পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সংকট সমাধানে আলেম ওলামাদের সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে -আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন
স্টাফ রিপোর্টার : শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, শিক্ষার আধুনিকায়ন, মানসম্মত শিক্ষা প্রদান এবং তরুণ প্রজন্মকে ন্যায়-নিষ্ঠাবান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা সকলের সাথে কথা বলেই শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি। শিক্ষানীতিতে ধর্মবিরোধী কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি কোন ভুল থাকে আমাকে ধরিয়ে দিন আমরা তা সংশোধন করবো। দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক ও বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, সমাজের ভেতরে নিচের স্তরে দ্রুত অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা না গেলে নেতৃত্ব অন্যদের হাতে চলে যাবে। এই অসন্তোষ ও সংকট সমাধানে আলেম ওলামাদের সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে। তা না হলে মডারেট ও শান্তিপূর্ণ সমাজ ধরে রাখা সম্ভব হবে না। তিনি বর্তমান সরকার ও সরকারের মন্ত্রীদের মাদরাসা শিক্ষা ও শিক্ষকদের সাথে গভীরভাবে সম্পর্ক রাখার আহ্বান জানান।
গতকাল (সোমবার) রাজধানীর মহাখালীস্থ গাউসুল আযম কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক ইফতার ও দোয়া মাহফিলে তারা এসব কথা বলেন। মাদরাসা শিক্ষা আধুনিকায়ন শীর্ষক সেমিনার এবং ইফতার ও দোয়া মাহফিলে আয়োজন করে মাদরাসা শিক্ষকদের সর্ববৃহৎ ও একমাত্র অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। অনুষ্ঠানে সংগঠনটির সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যক্ষ শাব্বির আহমদ মোমতাজীর পরিচালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব বজলুল হক হারুন এমপি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ হুমায়ুন খালিদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব এ এস মাহমুদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হেলাল উদ্দিন, অশোক কুমার বিশ্বাস, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আহসান উল্লাহ, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম ছায়েফউল্লাহ। ইফতার মাহফিলে দোয়া পরিচালনা করেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সিনিয়র সহ-সভাপতি কবি মাওলানা রুহুল আমিন খান।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত, ন্যায়-নিষ্ঠাবান, করে গড়ে তোলার জন্য আমরা কাজ করছি। এজন্য সরকার গঠনের পরপরই প্রথমেই সবার সাথে আলোচনা করে সবার মতামত নিয়ে আমরা শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি। এখন হঠাৎ করে এই শিক্ষানীতিকে ধর্মবিরোধী বলা হচ্ছে। অথচ গত ৭ বছর এটা নিয়ে কোন দ্বিমত হয়নি। তিনি বলেন, এটা কোন দলীয় নীতি না, এটা জাতীয় শিক্ষা নীতি। শিক্ষানীতিতে যদি কোন ধরনের ভুল থাকে আপনারা আমাকে ধরিয়ে দিন আমরা সংশোধন করবো।
মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় মাদরাসা শিক্ষার অনেক ধরনের বৈষম্য ছিল। কিন্তু আমরা মাদরাসা শিক্ষা, শিক্ষকদের বেতন, মান ও মর্যাদার যে পার্থক্য ছিল তা দূর করেছি। স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন এখন একই। এখানে কোন বৈষম্য নেই। শিক্ষার্থীরাও এখন একদিকে যেমন ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, অন্যদিকে আধুনিক শিক্ষা তথা, বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান ও কম্পিউটারসহ সবধরনের শিক্ষা গ্রহণ করছে। এরফলে মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন ভাল আলেম হিসেবে গড়ে উঠছে অন্যদিকে দেশ পরিচালনার জন্য বড় বড় জায়গাগুলোতেও যাচ্ছে। বিসিএসসহ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষাগুলোতে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, পিএসসি’র পরীক্ষাগুলোতে এখন মাদরাসা শিক্ষার্থীরা অন্যদেরকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা শিক্ষারমান একই করার ফলে।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, এদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান। এখানে ইসলামী তাহজীব তমুদ্দুন ঠিক রেখেই শিক্ষা-সংস্কৃতির আইন প্রণয়ন করতে হবে। কোনভাবেই হিন্দুয়ানী শিক্ষা-সংস্কৃতি সবার উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না। সংখ্যালঘুরা তাদের অধিকার যথাযথভাবে পাবে। কিন্তু কুরআন সুন্নাহর বাইরে শিক্ষা-সংস্কৃতি জমিয়াত তথা এদেশের মুসলমানরা কখনই মেনে নেবে না।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন যত প্রয়োজন সব হবে। মাদরাসা শিক্ষা দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল, ওই শিক্ষা তাদের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম ছিল না, মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য ছিল। এখন একীভূত না হলেও শিক্ষার মান এবং শিক্ষকদের বেতন সমান করা হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের এখানে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর প্রতিষ্ঠান বাড়ানো যাবে না। এখন যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে তার মান বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানের অভাব নাই, অভাব রয়েছে কোয়ালিটি এডুকেশনের (মানসম্মত শিক্ষার)। তিনি বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে ভর্তি হতে লাইন দিয়েও সম্ভব হয় না, আবার অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ডাকা হয় কিন্তু কেউ ভর্তি হচ্ছে না। এই বৈষম্য দূর করতে হবে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে হবে। যেনো এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। অষ্টম শ্রেণির বাস্তবায়ন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, এবছর থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হয়েছে। এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তবে যেখানে যেভাবে চলছে সেখানে সেভাবেই শিক্ষাদান চলবে।
আলহাজ্ব বজলুল হক হারুন এমপি বলেন, মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর হওয়াসহ আরও অনেক কিছু না চাইতেই আদায় হয়েছে।
এসময় ইফতার ও দোয়া মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের যুগ্ম-মহাসচিব ড. এ কে এম মাহবুবুর রহমান, অধ্যক্ষ ড. সৈয়দ শরাফত আলী, অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আলমাদানী, মাওলানা খলীলুর রহমান নেছারাবাদী, অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুর রাজ্জাক, অধ্যক্ষ মাওলানা হোসাইন আহমদ, অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম আলমাদানী, অধ্যক্ষ মাওলানা নুরুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মাওলানা নূর বখত, অধ্যক্ষ মাওলানা কুতুবুল আলম, উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোবাশ্বেরুল ইসলাম নাঈম, অধ্যক্ষ ড. মাওলানা ইদ্রিস খান, মাওলানা ফারুক আহমাদ, ফুরফুরার পীর সাহেব মতিউল্লাহ সিদ্দিকী আল কেরাইশীসহ কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জেলা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দেশের পীর মাশায়েখ ও বিশিষ্ট আলেম ওলামাগণ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।