Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আপনাদের জিজ্ঞাসার জবাব

| প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

প্রশ্ন: আল্লাহ প্রেমের নিদর্শন কি কোরবানী?

উত্তর: আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা লাভের উদ্দেশ্যে কিছু বিসর্জন দেয়াকে কোরবানী বলা হয়। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর কোরবানীর হুকুম পালন ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও কেউ যদি কোরবানীর মতো ইবাদত থেকে বিরত থাকে, তাহলে সে ব্যক্তি গুনাহগার হবেন। আল্লাহর হুকুমের আনুগত্যের মধ্যে কোরবানী একটি বিশেষ আমল। কুরআনুল কারীমে আল্লাহপাক তার বান্দাদের উদ্দেশ্যে নামাজের আদেশের পাশাপাশি কোরবানীর আমল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আপনার রবের জন্য নামাজ কায়েম করুন।(সূরা কাউসার ২) হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্নিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার মধ্যেও কোরবানী করে না, সে যেনো ঈদগাহে না আসে। (ইবনে মাজাহ-৩১২৩)। কোরবানীর সময়কাল আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য উত্তম সময়। কোরবানীর পশু জবেহ করার সাথে বান্দার তাকওয়া অর্জনের সম্পর্ক থাকে। আল্লাহর নিকট উৎসর্গকৃত পশুর রক্ত মাংস কোনো কিছুই পৌছায় না। শুধুমাত্র বান্দার তাকওয়া পৌছায়। আল্লাহপাক বলেন, তাঁর নিকট গোশত কিংবা রক্ত পৌছায় না, বরং তাঁর দরবারে বান্দার তাকওয়া পৌছায়। (সূরা হজ্জ্ব-৩৭)। যারা তাকওয়ার সহিত কোরবানী আদায় করবে, তাদের কোরবানীর পশুর রক্ত জমিনে পড়ার পূর্বে আল্লাহতায়ালা কবুল করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কালামে পাকে আরো বলা হয়েছে, আপনি ওদের নিকট আদমের দুই পুত্রের গল্পটি যথাযথভাবে শুনিয়ে দিন! যখন তারা দুইজনই কোরবানী উৎসর্গ করল, তখন তাদের মধ্যে একজনের নিকট থেকে কোরবানী কবুল করা হলো, আরেকজনের কাছ থেকে তার কিছুই কবুুল করা হলো না, সে বললো আমি অবশ্যই তোমাকে মেরে ফেলব।(যার কোরবানী কবুল করা হলো না) সে বললো, আল্লাহপাক তো শুধু পরহেজগার তাকওয়াবান লোকদের নিকট থেকেই কোরবানী কবুল করেন।(সূরা মায়েদা -২৭)। সমস্ত কাজের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভর করে। লোক দেখানো কোরবানী বা আমল কখনো আল্লাহপাক কবুল করেন না। একমাত্র আল্লাহকে ভয় এবং খুশি করার নিয়তে কোরবানী হলে তা কবুল হয়। কালামে পাকে আরো বলা হয়েছে, আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কোরবানীসমূহ, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু সবকিছুই আল্লাহর জন্য যিনি প্রতিপালক সমগ্র বিশ্ব জাহানের।(সূরা আনআম-১৬৩)। প্রত্যেক নবী রসূলদের সময়ে কোরবানীর বিধান প্রচলিত থাকার সংবাদ পাওয়া যায়। ইহা নতুন কোনো আমল নয়। প্রত্যেকটি কোরবানীর পশু আল্লাহর নামেই জবেহ করতে হয়। এর ব্যতিক্রম কোনো কিছু হলে কোরবানীর পশুর মাংস খাওয়া যাবে না। কুরআনে বলা হয়েছে, আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানীর বিধান দিয়েছি। তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যেসকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর উপর যেনো তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে, তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ।(সূরা হজ্জ্ব-৩৪)। কোরবানীর পশুর গোশতের মধ্যে অফুরন্ত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ মাংস নিজের পরিবার পরিজন আত্মীয় স্বজন অসহায় গরিব মানুষদের মধ্যে বিলি বন্ঠন করে খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ধনীর সম্পদে যেভাবে অসহায় মানুষের অধিকার রয়েছে, অনুরূপ কোরবানীর পশুর গোশতেও অসহায় গরীব দুস্থ প্রতিবেশীর অধিকার রয়েছে। পশুর গোশত দুস্থদের মধ্যে বিলি বন্ঠন করে ধনী গরিবের ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে গ্রহণ করা চায়। কোরবানীর পশু জবাই করার মধ্য দিয়ে ত্যাগ ও মহিমার উৎকৃষ্ট উদাহরণ দেখা যায়। সকল আবেগ অনুভূতিকে বিসর্জন দিয়ে কোরবানী পালন করতে হয়। দুনিয়ার সমস্ত লোভ লালসা মায়া মমতা ও আমিত্বকে বিসর্জন করে একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য প্রেমে কোরবানীকে উৎসর্গ করতে হয়। মূলত কোরবানীর বাস্তব হাকিকত হলো তাই। মানবের ভিতর যে পশু শক্তি লুকিয়ে আছে তা বিসর্জন দেয়ায় হলো কোরবানীর শিক্ষা। কোরবানীর মাধ্যমে লোভ, লালসা, অহংকার, আমিত্বকে বিসর্জন দেয়ার শিক্ষা দেয়। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা লাভের উদ্দেশ্যই হলো কোরবান। কোরবানীর নামে লোক দেখানো সংস্কৃতি কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়। সামর্থ্যের মধ্যে থেকে একজন আল্লাহর বান্দা তাঁর সন্তুষ্টি লাভে কোরবানী করবেন। সমাজে দেখা যায়, কোনো কোনো মুসল্লী সামর্থ্য না থাকা সত্তে¡ও কোরবানী করার জন্য লোন নিয়ে কোরবাণী করে থাকে। শরিয়তে এ কোরবানীকে গ্রহণ করে না। গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কোরবানী, অথবা পরিবার পরিজনের চাপের মধ্যে কোরবানী করা কোনো অবস্থায় পূণ্যময় ইবাদত হয় না। সামর্থ্যবান মানুষকেই আল্লাহর ভালোবাসার উদ্দেশ্যে কোরবানী করার বিধান দেয়া হয়েছে। লোক দেখানো কোনো ইবাদত অনুষ্টান আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই বিশুদ্ধ নিয়ত ও অর্থের মাধ্যমে কোরবানী হওয়া চায়। কোরবানীর পশুকে নিয়ে শরিয়ত বিরোধী কোনো ধরনের কর্মকান্ড করা উচিত নয়। কতিপয় মুসল্লী কোরবানীর নামে পশুকে নিয়ে লাফালাফি করা কোরবানীর ভাব গাম্ভির্য্য বিরোধী। যথা সময়ে কোরবানী শেষ করে কোরবানীর পশুর উচ্ছিষ্ট নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দেয়া উচিত। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ রক্ষা করা ধর্মীয় আদর্শের অন্যতম বাহন। ধর্মে বলা আছে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। তাই একটি ইবাদতের জন্য অসংখ্য মানুষের শারিরীক ও পরিবেশের কোনো অবস্থায় ক্ষতি করা সমুচিত নয়। ফলে পরিবেশ, স্বাস্থ্য রক্ষায় কোরবানীর পশুর উচ্ছিষ্ট নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় পুঁেত ফেলতে হবে। সেটাও কোরবানীর অনুষ্টানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আমাদের সকলকেই কোরবানীর নিয়ম হাকিকত ফজিলতের মধ্যে কোরবানীর অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার মাধ্যমে সামাজিক শান্তি শৃংখলা ও আল্লাহুর সন্তুষ্টি অর্জন করা চায়।
উত্তর দিচ্ছেন: মুফতি মাহমুদুল হক আনসারী



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ