Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আলাদা করতে অস্ত্রোপচার আগামী সপ্তাহে

প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : একটি পূর্ণাঙ্গ শিশুর উপর ভর করে আছে আর একটি শিশুর পেটের নিচের অর্ধেকসহ শরীরের নি¤œাঙ্গ। নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়ে শিশুটি পৃথিবীতে আসে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। আরেকটি শিশুর শরীরের প্রায় অর্ধেক অংশ নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুটির নাম মোহাম্মদ আলী।
উর্ধাঙ্গর মাথা, বুক ও দু’ হাত নেই অর্থাৎ আংশিক বা অপূর্ণাঙ্গ শিশুটি তার আংশিক অস্তিত্ব নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ শিশুর উপর ভর করে বেঁচে আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয়, প্যারাসাইটিক টুইন বা অপূর্ণাঙ্গ যমজ। প্যারাসাইটিক টুইন সমস্যা নিয়ে জন্মানো এ শিশুটির স্বাভাবিক জন্ম দেন বাগেরহাটের হীরামনি। এর আগে শিশুটির মা হীরামনি তিনটি সুস্থ স্বাভাবিক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মোহাম্মদ আলী হলো তাঁর চতুর্থ সন্তান। শিশুটির বাবার নাম মো. জাকারিয়া। অপূর্ণাঙ্গ যমজ শিশুটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মো. রুহুল আমিনের অধীনে ভর্তি আছে। শিশুটির জন্মের তৃতীয় দিন গত ১০ মার্চ ভর্তি করানো হয়, বর্তমানে বিএসএমএমইউ’র সি ব্লকের ৫ম তলায় ৫ডি ওয়ার্ডে বিনা ভাড়ার ১৩ নং বিছানায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, সেবিকাদের নিবিড় পরিচর্যায় শিশুটির চিকিৎসাসেবা চলছে। শিশুটির বয়স গতকাল পর্যন্ত ৩ মাস ৬ দিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের সহায়তায় শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকবৃন্দ শিশুটিকে ভারমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অপূর্ণাঙ্গ শিশুটির একটি কিডনি, মূত্রাশয় ও পুঃলিঙ্গ রয়েছেÑ যা দিয়ে সে নিয়মিত প্রসাব করছে। অপূর্ণাঙ্গ যমজ শিশুটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নীরিক্ষা ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। অপূর্ণাঙ্গ শিশুটি সংযুক্ত আছে পূর্ণাঙ্গ শিশুটির পেটের ডান দিকে এবং অপূর্ণাঙ্গ শিশুটির পিঠের হাড় পূর্ণাঙ্গ শিশুটির বুকের হাড়ের সাথে মিশানো আছে। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ শিশুটির নাভীও অসম্পূর্ণ যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় এক্সমফালোস। এর ভেতরের যকৃৎ ও খাদ্যনালী রয়েছে একটি পর্দা দিয়ে ঢাকা অবস্থায়। এটাকেও একটি জটিল অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে নাভীর অসম্পূর্ণতা ঠিক করে দিতে হবে। আগামী সপ্তাহে এ পূর্ণাঙ্গ শিশুটির উপর ভর করা অপূর্ণাঙ্গ শিশুটিকে আলাদা করা হবে। পূর্ণাঙ্গ শিশুটিকে অপূর্ণাঙ্গ শিশু থেকে আলাদা করার পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ শিশুটির নাভীর অপূর্ণতাও ঠিক করে দেয়া হবে। এ জটিল অপারেশনে সহযোগিতায় থাকবে এ্যানালজেশিয়া, এ্যানেসথেশিয়া এ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগ এবং নবজাতক বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ।
অপূর্ণাঙ্গ যমজ শিশুটির চিকিৎসক এ বিষয়ে প্রফেসর ডা. মো. রুহুল আমিন জানান, প্যারাসাইটিক টুইন সমস্যা নিয়ে জন্মানো শিশুটির চিকিৎসার ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে বলে ভিসি ডা. কামরুল হাসান খান আশ্বাস প্রদান করেছেন। আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে প্যারাসাইটিক টুইন সমস্যা নিয়ে জন্মানো শিশুটিকে অপূর্ণাঙ্গ শিশু থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিশু সার্জারি বিভাগ। যা অগামী সপ্তাহে সম্পন্ন করা হবে।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু সার্জারি বিভাগ অতীতেও এ ধরনের জটিল অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করে আসছে। গত ২০০৮ সালে বহুল আলোচিত বন্যা ও বর্ষাকে মাত্র তিন মাস বয়সে শিশু সার্জারি বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মো. শফিকুল হকের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৮ ঘণ্টাব্যাপী সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা হয়েছিল। তবে বর্ষার হৃদযন্ত্র বন্যার উপরে নির্ভরশীল থাকায় আলাদা করার পর বর্ষাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বন্যা গত ২৪ মার্চ আট বছর পূর্ণ করেছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু সার্জারি বিভাগে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আরও একটি শিশুর পেটের ভেতর থেকে তিনটি অসম্পূর্ণ শিশু বা প্যারাসাইটিক ট্রিপলেট বের করে আনা হয় বা অপসারণ করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আলাদা করতে অস্ত্রোপচার আগামী সপ্তাহে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ