Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাজমুল হুদার রঙ বদল

প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রঙ বদলের বহুল আলোচিত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। জাতীয়তাবাদ তথা শহীদ জিয়ার সাফারি খুলে ফেলে বঙ্গবন্ধুর মুজিব কোট গায়ে চড়ানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেন। ’৯০-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন সময় নানা বিতর্কের জন্ম দেয়া, বেহুদা কথা বলে মন্ত্রীত্ব হারানো, উপজেলা পরিষদ বাতিল করা, টোকেন মানিতে স্ত্রীকে ৫০০ কোটি টাকার রেলের সম্পদ দেয়াসহ অনেক অপকর্মের হোতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা অবশেষে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ভবিষ্যতে কিছু পাওয়া নিশ্চিত করেন। আবোল-তাবোল কথা বলে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হয়ে আবার নেত্রীর (বেগম খালেদা জিয়া) কাছে মাফ চেয়ে বিএনপিতে ফিরে আসেন। অতঃপর আবার সেই অপকীর্তি! যথারীতি বহিষ্কার। দল থেকে বহিষ্কার হয়ে নিজের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্ট (বিএনএফ) গঠন করেন। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে দলের মধ্যে বিরোধ বাধলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন অপর নেতা আবুল কালাম আজাদ। এই আবুল কালাম আজাদ নির্বাচন কমিশনে নিজের নামে দলের নিবন্ধন নিয়ে এখন গুলশান-বনানী আসনের এমপি। একটি স্কুল থেকে চিকিৎসার নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ নেয়ায় তার বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করছে। বিএনএফ থেকে বিতাড়িত হয়ে নাজমুল হুদা গঠন করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি)। অতঃপর বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ)। এসবে তেমন কাজ না হওয়ায় তিনি তৃণমূল বিএনপি নামের দল গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। এতে তিনি সফল হন।
‘তৃণমূল বিএনপি’ নেতা নাজমুল হুদা কিছুদিন আগে ওয়েস্টিন হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, বিএনপি এখন সরকারে কিংবা সংসদে নেই। আর হরতাল- অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচিতে ব্যর্থ। বিএনপিকে অস্তিত্বহীন করতে আওয়ামী লীগ আগ্রাসী ভূমিকায় রয়েছে। মাঠপর্যায়ে বিএনপির ‘ত্রাহি অবস্থা’। তিনি জানান, ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তিনি দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন।
নাজমুল হুদা ‘কথাবার্তার’ কারণে বিভিন্ন সময় আলোচিত হন। তিনিই প্রথম বলেছিলেন, তারেক রহমান শুধু আমাদের জাতীয় নেতাই নয়; তিনি আন্তর্জাতিক নেতা। ’৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এই নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটি উপজেলা পরিষদ বিলুপ্তির সুপারিশ করে এবং উপজেলা পরিষদ বিলুপ্তি করা হয়। সে সময় উপজেলাকে উপজ্বালা হিসেবে অভিহিত করে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। ১৯৯৪ সালে ইসরাইলের বেবরন মসজিদের ইহুদিদের হামলার প্রতিবাদে বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে প্রতিবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করে। ক্ষমতাসীন বিএনপি সে প্রস্তাবের বিরোধিতা না করলেও ব্যারিস্টার নামজুল হুদা সংসদে বিবৃতি দিয়ে আওয়ামী লীগকে ‘হঠাৎ মুসলমান’ হিসেবে অভিহিত করলে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। মন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি-জামায়াত ওয়াক আউট করে। অতঃপর তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আন্দোলন করে এবং একসঙ্গে পদত্যাগ করে। অতঃপর ১৯৯৪ সালে হঠাৎ ‘নির্বাচনী ফর্মুলা’ দিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেন ক্ষমতাসীন বিএনপিকে। ওই ফর্মুলার জন্য মন্ত্রিসভা থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর যোগাযোগমন্ত্রী হন। এ সময় স্ত্রীর মালিকানাধীন মানবাধিকার সংস্থার নামমাত্র মূল্যের ৫০০ কোটি (ফুলবাড়িয়ার রেলের জমি) টাকার সম্পত্তি দেন। পরবর্তীতে অবশ্য সেটা ভোগ করতে পারেননি। নানাভাবে বিএনপিতে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অতঃপর বিএনপিকে খ-বিখ- করার এজেন্সি নেন। কয়েকটি মিডিয়া তার বিভিন্ন বক্তব্য যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে। কিন্তু বিএনপির নেতারা দলে নিষ্ক্রিয় হলেও বেগম জিয়াকে ছেড়ে পৃথক দল গঠনের ব্যাপারে আগ্রহ না দেখায় তিনি ব্যর্থ হয়ে জার্সি বদলের প্রক্রিয়া শুরু করেন। তিনি আওয়ামী লীগে যাওয়ার প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে ১৪ দলীয় জোটের প্রতি সমর্থন জানান। জানা যায়, গত কয়েক মাস থেকে নাজমুল হুদা আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দুই দফায় বৈঠক করেন। গতকাল নাজমুল হুদা জানান, ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের চলমান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে তার দল তৃণমূল বিএনপি। ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের গড়া বিএনপির প্রথম স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তখন থেকেই জিয়ার পছন্দের পোশাক সাফারি পরতে অভ্যস্ত হন। বিএনপি থেকে বহিষ্কার হয়ে নানা নামে দল গঠন করে, নানা ঘাটের পানি খেয়ে এখন আওয়ামী লীগের নৌকায় ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নৌকায় ওঠার অর্থই হলো হাতাকাটা মুজিব কোট পরা। সাফারি সাদা, মাটিয়া, ঘিয়া নানা রঙের হয়। কিন্তু মুজিব কোটের রঙ কালো। অতএব রঙ বদল!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নাজমুল হুদার রঙ বদল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ