এফ আর টাওয়ারের ঘটনা : জামিন পেলেন বিএনপি নেতা তাসভীর
রাজধানীর বনানীতে এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা তাসভীরউল ইসলাম জামিন পেয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মো.তোফাজ্জল হোসেন জামিনের আদেশ
বিষয় : বাংলা
মো. আব্দুর রশিদ
সিনিয়র শিক্ষক (বাংলা), আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ
অভাগীর স্বর্গ
১। এই নিষ্ঠুর অভিযোগে গফুর যেন বাক্রোধ হইয়া গেল। ক্ষণেক পরে ধীরে ধীরে কহিল, কাহন খানেক খড় এবার ভাগে পেয়েছিলাম। কিন্তু গেল সনের বকেয়া বলে কর্তামশায় সব ধরে রাখলেন? কেঁদে কেটে হাতে পায়ে পড়ে বললাম, বাবু মশাই, হাকিম তুমি, তোমার রাজত্ব ছেড়ে আর পালাব কোথায়? আমাকে পণদশেক বিচুলি না হয় দাও। চালে খড় নেই। বাপ বেটিতে থাকি, তাও না হয় তালপাতার গোঁজাগাঁজা দিয়ে এ বর্ষাটা কাটিয়ে দেব, কিন্তু না খেতে পেয়ে আমার মহেশ যে মরে যাবে।
(ক) কাঙালীর বাবার নাম কী?
(খ) ‘তোর হাতের আগুন যদি পাই, আমিও সগ্যে যাব’-উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
(গ) উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে যে সমাজচিত্রের ইঙ্গিত রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
(ঘ) কাঙালীর সঙ্গে উদ্দীপকের গফুরের সাদৃশ্য থাকলেও কাঙালী সম্পূর্ণরূপে গফুরের প্রতিনিধিত্ব করে না-মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
১(ক)নং প্রশ্নের উত্তর
কাঙালীর বাবার নাম রসিক বাঘ।
১(খ) নং প্রশ্নের উত্তর
আলোচ্য উক্তিটির মধ্য দিয়ে তৎকালীন হিন্দু সমাজের সংস্কারের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে।
তৎকালীন হিন্দু সমাজে বিশ্বাস করা হতো যে পিতা-মাতা যদি মৃত্যুর পর ছেলের হাতে আগুন পায়, তবে তারা স্বর্গে যাবে। এ বিশ্বাস ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অভাগীর মধ্যেও ছিল। কাঙালীর হাতের আগুন প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে সে স্বর্গ যাবে, এটাই ছিল তার বিশ্বাস। যে কাঙালীকে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য কথাটি বলেছে।
১(গ)নং প্রশ্নের উত্তর
উদ্দীপকে একটি অবোধ প্রাণী মহেশের প্রতি কৃষক গফুরের অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং সমকালীন সামাজিক অবস্থার সুনিপুণ চিত্র ফুটে উঠেছে।
ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনাধীনে পল্লীসমাজে সামন্ত শাসন প্রচলিত ছিল। ভূমি ব্যবস্থার কারণে সামন্ত প্রভু তথা জমিদার ভূস্বামীরা ছিল সমাজের দ-মুন্ডের কর্তা। ভূমির উপর ছিল তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য। জমিদার-ভূস্বামীদের নির্লজ্জ শোষণ-নিপীড়নের কারণে নির্মম দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়েছিল গরিব কৃষকেরা। বর্গাচাষি গফুর ভূস্বামীর নিকট থেকে মহেশের খাবারের জন্য বিচুলি আনতে পারল না।
একইভাবে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বিরোচিত ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে সামন্তবাদের নির্মম রূপ ও নীচ শ্রেণীর হতদরিদ্র মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণার ছবি ফুটে উঠেছে। অভাগীর মৃত্যুর পর পুত্র কাঙালী মায়ের সৎকারের প্রয়োজনীয় কাঠের জন্য সমাজের উঁচু শ্রেণীর লোকের নিকট যায়। কিন্তু তারা কাঙালীকে কাঠতো দেয়ইনি, উপরন্তু ভর্ৎসনা, তিরস্কার, অবজ্ঞা, অবহেলা, গলা ধাক্কা প্রভৃতি তাকে সহ্য করতে হয়েছে। সমাজে সর্বদাই উঁচু শ্রেণীর মানুষ কর্তৃক নীচু শ্রেণীর মানুষেরা শোষণ-বঞ্চনার শিকার হয়। সমাজের এই বিষয়গুলো লেখক তাঁর দরদি ভাষায় ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে উপস্থাপন করেছেন।
১(ঘ)নং প্রশ্নের উত্তর
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালীর সঙ্গে উদ্দীপকের গফুরের প্রতিনিধিত্বপূর্ণ দিকটি হলো, উভয়ই সামন্ত প্রথার শিকার।
উদ্দীপকের গফুর বর্ণবাদী ও সামন্ত শাসিত কৃষিভিত্তিক সমাজের নিষ্ঠুর-নিপীড়নের নির্মম সাক্ষী। যে বৈষম্যপূর্ণ সমাজের কুৎসিত রূপটি শুধু চোখে দেখেনি, নিজের দেহ ও মনে সমাজের সীমাহীন নির্যাতনের চিহ্নও ধারণ করেছিল। সামন্ত শাসনের যাঁতাকলে তাকে নির্মমভাবে ভোগ করতে হয়েছে বঞ্চনা, লাঞ্ছনা ও যন্ত্রণা। যে ভূস্বামীর জমি তিনি বর্গাচাষ করতেন তিনি গফুরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নন। মহেশকে বাঁচানোর জন্য তিনি কিছু বিচুলি চেয়েছিলেন বাবু মশাইয়ের নিকট কিন্তু তার গেল সনের বকেয়ার কারণ দেখিয়ে একটি বিচুলিও গফুরকে দিলেন না। ধর্মান্ধ অমানবিক সমাজ গফুরকে শুধু দুঃখ-কষ্টই দিয়েছে।
অন্যদিকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে কাঙালীর চরিত্রটিও নির্যাতিত ও নিপীড়িত। পিতা বেঁচে থাকলেও অন্যত্র বিবাহ করে চলে গেছে। একমাত্র মা তাকে ছোটবেলা থেকে খুবই কষ্টে মানুষ করছে। সবেমাত্র সে কর্মজগতে প্রবেশ করেছে। কাঙালীর মা ভাবত কাঙালী বড় হয়ে তার দুঃখ ঘোচাবে। তার সেই আশা পূরণ হলো না। অভাগী অসুস্থ হয়ে মারা গেল। এর সঙ্গে সঙ্গে কাঙালীর জীবনে চরম দুর্দশা নেমে এলো। মায়ের সৎকারের জন্য সমাজের কেউই একটু সাহায্য করল না। সবাই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল। শারীরিক নির্যাতন করতেও জমিদারের কর্মচারীদের চিত্তে দাগ পর্যন্ত পড়ল না। কাঠের অভাবে মায়ের সৎকার করতে পারল না।
সুতরাং লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালীর চরিত্র এবং উদ্দীপকের গফুরের চরিত্রের মধ্যে সাদৃশ্য থাকলেও কাঙালী সম্পূর্ণরূপে গফুরের প্রতিনিধিত্ব করে না এ কথা সত্য এবং যথার্থ।
২। শুধু বিঘে দুই, ছিল মোর ভূঁই
আর সবই গেছে ঋণে।
বাবু বলিলেন, বুঝেছ উপেন
এ জমি লইব কিনে।
(ক) ‘অশন’ শব্দটির অর্থ কী?
(খ) কাঙালীর মা ঠাকুরদাস মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর শব কাছ থেকে দেখার সাহস পেল না কেন?
(গ) ‘বাবু বলিলেন, বুঝেছ উপেন এ জমি লইব কিনে চরণটি ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের যে ভাব প্রকাশ করে তা ব্যাখ্যা কর।
(ঘ) ‘উদ্দীপকের ভাবটিই কি ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের একমাত্র উপজীব্য?’-উক্তিটির যথার্থতা বিচার কর।
২(ক)নং প্রশ্নের উত্তর
অশন শব্দটির অর্থ হলো খাদ্যদ্রব্য।
২(খ)নং প্রশ্নের উত্তর
কাঙালীর মা নীচু জাতের মেয়ে বলে ঠাকুরদাস মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর শব কাছ থেকে দেখার সাহস পেল না।
কাঙালীর মা দুলের মেয়ে। তৎকালীন হিন্দু সমাজের বর্ণ বিভাজন অনুযায়ী সে নীচু জাতের মানুষ। অন্যদিকে ঠাকুরদাস মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী ব্রাহ্মণ বংশের। তাই নীচু জাতের হওয়ার কারণে উঁচু জাত ঠাকুরদাস মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর শব অভাগীর মা কাছ থেকে দেখার সাহস পেল না।
২(গ)নং প্রশ্নের উত্তর
উক্ত চরণটি ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের সামন্ত প্রভুদের সর্বগ্রাসী রূপটি তুলে ধরেছেন।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে কাঙালী সামন্ত প্রভুদের প্রকৃত রূপটি অবলোকন করেছে। তাদের জমিতে তার মায়ের হাতে লাগানো গাছটি হয়ে গেছে জমিদারের। এভাবেই সামন্ত প্রভুরা দরিদ্র অসহায়দের শোষণ করে নিজেরা সম্পদের মালিক হয়। মায়ের সৎকারের জন্য কাঙালী জমিদারের গোমস্তার কাছে তাদের বেলগাছটি কাটার অনুমতি প্রার্থনা করতে যায়। গোমস্ত জানায় পাঁচ টাকার বিনিময়ে সে গাছ নিতে পারবে।
কাঙালীর মতো উদ্দীপকের উপেনও সামন্ত প্রভুদের শিকার। নিঃস্ব উপেন একে একে তার সব হারিয়েছে। আজ তার আছে কেবল শেষ সম্বল দুই বিঘা জমি। সেটিতে লোভ পড়ে জমিদারের। জমিদার সেটি উপেনের কাছ থেকে কেড়ে নিতে চায়। এই ধরনের ধনী ব্যক্তিরা দরিদ্রদের শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিয়ে তাদের নিঃস্ব করে দেয়।
২(ঘ)নং প্রশ্নের উত্তর
সামন্ত প্রভুদের সর্বগ্রাসী রূপটিই ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের একমাত্র উপজীব্য নয়।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে সামন্তবাদের নির্মম সর্বগ্রাসী রূপ ফুটে উঠেছে। এর পাশাপাশি আমরা দেখতে পাই তৎকালীন নারীদের বিভিন্ন সংস্কার। নীচু শ্রেণীর দরিদ্র মানুষের দুঃখ-দুর্দশাও এ গল্পে ফুটে উঠেছে। মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসার পরিচয়ও আমরা এ গল্পে পাই। মাকে ভালোবেসে মায়ের শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে গিয়ে অসহায় কাঙালী প্রত্যক্ষ করেছে সামন্ত প্রভুদের নির্মমতা।
উদ্দীপকে আমরা এই সামন্ত প্রভুদের লোভী ও নির্মম রূপটি দেখতে পাই। দরিদ্র উপেনের শেষ সম্বল দুই বিঘা জমি। সেটির ওপর লোভ পড়ে জমিদারের। জমিদারের নিজের সম্পদের কোনো অভাব নেই। তারপরও দরিদ্র প্রজাদের তার শোষণ করতেই হবে। এভাবেই ধনী ব্যক্তিরা দরিদ্রদের শোষণ করে ধনী হচ্ছে।
উদ্দীপকে সামন্ত প্রভুদের লোভী ও নির্মম রূপটিকে দেখানো হয়েছে, যা ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের একটি বিশেষ দিক। কিন্তু ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে এ ছাড়াও আরো কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। তাই বলা যায় সামন্তবাদের স্বরূপই ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের একমাত্র উপজীব্য নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।