পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1720181031](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : অস্পষ্ট সিসিটিভি ফুটেজ ধরে চলছে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্ত। আর দেশজুড়ে আলোচিত এই মামলার তদন্তের শুরুতেই ‘অস্বচ্ছতার’ অভিযোগ উঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। ত্রিশ লাখ টাকার বিনিময়ে একজনকে এই মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ এখন সর্বত্রই আলোচনার বিষয়। মিতু হত্যার আট দিন পার হয়েছে।
এখনও হত্যাকাÐের রহস্য উদঘাটন হয়নি। খুনের রহস্যও থেকে গেছে অজানা। সন্দেহের তালিকায় জঙ্গিদের শীর্ষে রেখে শুরু থেকে তদন্ত চলে। তবে গতকাল রোববার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বললেন ‘মিতুর খুনিরা জঙ্গি কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।’ মামলার তদন্ত এখনও সন্তোষজনক নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে গিয়ে নগরীর জিইসি মোড়ের অদূরে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। আইজিপি তখন বিদেশে ছিলেন। খুনের ৮ দিন পর গতকাল সকালে চট্টগ্রাম আসেন তিনি। মামলার সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে সিএমপির কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করেন পুলিশ প্রধান। বৈঠকে মামলা তদন্তে অস্বচ্ছতার বিষয়টি আলোচিত হয় বলে জানা গেছে। আর এ প্রেক্ষাপটে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) পরিবর্তন করা হয়েছে। তদন্ত তদারক করতে গঠন করা হয় ৫টি কমিটি। পুলিশ প্রধান স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্বের সাথে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনায় আটক হাটহাজারী মূসাবিয়ার দরবারের খাদেম আবু নসর গুন্নু ও খুনীচক্রের সদস্য হিসেবে আটক সন্দেহভাজন শাহ জামান রবিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিন করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। মামলার নতুন আইও ডিবি পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ কামরুজ্জামান মামলার তদন্তভার নিয়েছেন। যে কোন সময় আসামিদের পুলিশ হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
দেশজুড়ে আলোচিত মিতু হত্যাকাÐের পরপর আলামত হিসেবে ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। চট্টগ্রাম মহানগরীতে অপরাধ দমন এবং অপরাধের পর সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে অসংখ্য সিসিটিভি বসানো হয়। এর উদ্যোক্তা ছিলেন বাবুল আক্তার নিজে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তার প্রিয়তমা স্ত্রী খুনের ঘটনায় যে কয়টি ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে তার সবকটি অস্পষ্ট। এতে করে খুনীদের চিহ্নিত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। অস্পষ্ট ভিডিও ফুটেজের কারণে আলোচিত এ মামলার তদন্তে অস্বচ্ছতার সুযোগ নিচ্ছে পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা। অভিযোগ উঠেছে, অভিযানের নামে পুলিশ যাকে তাকে ধরছে, আবার উৎকোচের বিনিময়ে ছেড়ে দিচ্ছে। তবে সিএমপির কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করে চলেছেন।
একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, খুনীদের একজন আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছে, বাকি দু’জন মোটরসাইকেল যোগে জিইসি মোড় থেকে ঘটনাস্থলে আসে। হত্যাকাÐে অংশ নেয় এরা তিনজন। মাত্র এক মিনিটের মাথায় হত্যাকাÐ শেষে ওই মোটরসাইকেলে করে তিনজন পালিয়ে যায়। ফুটেজে পুরো ঘটনা দেখা গেলেও কারও ছবি স্পষ্ট নয়। এতে করে বিপাকে পড়ে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বায়েজিদ বোস্তামী থানার শীতলঝর্ণা আবাসিক এলাকা থেকে শাহ জামান রবিন নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের ধারণা, আগে থেকে ঘটনাস্থলে যে যুবকটি মোবাইল ফোনে কথা বলছিল সে এ রবিন হতে পারে। কিন্তু অস্পষ্ট ভিডিও ফুটেজের কারণে তাকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। সিএমপির কমিশনার মোঃ ইকবাল বাহার বলেন, আমরা প্রায় নিশ্চিত, রবিন খুনীদের একজন। তবে ছবি দেখে তাকে মিলানো যাচ্ছে না। তাকে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে রিমান্ডের জন্য আদালতে প্রেরণ করা হয়।
অস্পষ্ট ভিডিও ফুটেজে কালো রংয়ের একটি মাইক্রোবাসকেও সন্দেহ করে পুলিশ। পরে দেখা যায়, ওই মাইক্রোবাসের চালক জানে আলম নিজেই পুলিশে ধরা দেন। তিনি জানান, খুনের সাথে দূরতম সম্পর্কও নেই তার। প্রতিদিনের মতো ওই এলাকা অতিক্রমকালে রাস্তার পাশে রক্তাক্ত এক মহিলার লাশ দেখে তিনি গতি কিছুটা কমিয়ে ফের গন্তব্যের দিকে চলে যান। তাকেও আটকে রেখে দুইদিন জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে মাইক্রোবাসটি রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অস্পষ্ট ভিডিও ফুটেজের কারণে হত্যাকাÐে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল নিয়েও বিভ্রান্তি হয়। ভিডিও ফুটেজে হত্যাকাÐে অংশ নেওয়া তিনজনের ছবি দেখা যায়। আশপাশে থেকে আর কেউ সহযোগিতা করেছে কিনা সে বিষয়টি ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট নয়। এরপরও হাটহাজারী মূসাবিয়া দরবারের খাদেম আবু নসর গুন্নুকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। মাজারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, মাজার নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে এ মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে। ডিবি পুলিশের বিতর্কিত এক পরিদর্শক এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ উঠে। শুরু থেকেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কাজী রাকিব উদ্দীনের ভূমিকা নিয়েও নানা কথা উঠে। অবশেষে ৮ দিনের মাথায় তাকে তদন্ত থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
নসর-রবিন রিমান্ডে
মিতু খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার সন্দেহভাজন আবু নসর গুন্নু ও শাহ জামান রবিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিন করে রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল বিকেলে মহানগর হাকিম হারুন অর রশিদ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। রিমান্ড শুনানিতে অংশ নেয়া মহানগর আদালতে পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দু’জনকে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানিয়েছিল পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। গত ৭ জুন হাটহাজারীর মূসাবিয়া দরবার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু নসর গুন্নুকে আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। আটকের পর তাকে পুলিশের পক্ষ থেকে সাবেক শিবির কর্মী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। হত্যাকাÐে সে সরাসরি অংশ না নিলেও জিইসি মোড় এলাকায় অবস্থান করে খুনীদের সহযোগিতা করেছে বলে পুলিশের সন্দেহ। আটকের পর তাকে মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। তবে কোন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে আদালত এটি জানতে চেয়ে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য প্রমাণ উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। ওইদিন আদালত রোববার শুনানির দিন ধার্য করেন। শাহ জামান রবিনকে ১১ জুন রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার শীতলঝর্ণা আবাসিক এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। তাকে মূল খুনি হিসেবে সন্দেহ করছে পুলিশ। জানা গেছে রিকশা চালকের সাথে মারামারির ঘটনায় তাকে আটকের পর এই মামলা সন্দেহভাজন হিসাবে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ নিশ্চিত হয় সে কোন জঙ্গি সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়।
আইও বদল
মিতু হত্যা মামলার আইও হিসেবে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (দক্ষিণ) জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়নি নিশ্চিত করেন সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) আনোয়ার হোসেন। গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক কাজী রকিব উদ্দিন এর আগে তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। আগের আইও’র বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠায় তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় একজন সিনিয়র অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেন পাচারসহ বেশ কয়েকটি মামলা তদন্ত করেন কামরুজ্জামান।
তদন্তে সহায়তায় ৫ কমিটি
পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্তে সহায়তার জন্য পাঁচটি কমিটি গঠন করেছে সিএমপি। গতকাল সিএমপিতে এক সভায় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) একেএম শহীদুল হকের উপস্থিতিতে পাঁচটি কমিটির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সিএমপির উপ-কমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ পাঁচটি আলাদা কমিটি গঠনের বিষয়টি কাছে স্বীকার করেছেন। পাঁচটি কমিটি হচ্ছে, আসামি গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ, কেস ডকেট পর্যালোচনা, ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ ও পর্যালোচনা এবং হত্যাকাÐ ও খুনীদের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ। এসব কমিটি সার্বিক কার্যক্রম মনিটর করবেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন) দেবদাস ভট্টাচার্য। গ্রেফতার অভিযান পরিচালনার জন্য কমিটি প্রদানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) নাজমুল আলমকে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গঠিত কমিটির প্রধান হয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) হুমায়ন কবির। মামলা পর্যালোচনার দায়িত্ব পেয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ। ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ কমিটির প্রধান হয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি কমিশনার (আইসিটি) জাহাঙ্গির আলম। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে নেতৃত্ব দেবেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান। প্রতিটি কমিটিতে সর্বনিম্ন পাঁচজন থেকে সর্বোচ্চ নয়জনকে সদস্য করা হয়েছে। নগর পুলিশ ও বিভিন্ন থানার দক্ষ এবং চৌকস কর্মকর্তাদের এসব কমিটিতে রাখা হয়েছে বলে সিএমপির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।