Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিউইয়র্কে প্রতিবাদ সভায় বক্তারা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নিউইয়র্ক থেকে এনা : গত ১২ জুন ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো গে বারে সৃশংস সন্ত্রাসী হামলায় ৫০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু এবং ৫৩ জন মারাত্মাকভাবে আহত হবার প্রতিবাদে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় কাউন্সিলম্যান ড্যানিয়েল ড্রামের আয়োজনে গত রোববার বিকেলে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকল ধর্ম-বর্ণ এবং বাংলাদেশী আমেরিকানসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের অংশগ্রহণে এই প্রতিবাদ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলম্যান ড্যানিয়েল ড্রামের পরিচালনায় এই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক সিটির কাউন্সিলের স্পিকার মিলিসিয়া মার্ক ভিভিটোর, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের মেজরিটি লিডার জেমি ভ্যান বার্নার, নিউইয়র্ক সিটির কম্পোট্রলার স্কট স্পিংগার, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জেইমস সেন্ডার্স, সিনেটর হোজে প্যারাল্টা, স্টেট সিনেটর টবিম্যান ইউস্কি, অ্যাসেম্বলিম্যান মাইকেল ডেকার, নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক এডভোকেট প্যাট্রিশিয়া জেমস, মুসলিম কম্যুনিটি লিডার আলী নাজলি, মোহাম্মদ আমিন, সখীর প্রেসিডেন্ট আগা সালেহ, মূলধারার রাজনীতিবিদ বাংলাদেশী মঞ্জুর চৌধুরী, ল্যাসবিয়ান নেত্রী লিনা, বাংলাদেশী কম্যুনিটি লিডার এটর্নী মঈন চৌধুরী, কাজী আজিজুল হক খোকন প্রমুখ।
সভায় বক্তারা অরল্যান্ডো গে বারে নৃশংস হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এই হামলা মানব সভ্যতার ইতিহাসে এবং আমেরিকার ইতিহাসে একটি জঘণ্য হামলা। এই হামলায় ৫০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং ৫৩ জন মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখী। তারা বলেন, এই হামলার সাথে কোন ধর্মীয় গোষ্ঠি জড়িত নয়, একক ব্যক্তিই এই হামলার জন্য দায়ী। কোন ধর্মই মানুষ হত্যার কথা বলেনি। যারা নিরাপরাদ মানুষকে হত্যা করে তাদের কোন ধর্ম নেই, বর্ণ নেই, দেশ নেই। তাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় তারা সন্ত্রাসী। তারা বলেন, এই সন্ত্রাসী এবং বর্বরোচিত হামলা মুসলিম, খ্রিস্টান, জুইসসহ সকল ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রতিহত করতে হবে। এইভাবে একের পর এক হামলা চলতে দেয়া যেতে পারে না। তারা আমেরিকায় অবাধে অস্ত্র বিক্রি আইনের সমালোচনা করে বলেন, আর কত প্রাণ গেলে অবাধে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ হবে। তারা অবিলম্বে অবাধে অস্ত্র বিক্রি আইন করে বন্ধের আহ্বান জানান।
সাবেক স্ত্রীর বর্ণনা
ফ্লোরিডায় সমকামীদের নৈশক্লাবে গুলি চালিয়ে অর্ধশতাধিক মানুষকে হত্যার জন্য ২৯ বছর বয়সী যে যুবককে দায়ী করা হচ্ছে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল বলে মনে করেন তার সাবেক স্ত্রী। হামলাকারী ওমর মতিনকে অস্থিরমতি এক রগচটা ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন সাবেক স্ত্রী সিতোরা। ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম মাইস্পেসে ওমর মতিনের সঙ্গে সিতোরা ইউসুফির পরিচয় ২০০৮ সালে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিয়ে করেন তারা। কিন্তু সেই সংসার টেকে মাত্র চার মাস।
সিতোরা ইউসুফি ওয়াশিংটন পোস্টকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিয়ের পর ফোর্ট পিয়ার্সে মতিনের পরিবারের মালিকানাধীন দুই বেডের এক ফ্ল্যাটে ওঠেন তারা। “প্রথমদিকে সব বেশ স্বাভাবিকই ছিল, কিন্তু এরপর সে ধীরে ধীরে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠল।”
ইউসুফি বলছেন, সেসব দিনে মতিনের মধ্যে দ্বৈত মানসিকতার তীব্র লক্ষণ তিনি দেখেছেন। হাসিখুশি, আনন্দে মেতে থাকার মুহূর্তেই হঠাৎ মতিনের মধ্যে তৈরি হত রাগ, তিনি হয়ে উঠতেন মারমুখো। বাবা-মায়ের সঙ্গেও প্রায়ই ঝগড়া হত তার। “সে আমাকে মারতো। কেন লন্ড্রি শেষ হয়নি, এরকম ছুতো ধরেও আমার উপর চড়াও হত।” মতিনের এই নির্যাতনের খবর জানার পর ইউসুফিকে ফোর্ট পিয়ার্স থেকে নিয়ে যান তার বাবা-মা। “তারা আক্ষরিক অর্থে আমার জীবন বাঁচিয়েছিলেন,” বলেন ২৭ বছর বয়সী এই তরুণী।
সিতোরা জানান, ছাড়াছড়ি হওয়ার পর মতিন বেশ কয়েকবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তিনি সুযোগ দেননি। সে সময় মতিন তার বাড়ির কাছাকাছি একটি কিশোর সংশোধনাগারে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। তখন তাকে কখনোই ‘কট্টর’ মুসলিম দর্শনে বিশ্বাসী বলে মনে হয়নি ইউসুফির কাছে। “মতিন তেমন ধার্মিক ছিল না। প্রায়ই জিম করতে যেত।”
ফ্লোরিডার পালস নৈশক্লাবে গুলি করে ৫০ জনকে হত্যায় সন্দেহভাজন ওমর মতিনের বয়স ছিল ২৯ বছর। পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে রোববার সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহ ওই হামলার অবসান ঘটে।
নিউইয়র্কে জন্ম নেয়া মতিনের বাবা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন আফগানিস্তান থেকে। পরে তারা ফ্লোরিডার ফোর্ট পিয়ার্সে চলে যান। এই আমেরিকান মুসলমান যুবক ২০০৬ সালে তার নাম পরিবর্তন করেন। ‘ওমর মীর সিদ্দিকী’ থেকে হয়ে যান ‘ওমর মীর সিদ্দিকী মতিন’।
মতিন বেসরকারি নিরাপত্তা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান জিফোরএস এর হয়ে কাজ করে আসছিলেন। ওই প্রতিষ্ঠান বলছে, মতিনের ‘অতীত পরীক্ষা’ করে দেখেই তাকে চাকরি দিয়েছিল তারা; সন্দেহজনক কিছু তখন পাওয়া যায়নি। ২০১৩ সালে সহকর্মীদের নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্যের’ জন্য মতিনকে দুই বার জিজ্ঞাসাবাদ করে এফবিআই। তবে ‘প্রমাণের অভাবে’ দু’বারই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
সিরিয়া যুদ্ধের সময় আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালানো মোনের মো. আবু সালেহ’র সঙ্গে যোগসাজশ আছে এমন সন্দেহে ২০১৪ সালে ওমরকে আরেক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করে এফবিআই। সেবারও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মতিনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে সংশ্লিষ্টতার কোনো অভিযোগ না থাকায় আগ্নেয়াস্ত্র বহনের অনুমতি ছিল মতিনের। চাকরিসূত্রে তিনি সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র রাখতেন। গত কয়েক দিনে তিনি বৈধভাবে আরও কিছু অস্ত্র কেনেন। শনিবার মধ্যরাতে একটি গাড়ি ভাড়া করে মতিন অরল্যান্ডোর নৈশক্লাব পালসে যান বলে ধারণা করা হচ্ছে। হামলায় তিনি ব্যবহার করেন অ্যাসল্ট রাইফেল ও একটি হ্যান্ডগান। তার কাছে কিছু বিস্ফোরকও ছিল বলে ধারণা করছে পুলিশ। হামলার আগে মতিন ৯১১- এ ফোন করে নিজেকে ‘আইএস’ এর অনুসারী বলে দাবি করেন বলে এফবিআই এর তথ্য। ফোনে মতিন ২০১৩ সালে বোস্টন ম্যারাথনে হামলা চালানো তামেরলান ও জোখার সারনায়েভের নাম বলেন।
অরল্যান্ডো হত্যাকা-ের পর মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠি ‘আইএস’ দাবি করেছে, তাদেরই এক যোদ্ধা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। অবশ্য মতিনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। মাইস্পেসে মতিনের বেশ কয়েকটি ছবির সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে তাকে সেলফি তুলতে এবং নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের নামাঙ্কিত টি-শার্ট পড়া অবস্থায় দেখা যায়।
মতিনের বাবা বলছেন, এ হামলার সঙ্গে ‘ধর্মের কোরো যোগ নেই’ বলে তার বিশ্বাস। অবশ্য সম্প্রতি মিয়ামিতে এক সমকামী যুগলের চুম্বন দেখে মতিন রেগে গিয়েছিলেন, পরিবারের সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলেছিলেন। মতিনের বাবা ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক একটি টেলিভিশন চ্যানেলে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন, যেটি পাকিস্তান সরকারের বিরোধী এবং আফগান তালিবানদের প্রতি ‘সহমর্মী’ বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য।
ওমরের সঙ্গে আইএস’র সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই
ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অরল্যান্ডোর নাইট ক্লাবে রোববার বন্দুকধারীর হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটস (আইএস)। তবে এ ঘটনায় হামলাকারীর সঙ্গে আইএসের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জঙ্গি সংগঠনটির নিউজ এজেন্সি আমাক জানিয়েছে, আইএস এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। আমাক’র প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলা জানাচ্ছে, বন্দুকধারীর টার্গেট ছিল সমকামীদের ওই নাইট ক্লাবের কমপক্ষে ১০০ জনকে হত্যা করা কিংবা আহত করা।
ওমর ওসমান নামে ওই বন্দুকধারী পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে কমপক্ষে ৫০ জনকে অতর্কিত গুলি করে হত্যা ও ৫৩ জনকে আহত করেছে। এফবিআই জানিয়েছে, হামলাকারী ওসমান ফ্লোরিডার নাগরিক। তবে তার সঙ্গে ইসলামী জঙ্গিদের কোনো সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। এখন পর্যন্ত আইএস সম্পৃক্ততার কোনো প্রামাণ পাওয়া যায়নি। এদিকে হামলা পরবর্তী এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, এটি একটি সন্ত্রাসী কাজ এবং ঘৃণিত কর্মকান্ড।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিউইয়র্কে প্রতিবাদ সভায় বক্তারা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ