Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাগরিক সমাজকে পাশে চায় আ.লীগ

প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান : দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরের পুরোহিত, ধর্মযাজক, খ্রিষ্টান পাদ্রি-ব্যবসায়ী, মুক্তবুদ্ধি চর্চার বøগার, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী, শিক্ষক, রাজনীতিবিদসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ প্রায় প্রতিদিন নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হচ্ছে। এসব ঘটনায় দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্র কাজ করছে বলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দাবি করা হয়েছে। এমন দাবির সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন দেশের সকল নাগরিক সমাজ।
এদিকে স¤প্রতি দেশে ধর্মীয় উগ্রতা ও জঙ্গিবাদের আড়ালে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন সরকারি দল আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে মদদ দিয়ে একের পর এক হত্যাকাÐ ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের নামে তা প্রচার করা হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের আসল উদ্দেশ্য সিরিয়া-ইরাকের মতো বহিঃশক্তির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে দেশকে বিপদগ্রস্ত করা। এই ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে দেশের নাগরিক সমাজকে কাজে লাগাতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। এ জন্য নাগরিক সমাজকে পাশে চায় আওয়ামী লীগ।
এর আগে গত ২৪ মে বৃহস্পতিবার খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ধর্মীয় স¤প্রীতি সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পুলিশ। দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই সম্মেলনে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান স¤প্রদায়ের প্রায় এক হাজার নেতা অংশ নেন। ওই সম্মেলনে বক্তারা জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করে স¤প্রীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের সব ধর্মের নেতাদের নিয়ে ‘সর্বধর্মীয় মঞ্চ’ নামে জাতীয় ও আঞ্চলিক কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। এর অংশ হিসেবেই স¤প্রীতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি বিভাগ ও জেলায় এ সম্মেলন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে সচেতন করতে এক লাখ আলেম-ওলামার সইসংবলিত বাণী প্রস্তুত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৭৬ হাজার আলেম সই করেছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া একাত্তরের পাকিস্তানী হানাদারদের মতোই গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছেন। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মানুষ পুড়িয়ে মারছেন। আর মানুষ পুড়িয়ে মারা গণহত্যার শামিল। এটি জঙ্গিবাদী কর্মকাÐ।
নাগরিক সমাজের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের বিবেক আছে, মানবতাবিরোধী ও বীভৎসভাবে মানুষ হত্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আর যারা জঙ্গি-বিএনপি-জামায়াতকে সমর্থন দেয়, সমাজের জ্ঞানী-গুণী ও বিবেকবান, আপনারা এই অপশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ান।
এদিকে দেশবিরোধী সব চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহŸান জানিয়েছেন ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, অসাংবিধানিক পন্থায় বর্তমান সরকারকে উৎখাতে আগুনযুদ্ধে পরাজিত খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ছাতার তলে থেকেই সারাদেশে গুপ্তহত্যা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশকে সা¤প্রদায়িকতা ও তালেবানির দিকে নিয়ে যাওয়ার রাজনৈতিক খেলার অংশ হিসেবেই আগুনযুদ্ধের পর এখন গুপ্তহত্যার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের অব্যাহত গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, জঙ্গিবাদী তৎপরতা এবং গণতন্ত্র উন্নয়ন স্থিতিশীলতা ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে গতকাল রোববার যৌথসভা করেছে ১৪ দল। বেলা ৩টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকগণ।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম শান্তির কথা বলে। ইসলাম হত্যা পছন্দ করে না। নির্যাতন পছন্দ করে না। লুটপাট পছন্দ করে না। কোনো ধর্মেই এসব নেই। তিনি বলেন, অগ্নি-সন্ত্রাসের মাধ্যমে আমাদের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। সবাই মিলে সেই সন্ত্রাস প্রতিরোধ করেছি। এখন মানুষ হত্যা করে নাম দেয়া হচ্ছে আইএস। এগুলো আমরা সমর্থন করি না। বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষ এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এগিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে শোলাকিয়া জাতীয় ঈদগাহর ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, ইসলাম শান্তির কথা বলে। যারা ধর্মের নামে নাশকতা করে তারাই ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রæ। তারা ইসলামকে বিপজ্জনক হিংস্র বলে প্রমাণ করতে চাইছে। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ পছন্দ করে না। সবাইকে সচেতন করতে আমরা কাজ করছি। আমরা এক লাখ আলেম-ওলামা মিলে জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়ায় স্বাক্ষর করছি। এরই মধ্যে ৭৬ হাজার স্বাক্ষর হয়ে গেছে। একই কথা বলেন, আওয়ামী ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দেলোওয়ার হোসেন। তিনি বলেন, যারা ইসলামের নামে মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করছে, বহির্বিশ্বে দেশকে সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে চাইছে তাদের বিরুদ্ধে এখন থেকেই দেশের নাগরিক সমাজকে জেগে উঠতে হবে। গড়ে তুলতে হবে কঠিন থেকে কঠিন প্রতিরোধ। সর্বোপরি জঙ্গি দমনে শান্তির বাণী প্রচারের মাধ্যমে পুলিশকে যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঢাকা আর্চ বিশপের সিএমপি আর্চ বিশপ পেট্রিক ডি রোজারিও বলেন, স¤প্রীতি ও শান্তির বাণী প্রচার করতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। সর্বোপরি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। অপশক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হলেও একটি কুচক্রী মহল দেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতেই আন্তর্জাতিক মদদে এ ধরনের চক্রান্ত চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নাগরিক সমাজকে পাশে চায় আ.লীগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ