পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাবনায় তিন সন্তানের জননীকে অপহরণ করা হয়। অত:পর চারদিন অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে চলে গণধর্ষণ। ধর্ষণকারীদের হোতা রাসেল আহমেদ। সঙ্গে ছিলো আরো চার সহযোগিতা। পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের যশোদল গ্রামের আলী আকবরের ছেলে এই রাসেল।
গত ২৯ আগস্ট রাতে ঘটে অপহরণের ঘটনা। পঞ্চম দিনের মাথায় কৌশলে গোপন আস্তানা থেকে পালিয়ে আসেন গৃহবধূ। থানায় যান মামলা করতে। কিন্তু পাবনা সদর থানা তার মামলা নেয়নি। বিষয়টি নিছক ‘অভিযোগ’ হিসেবে নিয়ে থানা থেকে বিদায় করে দেয়া হয় ধর্ষিতার অভিভাবকদের। ধর্ষিতাকে রেখে দেয়া পুলিশ কাস্টডিতে। পুলিশ দিয়ে রাসেলকে ধরে আনেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক। নিজ উদ্যোগে ধর্ষিতার সঙ্গে রাসেলের ‘সমঝোতা’ করার চেষ্টা করেন। কথিত সমঝোতার অংশ হিসেবে তিনি ধর্ষিতাকে দিয়ে তার বর্তমান স্বামীকে তালাক দেওয়ান। পরে তিন সন্তানের জননী ধর্ষিতাকে বিয়ে দেন রাসেলের সঙ্গে। গত ৬ সেপ্টেম্বর পাবনা সদর থানায় ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি এবার গড়িয়েছে হাইকোর্ট অবধি। গতকাল বুধবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি উত্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের তিন তরুণ আইনজীবী। এ বিষয়ে সংবাদ মাধমে প্রকাশিত প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল, গাজী ফরহাদ রেজা এবং রোহানী সিদ্দিকা আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে আপাত: স্থানীয় প্রশাসনের পদক্ষেপ দেখতে চেয়েছেন।
অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল আদালতে বলেন, গণধর্ষণের শিকার নারীর সঙ্গে থানায় বসে ধর্ষণের মূল হোতার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন পাবনা সদরের ওসি। আদালত বলেন, টিভিতে দেখলাম মূল অভিযুক্ত ব্যক্তি আটক হয়েছেন। ওসিকেও শোকজ করা হয়েছে। তখন আইনজীবী বলেন, পত্রিকায় দেখেছি ভিকটিম ও কাজীকে ওসির লোকজন ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তাতে তদন্ত ভিন্ন মোড় নিতে পারে। আদালত বলেন, আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। আগে দেখি প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়। যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে আগামী সপ্তাহে বিষয়টি আমরা দেখব।
আদালত থেকে বেরিয়ে অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল জানান, পাবনা সদর থানায় ঘটে যাওয়া ঘটনায় সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সেগুলো উদ্ধৃত করে আদালতের দৃষ্টিতে এনেছি। বিষয়টি আমলে নিয়ে আদালত বলেছেন, যেহেতু এটি প্রশাসনিক বিষয় এবং যেহেতু কর্র্তৃপক্ষ অ্যাকশন নিচ্ছে সেহেতু প্রশাসনের উদ্যোগটি দেখা দরকার।
এদিকে পাবনার স্থানীয় সূত্র জানায়, ঘটনাটি গণমাধ্যমে আসার পর গত ৯ সেপ্টেম্বর পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গৌতম কুমার বিশ্বাসকে এ কমিটির প্রধান। তদন্ত কমিটি প্রথমেই ওইদিন বিকেলে তাৎক্ষণিকভাবে থানায় ধর্ষণের ঘটনাটি ‘মামলা’ হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে সদর থানার ওসি ওবায়দুল হক থানা চত্বরে কেন এমন কাজ করলেন তার ব্যাখ্যা চেয়ে কারণদর্শাতে বলা হয়েছে। যদিও ওসি ওবায়দুল হক দাবি করেছেন যে, তার থানায় এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে গত ৬ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা ওসিকে বরখাস্ত এবং রাসেলের শাস্তি দাবি করছেন।
সূত্রমতে, ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূ প্রথমে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, তার স্বামী এবং তিন সন্তান রয়েছে। তারা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের সাহাপুর যশোদল গ্রামে থাকেন। গত ২৯ আগস্ট রাতে একই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেল আহমেদ ও তার চার সহযোগী গৃহবধূকে অপহরণ করে। পরে রাসেল ও তার চার সহযোগী টানা চারদিন অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে ওই গৃহবধূ কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে এসে স্বজনদের বিষয়টি জানান। গত ৫ সেপ্টেম্বর গৃহবধূকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি নিজেই বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
ধর্ষিতার পিতা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমার মেয়ে অপহৃত হওয়ার কয়েকদিন পর তাকে খুঁজে পাই। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। তার কাছে ঘটনার বিস্তারিত শুনে থানায় অভিযোগ দিতে যাই। কিন্তু পুলিশ আমাদের অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ না করে মেয়েকে থানা হেফাজতে রেখে দেয়। আর আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। পরে জানতে পারি থানায় রাসেলের সঙ্গে তার বিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বামী-সন্তান থাকা অবস্থায় রাসেলের সঙ্গে তাকে কিভাবে বিয়ে দেয়া সম্ভব তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ ঘটনায় আমরা সামাজিকভাবে অপদস্থ হয়েছি। আমরা নির্যাতনের বিচার চাই।
দাপুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দৌলত আলী সাংবাদিকদের বলেন, গণধর্ষণের অভিযোগে সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) একরামুল হক আমার উপস্থিতিতে রাসেলকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এ সময় ঘন্টু নামে স্থানীয় মাতবর তাকে সহযোগিতা করেন। পরে শুনি ঘন্টুর মধ্যস্থতায় থানায় তাদের বিয়ে হয়েছে। এ বিয়ে কোনোভাবেই শরীয়তসম্মত নয়।
নির্যাতিত ওই গৃহবধূ সাংবাদিকদের বলেন, রাসেলকে আটক করে আনার পর ওসি স্যার নিজেই থানায় কাজী ডেকে এনে আমাদের বিয়ে দিয়েছেন। তবে কাজী সাহেব প্রথমে বিয়ে পড়াতে রাজি হননি। পরে ওসি সাহেবের কথা মতো আগের স্বামীর সঙ্গে তালাক করিয়ে আমাদের বিয়ে পড়ান।
এদিকে অভিযুক্ত রাসেল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত নই। পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করে মামলা ও রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক আমাকে বিয়ে দিয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। থানায় আমাদের বিয়ের সময় উপ-পরিদর্শক (এসআই) একরাম আমাদের ছবি তুলে রাখেন।
এদিকে বিষয়টি অস্বীকার করে পাবনা সদর থানার ওসি ওবায়দুল হক বলেছেন, ওই গৃহবধূ প্রথমে ধর্ষণের অভিযোগ দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন। ওইদিন রাতে তাদের বিয়ের কথা শুনেছি। তবে থানায় কোনো বিয়ের ঘটনা ঘটেনি। আমার এর সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।