Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পুলিশের মুখে কুলুপ তদন্তে গতি নেই

প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কর্মকর্তারা। সিএমপির কমিশনার থেকে মামলা তদন্ত কর্মকর্তা সবার মুখে এখন কুলুপ। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হকের চট্টগ্রাম সফরের পর থেকে আলোচিত এই হত্যা মামলার তদন্ত বিষয়ে মিডিয়াকে কোনো তথ্য দিচ্ছেন না কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন) দেবদাস ভট্টাচার্যের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান ওই বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) মো. কামরুজ্জামানও এ বিষয়ে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে গিয়ে নগরীর জিইসি মোড়ের অদূরে ও আর নিজাম রোডে খুন হন মিতু। খুনিরা তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে লাশ রাস্তায় ফেলে যায়। ঘটনার পর থেকে সিএমপির কমিশনার মো. ইকবাল বাহারসহ পুলিশের কর্মকর্তারা হত্যাকা-ের তদন্ত ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত ব্রিফিং করেছেন। তবে হঠাৎ করে পুলিশ মুখে তালা দিয়েছে। মিডিয়াকে অন্ধকারে রাখার কৌশল নিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, মামলার তদন্ত নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের অতিকথন এবং সমন্বয়হীনতায় ক্ষুব্ধ পুলিশের হাইকমান্ড। হত্যাকা-ের কয়েক মিনিটের মধ্যে খুনের জন্য জঙ্গিদের দায়ী করা। আবার একদিন পর সন্দেহের তালিকায় জঙ্গিদের সাথে জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে আসা, হাটহাজারীর মুসাবিয়া দরবারের খাদেমকে সাবেক শিবির কর্মী হিসাবে গ্রেফতার দেখানোসহ বেশকিছু ঘটনায় পুলিশের হাইকমান্ড বিব্রত হয়। তাছাড়া দরবারের ওই খাদেমকে ত্রিশ লাখ টাকার বিনিময়ে এই মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগও আমলে নেয় পুলিশের উপরের মহল।
ঘটনার পর পূর্বনির্ধারিত সফরে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বাসায় আসেন। পরদিন তিনি ঢাকায় সাংবাদিকদের জানান, মিতু হত্যাকা-ে জড়িত চার জনকে পুলিশ ধরে ফেলেছে। তবে ওইদিন রাতেই তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। হত্যাকা-ের একদিন পর ৬ জুন দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করে পুলিশ কমিশনার মোঃ ইকবাল বাহার বলেন, আমরা অনেকদূর এগিয়ে গেছি, রাতের মধ্যেই ভালো কোনো খবর দিতে পারব আশা করি। কিন্তু পুলিশ কমিশনার এখনও সেই ভালো খবর দিতে পারেনি।
জানা গেছে, এসব ঘটনায় সিএমপির উপর ক্ষুব্ধ হন আইজিপি। রোববার চট্টগ্রাম সফরকালে তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের এসব বিষয়ে ভর্ৎসনা করেন। একই সাথে মিডিয়াকে তথ্য দেয়া বা কোনো বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়ারও নির্দেশ দেন আইজি। জানা গেছে, আইজিপির ওই নির্দেশনার পর পুলিশ এ বিষয়ে আপাতত মিডিয়ার মুখোমুখি হওয়া থেকে বিরত থাকবেন সিএমপির কর্মকর্তারা। তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলে শুধু তাই জানানো হবে।
এদিকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী হত্যাকা-ের ৯ দিন পার হলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি। হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটন করা যায়নি, চিহ্নিত করা যায়নি খুনিচক্রের সদস্যদেরও। সন্দেহভাজন হিসাবে গ্রেফতার মাজারের খাদেম আবু নসর গুন্নু ও যুবক শাহ জামাল রবিনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আদালত তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত রোববার ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। মামলার আইওসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গঠিত কমিটির সদস্যরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। মিতু হত্যা মামলার তদন্ত ও খুনিচক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে আইজিপির নির্দেশে গঠিত কমিটিগুলো তাদের কাজ শুরু করেছে। গতকাল কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে সভা করে তাদের করণীয় নির্ধারণ করেছেন বলে জানা গেছে।
তদন্ত তদারক কর্মকর্তা বদল
৮ দিনের মাথায় আইও বদলের পর এবার মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলা তদন্ত তদারককারী কর্মকর্তাকেও বদল করা হলো। নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-কমিশনার মোকতার আহমেদকে এ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। সিএমপির নগর বিশেষ শাখার (সিটিএসবি) উপ-কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়াকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের একই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে চাঞ্চল্যকর মামলাটি মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নগর গোয়েন্দা পুলিশের মোকতার আহমেদের দায়িত্বও কমিয়ে দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার মো. ইকবাল বাহার। ইকবাল বাহার সাংবাদিকদের বলেন, মোকতার আহমেদ আগে ডিবিতে চারটি জোনের দায়িত্ব একাই পালন করতেন। তাকে দুটি জোনের দায়িত্বে পুনর্বহাল করে আরেকজন উপ-কমিশনারকে দুটি জোনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পদোন্নতি পেয়ে গত মার্চে বদলি হন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর ও দক্ষিণ) কুসুম দেওয়ান। তখন থেকেই পশ্চিম ও বন্দর জোনের পাশাপাশি উত্তর-দক্ষিণেরও দায়িত্ব পান মোকতার আহমেদ। গতকাল সিএমপি কমিশনার এক আদেশে মোকতার আহমেদকে বন্দর ও পশ্চিম জোনে পুনর্বহাল করে উত্তর ও দক্ষিণ জোনের দায়িত্ব দিয়েছেন মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়াকে। হত্যাকা-স্থল ডিবির সীমানা অনুযায়ী উত্তর জোন হওয়ায় মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম মনিটরিং করবেন উপ-কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া। জানা যায়, মামলার তদন্তের শুরু থেকে মোকতার আহমদ এ ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন। এ মামলা ছাড়া ডিবির আর কোন কাজ নেই এমন বেফাস মন্তব্যও করেন তিনি। এ নিয়ে নগর পুলিশে তোলপাড় শুরু হয়। তাছাড়া ডিবির কয়েকজন কর্মকর্তা তার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে নালিশও করেন। আর এ প্রেক্ষাপটে তার দায়িত্ব কমিয়ে দেয়া হলো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশের মুখে কুলুপ তদন্তে গতি নেই
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ