেটি করবে সরকার। সরকার ইতোমধ্যেই কঠোর হয়েছে।
সরকার ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে কঠোরতম পদক্ষেপ নিয়েছে। এই লেখার সময় পর্যন্ত সরকার সহিংসতা দমনের জন্য ৫ হাজার ৭০০ ব্যক্তিকে অর্থাৎ প্রায় ৬ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছেন। সরকারের এত কঠোর পদক্ষেপও পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়দের খুশি করতে পারছে না।
এখানে ইন্ডিয়ার কী করার আছে? ইন্ডিয়ার এখানে কিছুই করার নেই। যদি তারা এ ব্যাপারে কিছু বলতে আসে অথবা করতে আসে, তাহলে সেটি সুস্পষ্টভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ বলে পরিগণিত হবে। আর বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যদি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করে বিবৃতি দেয়, তাহলে সেটি সুস্পষ্টভাবে দেশদ্রোহিতা বা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে।
রানা এবং পীযূষদের কণ্ঠে কাদের আওয়াজ?
গভীর পরিতাপ এবং ধিক্কারের বিষয় হলো এই যে, বাংলাদেশের দুই বিশিষ্ট নাগরিক বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা হলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত এবং বিশিষ্ট অভিনেতা ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। রানা দাসগুপ্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের একজন প্রসিকিউটরও। এই উভয় ব্যক্তিকেই এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছে / বসিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
আজ ১৩ জুন সোমবার দৈনিক ‘মানবজমিন’ এবং আরো দু-একটি পত্রিকায় প্রকাশিত বিবৃতিতে রানা দাসগুপ্ত বলেন, আমরা মনে করি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে ভারত এক্ষেত্রে কিছু করতে পারে। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর ভারত চাপ সৃষ্টি না করলে মৌলবাদীদের থামানো যাবে না। তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলে ভারত একটি বড় শক্তিধর দেশ। প্রতিবেশী দেশে যখন হিন্দুদের নৃশংসভাবে জবাই করা হয় ভারত তখন অলস বসে থাকতে পারে না। পুরোহিতকে হত্যার পর বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশন তাদের কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছে নিহতের পরিবার ও আশ্রমের সহযোগীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। কমিশনের দ্রুত এ পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রানা দাসগুপ্ত। তারা বলেছেন, ভারতকে এর চেয়ে বেশি কিছু করতে হবে।
ওদের একচোখা নীতি
রানা দাসগুপ্ত, বিশেষ করে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন সে ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়ার অবকাশ নাই। ভারতে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই বাংলাদেশের হিন্দুদের ব্যাপারে তারা হস্তক্ষেপ করলে যদি সেটি গর্হিত কাজ না হয় তাহলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহ বাংলাদেশের ইসলাম ও মুসলমান সম্পর্কিত কোনো ব্যাপারে কথা বললে সেটি অপরাধ হবে কেন? বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কোনো মুসলমান নেতা যদি সৌদি আরব, ইরান, তুরস্ক বা পাকিস্তানকে ডেকে আনতে চান তাহলে সেটি যেমন হবে দেশদ্রোহিতা, তেমনি কোনো হিন্দু নেতা যদি ভারতকে ডেকে আনতে চান তাহলে সেটিও হবে দেশদ্রোহিতা।
শুধু কি হিন্দুরাই নিহত হচ্ছেন?
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রানা দাসগুপ্তের ধর্ম পরিচয় যাই থাকুক না কেন, তারা কিন্তু সকলেই বাংলাদেশি। সুতরাং একজন খাঁটি বাংলাদেশি হিসেবে তাদের উচিত বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে যারাই হত্যাকা-ের শিকার হবেন তার সবগুলো হত্যাকা-ের বিচার চাওয়া। পীযূষ বাবুরা এত কড়া বিবৃতি দিলেন, কিন্তু সেখানে মুসলমানদের সম্পর্কে একটি শব্দও নেই কেন? তাদের বিবৃতিতে তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের হত্যাকা-ের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেখানে সেই অধ্যাপকের নামটি পর্যন্ত তারা উল্লেখ করেননি। কেন করেননি? তার নাম ছিল ড. রেজাউল করীম সিদ্দীকি। তিনি ছিলেন একজন মুসলমান, সেজন্য নয় কি? হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলমান এবং খ্রিস্টান-বৌদ্ধরাও যে এই গুপ্তহত্যার শিকার হচ্ছেন, সেটি তারা উল্লেখ করতে মোটেই রাজি নন বলে প্রতীয়মান হয়।
কতজন হিন্দু এবং মুসলমান?
সাম্প্রতিক অতীতে ৪৮ ব্যক্তিকে হত্যা করার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই ৪৮ জনের মধ্যে কতজন হিন্দু, আর কতজন অন্য ধর্মের লোক? গত বছরে গুলশানে যে ইটালিয়ান নাগরিককে হত্যা করা হয় তিনি এবং উত্তরবঙ্গে যে জাপানিকে হত্যা করা হয়, তাদের পরিচয় কী ছিল? তারা তো আর হিন্দু ছিলেন না। ঢাকার হোসেনী দালান রোডের ইমামবাড়ায় বোমা হামলা করে যে ৪-৫ জনকে হত্যা করা হয় তারা তো সব মুসলমান ছিলেন। আবার নিহতদের মধ্যে শিয়া মুসলমান এবং সুন্নি মুসলমানও ছিলেন। এরা কি মানুষ নন? পীযূষ বাবুদের মন এদের জন্য কাঁদে না কেন? কেমন অসাম্প্রদায়িক তারা? বগুড়ার শিবগঞ্জ মসজিদে যাকে হত্যা করা হয় তিনিও তো ছিলেন একজন মুসলমান। পূর্ব রাজাবাজারের মওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে হত্যা করা হয়। অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হকের পুত্র ফয়সল আরেফিন দীপন তো হিন্দু ছিলেন না। খুন হয়েছেন ওয়াশিকুর রহমান। হত্যাকারীরা বলছে, তারা নাকি নাস্তিক ছিলেন। সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু তারা তো হিন্দু ছিলেন না। ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনও তো হিন্দু ছিলেন না।
তখন ভারতকে ডাকা হয়নি কেন?
এখানে অনেকগুলো হত্যাকা-ের কথা উল্লেখ করলাম, যারা কেউ হিন্দু ছিলেন না। তারা ছিলেন মুসলমান। আরো খুন হয়েছেন খ্রিস্টান পাদ্রি। আরো হয়েছেন হিন্দুরা। সকলকে বাদ দিয়ে শুধু হিন্দুদের হত্যাকা-ে তারা এত সোচ্চার কেন? এতই সোচ্চার যে তারা এ ব্যাপারে ভারতকে ডেকে আনতে চান। কেমন প্রগতিবাদী তারা? কেমন অসাম্প্রদায়িক তারা? তারা কি জানেন যে, তারা নিজেদের অজান্তেই এমন সব কথা বলছেন যার ফলে এদেশের অসাম্প্রদায়িক জনগণ বুঝে নিচ্ছেন যে ওরা অসাম্প্রদায়িক নন, ওরা প্রগতিবাদী নন। ওরাই আসলে সাম্প্রদায়িক এবং প্রগতির লেবাস পরে প্রতিক্রিয়াশীল।
ওই ৪৮ জনের তালিকা প্রকাশ করুন
এই বিষয়টি নিয়ে আমরা চর্চা করি না। কারণ সরকার এই বিষয়টি নিয়ে সর্বদা সজাগ রয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। আমরা রানা দাসগুপ্ত এবং পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ করব, আপনারা ওই ৪৮ জনের তালিকা প্রকাশ করুন। আর দেখুন, ওর মধ্যে কতজন মুসলমান, কতজন হিন্দু, কতজন খ্রিস্টান, কতজন বৌদ্ধ এবং কতজন বিদেশি আছেন। তাহলেই তারা বুঝবেন, ভারতকে এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়ে তারা আসলে কত বড় আপত্তিকর কাজ করেছেন।
ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান প্রসঙ্গ
পীযূষ বাবুদের এই বিবৃতির দুই-তিন দিন আগে বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা এবং ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং যা বলেছেন, সেটি পড়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ হতভম্ব হয়ে গেছেন। খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অর্থাৎ হিন্দুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। তার এই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার ১৬টি জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সংখ্যালঘুদের দীর্ঘমেয়াদি ভিসা ও নাগরিকত্ব অনুমোদনের আহ্বান জানানো হয়েছে। ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর সংখ্যালঘু হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেয়ার এই উদ্যোগ ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির নীতিরই প্রতিফলন। ইহুদিদের জন্য ইসরাইল যেমন, অনেকটা তেমনভাবেই বিশ্বের যেকোনো দেশের নির্যাতিত হিন্দুদের জন্য ভারতকে আশ্রয়স্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় বিজেপি।
এসব খবর অত্যন্ত ডিস্টার্বিং। সরকার এসব বিষয় নোটিশে নিয়েছেন বলে জনগন বিশ্বাস করতে চায়। জনগন আরো আশা করে যে, সরকার এই সবগুলি ইস্যু এক পাল্লায় মাপ জোক করবেন। উত্তর বঙ্গের ভাষায়, সরকার এক চোখে তেল আর এক চোখে নূন বেচবেন না।
সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, গত সোমবার রানা দাসগুপ্ত তার বিবৃতির একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং গত মঙ্গলবার কয়েকটি পত্রিকায় সেই ব্যাখ্যা ছাপা হয়েছে। রানা দাসগুপ্ত তার বিবৃতির ব্যাখ্যায় বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নির্যাতনে তিনি ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই’র নিকট উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিকট আহ্বান জানাননি। কিন্তু পিটিআই তাদের সংবাদে অনড় রয়েছে। পিটিআই কর্তৃপক্ষ বিবিসি বাংলাকে বলেছে যে, রানা দাসগুপ্তকে সঠিকভাবেই তারা উদ্ধৃত করেছে। এবং মি. দাসগুপ্ত প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারের প্রতিবাদ করেননি।
একটি আপত্তিকর কথা বলে সেখান থেকে ব্যাক-ট্র্যাক করা আমাদের একশ্রেণীর পলিটিশিয়ান ও বুদ্ধিজীবীর মজ্জাগত স্বভাবে পরিণত হয়েছে। রানা দাসগুপ্তও তাই করতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পিটিআই তাকে উচিৎ শিক্ষা দিয়েছে। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এখনো কোন প্রতিবাদ করেননি। তাই তার বক্তব্যকে সঠিক বলেই ধরে নিতে হবে। এখন সরকারের কাজ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। জনগণ দেখছে, সরকার কী ব্যবস্থা নেয়, নাকি বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।