Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফতুল্লায় নব্য জেমএমবি’র বোমা তৈরির ল্যাব আবিষ্কার

দম্পতিসহ গ্রেফতার ৩

স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটসহ বিভিন্ন ইউনিট। বাড়িটি থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম, আইডি, বিস্ফোরক তৈরির উপাদান, খেলনা পিস্তল, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের উত্তরপাশ দিয়ে ফতুল্লার তক্কার মাঠ চৌরাস্তা পর্যন্ত চলে যাওয়া রাস্তাটি সোমবার সকাল থেকেই সরগরম হয়ে ওঠে। রাস্তার শুরু থেকেই ছিল পুলিশের কড়া পাহারা। তক্কার মাঠ চৌরাস্তা থেকে দক্ষিণ দিকে চলে যাওয়ার রাস্তার শুরুতেই পূর্বপাশে সেমিপাকা একটি বাড়ি। বাড়িটি ঘিরে ছিল কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যদের তৎপরতা। তাদের সহায়তা করছিল ঢাকা থেকে আসা সিআইডির ক্রাইম সিনের একটি টিম। ছিল বোমা নিষ্ক্রিয়কারি দল। আর সবশেষ নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। যে বাড়িটি ঘিরে এত আয়োজন সেই বাড়ির মালিকের ছেলেরা নব্য জেএমবি’র সদস্য। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের প্রথম ভাগেই তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারদের মধ্যে নব্য জেএমবি নেতা ফরিদ উদ্দিন রুমি (২৭), তার স্ত্রী জান্নাতুল ফোয়ারা অনু (২৩) রয়েছেন। তবে অভিযানের আগেই রুমির ছোট ভাই জামাল উদ্দিন রফিক (২৫) পালিয়ে যান। এর আগে রোববার রাতে ঢাকা থেকে মিজান নামে নব্য জেএমবির এক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যে সোমবার ভোররাতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিসি তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জে নব্য জেএমবির অপর নেতা রুমির ফতুল্লার তক্কারমাঠ এলাকার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার এবং তার স্ত্রী অনুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।
রুমি ও রফিকের বাবা জয়নাল আবেদীন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম। গত শুক্রবার তিনি স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি রাজবাড়িতে যান। দুই ছেলে দুই মেয়ে সন্তানের জনক জয়নাল আবেদীন। তার এক মেয়ে পেশায় চিকিৎসক। পুরো পরিবারকে মেধাবী ও ধার্মিক বলে স্থানীয়রা জানেন এবং চিনেন। ফতুল্লায় আবিষ্কার করা নব্য জেএমবি আস্তানা থেকে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয় দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
গ্রেফতার রুমি ঢাকার আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই মেকানিক্যাল বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। ছোট ভাই রফিক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অনার্সের শিক্ষার্থী। তবে সে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। গত ৬-৭ মাস ধরে হঠাৎ করেই তার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করে স্থানীয়রা। রুমির স্ত্রী অনু নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। তার বাবা জাকির হোসেন অগ্রণী ব্যাংক কর্মকর্তা।
নারায়ণগঞ্জে নব্য জেএমবির আস্তানা থেকে ৩টি শক্তিশালী তাজা বোমা, দু’টি খেলনা বন্দুক, বিপুল পরিমান বিস্ফোরক ও কেমিক্যাল, বিস্ফোরক বিহীন সুইসাইডাল ভেষ্টসহ বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়। সোমবার ভোররাতে অভিযান শুরু হলেও দুপুর ১২টায় বোমা নিষ্ক্রিয়করণ কাজ শুরু করে বোমা নিষ্ক্রিয়কারি টিম। এ কাজে তারা ক্যামেরাবাহি রিমোট কন্ট্রোল রোবট ব্যবহার করেন। দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে প্রথম বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এরপর দুপুর ১টা ১০ মিনিটে, ১টা ২৪ মিনিট এবং সর্বশেষ দুপুর ২টা ১০ মিনিটে সর্বশেষ বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সর্বশেষ বোমার বিস্ফোরনে বাড়িটির ভেতরে আগুন ধরে যায়। ওই সময় আগে থেকে ঘটনাস্থলে প্রস্তুত থাকা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
রুমি ও রফিকদের যে বাড়ি থেকে বিপুল পরিমান বিস্ফোরক দ্রব্য এবং চারটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয় সেগুলো পুলিশের ওপর হামলার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল বলে দাবি কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলামের। গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। ওই সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, ডিএমপি’র উপ কমিশনার আসাদুজ্জামান।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় ইতিপূর্বে পুলিশের ওপর যে ৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছিল ওইসব ঘটনায় উদ্ধার করা আলামতের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে উদ্ধার করা বোমার সাদৃশ্য রয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার কারণ সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, জেএমবি’র বিস্তাররোধে পুলিশ সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করেছিল তাই তারা পুলিশকে শত্রু মনে করে। পুলিশের ওপর হামলা করে তারা পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া এবং আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছিল। এটি জেএমবির একটি নতুন সেল ছিল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ৬-৭ মাস আগে এখানে এ সেল গড়ে তোলা হয়। যে বাড়ি থেকে বোমাগুলো উদ্ধার করা হয় সেটি মূলত: রুমির বাবা জয়নাল আবেদীন ভাড়া দিতেন। কিছুদিন আগে ভাড়াটিয়া তুলে দিয়ে সেখানে গরুর খামার করেন। গত ৬-৭ মাস যাবৎ গরুর খামার বন্ধ ছিল।
জয়নাল আবেদীনের দুই ছেলে নব্য জেএমবি’র সদস্য এবং তাদের দু’টি বাড়ির একটি বোমা তৈরির ল্যাবরেটরি হিসেবে ব্যবহৃত হতো এ তথ্য জানার পর এলাকার মানুষ হতবাক হয়ে পড়ে। প্রায় ৩০ বছর যাবৎ ওই এলাকায় বসবাস করে আসছিল পরিবারটি। যে বাড়ি থেকে বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে ওই বাড়ির অদূরে থাকা অপর একটি দোতলা বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করেন জয়নাল আবেদীন। তাকে ও তার ছেলেমেয়েদের ভালভাবে চেনেন এমন কয়েকজন এলাকাবাসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, জয়নাল আবেদীনের ৪ সন্তানের সবাই খুবই মেধাবী ও ধার্মিক। রুমি ও রফিক এলাকায় মাথা নিচু করে চলাফেরা করতো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জেমএমবি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ