Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো রোগীর সন্ধান : বিরল ‘ট্রিম্যান’ রোগে আক্রান্ত পাইকগাছার আবুল হোসেন

প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ছোট ছোট আঁচিল দিয়ে শুরু। এখন তা গাছের শেকড়ের মত বিস্তার লাভ করেছে তার পুরো হাত ও পা জুড়ে। এ অবস্থা নিয়ে অসহ্য শারীরিক এবং মানসিক যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন আবুল হোসেন (২০)। তিনি খুলনার পাইকগাছা থানার শরল গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এ রোগের নাম ‘ট্রিম্যান’। বিরল এ রোগে আক্রান্ত দরিদ্র আবুল এখন ভর্তি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এক প্রকার ভাইরাসের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করা এই রোগ বাংলাদেশে বিরল। এর আগে ২০০৭ সালে ইন্দোনেশিয়াতে এই রকম একটি রোগী পাওয়া যায়। একই বছর রোমানীয়াতেও পাওয়া যায় এ ধরনের রোগী। তবে বাংলাদেশে আবুল হোসেনই প্রথম। গত শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাপসাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন আবুল হোসেন। বার্ণ ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. গোবিন্দ বিশ্বাস বলেন, যে ভাইরাসটি আবুলের হাত-পায়ের এই বিকৃতির জন্য দায়ী সে ভাইরাসটির না ‘ইপিডারমোডাইসপ্লাসিয়া’।
এই ভাইরাসে আক্রান্তের ঘটনা খুবই বিরল। ভাইরাসটি আবার অপর একটি ভাইরাস প্যাপিলোমা ভাইরাসের ভিন্ন রূপ। এটি মানুষের অঙ্গ-প্রতঙ্গকে বিকৃত করে দেয় বলে এই ভাইরাসটিকে বিকৃত ভাইরাস বলা হয়। আবুলের দেহে বাসা বাঁধা এই ভাইরাসটিকে শনাক্ত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বার্ণ ইউনিটের চিকিৎসকরা। ডা. গোবিন্দ বিশ্বাস বলেন, আবুল হোসেনের চিকিসার জন্য রোববার ঢামেকের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি বোর্ড গঠন করা হবে। ওই চিকিৎসক বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী তার চিকিৎসা চালানো হবে। আবুল হোসেনের মা আমেনা বেগম জানান, আবুল হোসেনের বয়স যখন ১৫ বছর তখন তার হাতে ও পায়ে আঁচিলের মত ছোট ছোট গুঁটি ওঠে। সে সময় গ্রাম্য হোমিও প্যাথিক চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি আঁচিল রোগের ওষুধ দেন। দীর্ঘ ৫ বছর সেই চিকিৎসা করে কোন কাজ না হওয়ায় পরে এলাকাবাসীর পরামর্শে তারা কোলকাতায় যান। সেখানেও প্রায় মাসখানেক চিকিৎসা চলিয়ে কোন ফলাফল না পেয়ে দেশে ফিরে আসেন। সবশেষ শুক্রবার খুলনা মেডিকেলে গেলে সেখান থেকে এক ডাক্তার আবুল হোসেনের ছবি তুলে ঢামেক বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা ডা. সামন্ত লাল সেনের কাছে পাঠান। সঙ্গে সঙ্গে সামন্ত লাল আবুল হোসেনকে বার্ন ইউনিটে আসতে বলেন। ডা. সামন্ত লালের পরামর্শেই সে শুক্রবার ঢামেকের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়। আবুল হোসেন জানায়, রাতে যন্ত্রনায় ঘুমাতে পারে না সে। অনবরত ভেতরে কামরায়, জ্বালাপোড়া করে। ব্যথার ইনজেকশন দিলে ব্যথা কিছুটা কমে। পরে আবারও হয়। হাত একাধারে ৫ মিনিটের বেশি উঁচু করে রাখা যায় না এতো ওজন। বর্তমানে সে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালামের অধিনে ‘গ্রিন ইউনিট’ এ চিকিৎসাধীন রয়েছে। আবুল হোসেন বলে, আমি প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাই, মিডিয়ার মাধ্যমে আমার বিষয়ে দেখতে পেরে তারা যেন আমার চিকিৎসার ব্যাপারে সহযোগিতা করেন। ওনাদের সহযোগিতা এবং ডাক্তারদের চেষ্টাই পারে আমায় আগের জীবনে ফিরিয়ে দিতে। হাসপাতালে আবুল হোসেনের সাথে রয়েছেন মা আমেনা বেগম, স্ত্রী হালিমা ও মেয়ে তাহেরা খাতুন (৩)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো রোগীর সন্ধান : বিরল ‘ট্রিম্যান’ রোগে আক্রান্ত পাইকগাছার আবুল হোসেন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ