ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
এবিসিদ্দিক : ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনার ব্যাপারে দাম নিয়ে কিছুদিন আগে সমঝোতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে ত্রিপুরার বিদ্যুৎমন্ত্রীর এক বৈঠকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ঠিক হয়েছে আট সেন্ট, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ছয় টাকা এবং ভারতীয় মুদ্রায় সাড়ে ৫ রুপি। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ এই বিদ্যুৎ আসতে পারে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বিনা মাশুলে ট্রানজিট রুট ব্যবহার করে ত্রিপুরার পালাটানায় ৭৭৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি গ্যাসবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে ভারত। বাংলাদেশের সহযোগিতার জন্য ওই কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেদেশের সরকার। ১৬ ডিসেম্বর এ বিদ্যুৎ আমদানি শুরুর কথা থাকলেও দর জটিলতায় তা আটকে যায়।
সর্বশেষ গত ২৭ ও ২৮ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে দুদেশের বিদ্যুৎ সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সে সময় জানানো হয়েছিল, ত্রিপুরার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ভারত প্রথমে ৯ সেন্ট (৭ টাকা ১৩ পয়সা) চেয়েছিল। পরে তারা আট সেন্টে রাজি হয়। বাংলাদেশ প্রতি ইউনিটের জন্য ৬ সেন্ট (৪ টাকা ৭৫ পয়সা) দিতে চেয়েছিল। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের প্রস্তাবে রাজি হয়নি। বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনছে। আগের বিদ্যুতের দাম নতুন ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চেয়ে কম পড়ছে।
এদিকে বাংলাদেশে সরকারিভাবে উৎপদিত বিদ্যুতের দাম অনেক কম। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের দাম পড়ছে প্রতি ইউনিট প্রায় ২ টাকা ২০ পয়সা। আর বেসরকারিভাবে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে তারও দাম প্রতি ইউনিট ৬ টাকার নিচে। জ্বালানি তেলের দাম কমছে, সেই সাথে কমছে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাশ্রয়ী জ্বালানি গ্যাস ও কয়লা। এগুলোর তুলনায় ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলে খরচ কয়েক গুণ বেশি। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী হলো পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন। কিন্তু এ উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে গত কয়েক বছরে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেও নেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। ফলে ব্যয়বহুল ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলভিত্তিক রেন্টাল-কুইক রেন্টালের ওপরই এখনো নির্ভর করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিটপ্রতি ব্যয় মাত্র ১৩ পয়সা। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিটপ্রতি ব্যয় গড়ে ২ টাকা ৫৯ পয়সা। তবে গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসছে বিধায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে অন্যান্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয় ২০০৯ সালে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এ খাতে ব্যবহারকৃত জ্বালানির ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ ছিল তেল। গত অর্থবছর এটি বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এর বিপরীতে কমছে গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর কয়েকটি দেশ প্রায় শতভাগ পানিবিদ্যুতের ওপর নির্ভশীল। বাংলাদেশেও পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দ্রুত উৎপাদনে আনা দরকার। তা না হলে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের দামের চাপ জনগণের ওপর বাড়তে থাকবে। গত আগস্টে কাপ্তাই কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ১৪ পয়সা, সেপ্টেম্বরে ১২ ও অক্টোবরে ১৩ পয়সা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কেন্দ্রের নির্গমনযোগ্য পানির পূর্ণ ব্যবহার করা গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো ও উৎপাদন খরচ আরো কমানো সম্ভব। বর্তমানে কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঁচটি ইউনিট চালু আছে। আরো দুটি ইউনিট বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সবচেয়ে কম ব্যয়ের এই কেন্দ্রটির উৎপাদন বাড়াতে উদাসীন বিদ্যুৎ বিভাগ। পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বাঁধে পানি পুনঃসঞ্চালনের মাধ্যমে সারা বছর সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। একই অবস্থা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর। সরকারি বা বেসরকারি কোনো ক্ষেত্রেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। সরকারি খাতের বড়পুকুরিয়া ২৭৫ মেগাওয়াট (তৃতীয় ইউনিট) প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৩ সালের ৪ জুলাই চুক্তি সই করে পিডিবি। প্রায় আড়াই বছর হতে চললেও প্রকল্পটির অগ্রগতি মাত্র ৫ শতাংশ। পিডিবির তথ্যমতে, প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে খরচ হতো ২ টাকা ৫৫ পয়সা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ ব্যয় দাঁড়ায় ৬ টাকা ৭০ পয়সা। অর্থাৎ ওই পাঁচ বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১৬৩ শতাংশ। বর্তমানে তা আরো বেড়ে গেছে। এতে একদিকে বেড়েছে সরকারের ভর্তুকি, অন্যদিকে বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। আর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ পিছিয়ে যাওয়ায় ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। রেন্টালের চুক্তি নবায়ন না করে কম খরচে সরকারি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অজানা কারণে সরকার এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে না। সরকারি কেন্দ্রের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল থেকে। এরই মধ্যে গ্যাসভিত্তিক ১৩টি এবং ১১টি তেলভিত্তিক রেন্টালের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বেসরকারি গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ব্যয় হয় প্রায় ৬ টাকা। অথচ সরকারি গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রে ব্যয় হয় ২ টাকারও কম।
লেখক : সাংবাদিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।