পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ইরান আফগানিস্তানের হেরাতে গত শরতে একটি নিয়োগ কেন্দ্র খুলেছে। সেখানে মাথায় খাড়া হয়ে থাকা জেল মাখানো চুল আর ডোলসি ও গাবানা শার্ট পরিহিত হাজার হাজার আফগান শিয়া তরুণের ভিড়। তাদের থেকে ধর্মীয় যোদ্ধার বদলে কোনো ফ্যাশন শোতে অংশ নেয়ার জন্য এসেছে বলে ভুল হতে পারে। আসলে তারা হচ্ছে ভাড়াটে যোদ্ধা। টাকার লোভ দেখিয়ে বা খানিকটা জোর করেই সিরিয়াতে লড়াই করার জন্য তাদের নিয়োগ করা হচ্ছে। ২১ বছর বয়স্ক এক আফগান তরুণ ব্যক্তিগত কারণে দেশ ছাড়তে চাইছিল। দেশী ও ইরানিদের সহায়তায় সে পৌঁছে ইরানের এক ক্যাম্পে। তার সহায়তাকারীরা ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবে তাকে নিয়োগের মওকা পেয়ে যায়। প্রায় আড়াই মাস ধরে এক ইরানি প্রায় পতিদিন তাকে বোঝাতে থাকে যে, সিরিয়া শিয়ারা বিপন্ন। তাদের জন্য তার লড়াই করা উচিত। সে যদি তা করে তাহলে সে ভালোভাবে জীবন কাটাতে পারবে। একপর্যায়ে সিরিয়ার যুদ্ধে যাওয়ার জন্য তার ওপর প্রচ- চাপ আসে। বাধ্য হয়ে মৌন সম্মতি জানায় সে।
তাকে বলা হয় : আমরা তোমাকে সিরিয়া পাঠাব। জিহাদ করবে তুমি। যুদ্ধ থেকে ফিরে এলে তোমাকে দেয়া হবে ইরানি পাসপোর্ট, একটি বাড়ি ও অর্থ। আরামে কাটবে তোমার জীবন।
আফগানিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে প্রাচীন ও শিয়া অধ্যুষিত হেরাত শহরে এরকম প্রচুর গল্প শুনতে পাওয়া যায়। এ থেকে বোঝা যায় যে, ইরান সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের শিয়া সরকারের সমর্থনে লড়াই করার জন্য কিভাবে আফগানিস্তানের শিয়াদের মধ্য থেকে ভাড়াটে যোদ্ধা সংগ্রহ করছে। সিরিয়ায় এখন বাশারের পক্ষে লড়ছে লেবাননের হেজবুল্লাহ এবং ইরাক ও পাকিস্তান থেকে সংগ্রহ করা ভাড়াটে শিয়া যোদ্ধারা।
ইরান যে সিরিয়াতে লড়াই করার জন্য আফগানিস্তান থেকে ভাড়াটে শিয়া যোদ্ধা সংগ্রহ করছে তা এখন আর কোনো গোপন বিষয় নয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি গত মার্চে সিরিয়ায় নিহত আফগান শিয়া যোদ্ধাদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি তাদের প্রাণদানের প্রশংসা করে বলেন, আমি আপনাদের জন্য গর্বিত।
সিরিয়ায় শিয়াদের কিছু পবিত্র স্থান রক্ষার জন্য কিছু আফগান সিরিয়ার শিয়া সরকারের পক্ষে লড়াইতে যোগ দিয়েছে। অন্যরা লড়াই করছে টাকার জন্য। তারা মাসে সর্বোচ্চ ৭শ’ ডলার পর্যন্ত বেতন পায়। অথবা তাদের ইরানি নাগরিকত্ব, সন্তানদের স্কুলে অধ্যয়ন এবং যুদ্ধ থেকে বেঁচে ফিরলে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। ইরানের কোনো আফগান উদ্বাস্তু এ সুবিধা পায় না।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে বলা হয়, ইরানে প্রায় ৩০ লাখ আফগান উদ্বাস্তু রয়েছে। তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ বৈধ উদ্বাস্তু। বাকিদের মর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের। বৈধ মর্যাদা না পাওয়া ও তাড়িয়ে দেয়ার ভয় থেকে স্বেচ্ছায় নয়, ভাড়াটে মিলিশিয়া হিসেবে তারা সিরিয়ার যুদ্ধে যেতে বাধ্য হয়।
গত জানুয়ারিতে ভয়েস অব আমেরিকার এক রিপোর্টে বলা হয়, ১০ থেকে ১২ হাজার আফগান সিরিয়ায় ইরানি মিলিশিয়া ও হেজবুল্লাহর সাথে বাশারের পক্ষে লড়াই করছে।
হেরাতের তরুণ জানায়, তাকে কেউ হুমকি দেয়নি। কিন্তু সে নিজের নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানায়। সে বলে, আমি ভেবেছিলাম আমি যদি সিরিয়ার যুদ্ধে না যাই তাহলে তারা আমাকে অপহরণ ও হত্যা করবে। তাই আমি তাদের সামনে সব কথা মেনে নেই। এখন আমি সিরিয়া যেতে ও যুদ্ধে যোগ দিতে প্রস্তুত। কি করব আমি? পালাব কিভাবে?
সে বলে, আমাকে তারা আফগানিস্তান থেকে পালাতে সাহায্য করে এখন ফাঁসিয়ে দিয়েছে। আফগানিস্তানে ফিরে গেলে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
ইরান সিরিয়ায় যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ণ আফগান ভাড়াটে যোদ্ধাদের নিয়ে ফাতেমীয় ব্রিগেড নামে একটি ইউনিট গঠন করেছে। হযরত মুহাম্মদ সা:-এর কন্যা হযরত ফাতেমা রা:-এর নামে এ ব্রিগেডের নামকরণ করা হয়েছে। ব্রিগেডে কয়েক হাজার সৈন্য রয়েছে। শিয়া পবিত্র স্থানগুলোকে রক্ষা তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব বলে বোঝানো হয়েছে। এটাকেই তাদের যুদ্ধে যোগ দেয়ার কারণ বলা হয়।
ইরান কয়েক বছর ধরে এ ব্রিগেড বা তার গঠনের কথা অস্বীকার করে আসছে। সম্প্রতি নিহত আফগানদের আলি খামেনির প্রশংসার খবর প্রকাশের আগে গত বছর থেকে সিরিয়ায় আফগান যোদ্ধাদের খবর ইরানি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে শুরু করে।
কট্টরপন্থী ইরানি দৈনিক কায়হানে প্রকাশিত খবরে সিরিয়ায় পাঠানোর আগে আফগান ভাড়াটে যোদ্ধাদের ইরানের অভ্যন্তরে একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে ২৫ থেকে ৩৫ দিন কাটানোর কথা জানা যায়। জানা যায়, ইরানের উত্তর-পূর্বের পবিত্র স্থান অধ্যুষিত মাশাদ শহরে আফগান শহীদদের কবরের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
সিরীয় বিদ্রোহীদের হাতে আটক আফগান ভাড়াটে যোদ্ধাদের সাক্ষাৎকারে জানা যায়, তারা শুধু কামানের খোরাক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তারা আরবি জানে না। তবে ইরানি সংবাদ মাধ্যমে আফগান ভাড়াটে যোদ্ধাদের দ্বারা কয়েকটি বিজয় লাভের কথা বলা হয়েছে।
মে মাসে ইরানের পার্লামেন্টে ১৯৮০ সাল থেকে ইরানের পক্ষে লড়াইয়ে নিহত বিদেশীদের পরিবারকে ইরানি নাগরিকত্ব দেয়ার আইন পাস হয়েছে। নিহত আফগান ভাড়াটে যোদ্ধাদেরও পরিবারসমূহও এ আইনের সুবিধা পাবে।
ইরান আফগান শিয়া, হাজারাদের খোলাখুলি ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে নিয়োগ করছে। ইরান সরকার তাদের সুবিধা দিচ্ছে। আশ্চর্য বিষয় যে, এ ভাড়াটে যোদ্ধাদের মধ্যে পাকিস্তানি সুন্নিরাও রয়েছে। এক পাকিস্তানি সুন্নি পাঠান ইউসুফ ও তার চাচাতো ভাই হাসান এক ইরানি ঠিকাদারের মাধ্যমে একদল আফগান নির্মাণ শ্রমিকের সাথে নির্মাণকাজ করতে ইরানে যায়। হাসান জানায়, দুই মাস দূরে কাজ করানোর কথা বলে ইউসুফকে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সিরিয়ায় লড়াই করছিল। তাকে লড়াইয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। সে লড়াইয়ে মারা গেছে।
হাসান আরো বলে, অনেক সুন্নি পশতুন নির্মাণকাজে ইরানে আসছে। তাদের কেউ কেউ টাকার জন্য ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবে ইরানিদের দ্বারা নিযুক্ত হয়ে সিরিয়ার লড়াইতে বাশারের পক্ষে যোগ দিচ্ছে।
এক শিয়া আফগান তরুণ জানায়, হেরাত এখন ইরানিদের ভাড়াটে যোদ্ধা নিয়োগ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আফগান সরকার কিছুই বলে না। তারা তরুণদের নিয়োগ করছে ও বেড়ানোর কথা বলে ইরানে নিয়ে গিয়ে সিরিয়ার যুদ্ধে পাঠাচ্ছে। সে বলে, যারা সিরিয়ায় যায় তারা কেউ ফিরে আসে না। সূত্র ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।