পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুকুরচুরি-সাগরচুরির মতোই ‘গুপ্তখাল ডিপো’ থেকে যমুনা অয়েলের ৭৮ হাজার লিটার তেল চুরি হয়েছে। কোটি কোটি টাকার তেল পাচারের ঘটনা আড়াল করার প্রচেষ্টা চলছে। এই তেল চুরির অভিযোগ উঠার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে তেল চুরির ঘটনা প্রমাণিত হয়। কিন্তু টার্মিনাল ম্যানেজারের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) জসিমউদ্দিন ও দায়িত্বে থাকা মঞ্জুর কাদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে প্রতিষ্ঠানের কর্মরতরা। তবে এ বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দিন আনচারী কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেছেন, ঘটনার তদন্ত চলছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমরা দুইজনের বিরুদ্ধে সাময়িক ব্যবস্থা নিয়েছি। এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার কথা। আমরা রিপোর্ট হাতে পেলেই বিপিসির বোর্ড সভায় সেটি নিয়ে আলোচনা করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রায় অর্ধ কোটি টাকা লেনদেনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) ঊর্ধ্বতন মহল ও ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটিকে ম্যানেজ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কমিটি গঠনের এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযুক্তদের বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও সেটির ক্ষেত্রেও সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। গত ১০ আগস্ট যমুনা ডিপোর ডলফিন জেটিতে আসা মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমটি পামির থেকে গুপ্তখাল ডিপোতে খালাসের পর প্রায় ৭৮ হাজার লিটার তেল বেশি দেখা তোলপাড় শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে, এই অতিরিক্ত ফার্নেস অয়েল চোরাইভাবে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছিল একটি চক্র। এ নিয়ে বিপিসির দুই সদস্যের প্রাথমিক তদন্ত কমিটি পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহদী হাসান বরাবরে প্রতিবেদন জমা দেয়। বিপিসির প্রাথমিক তদন্ত কমিটির ২১ আগস্ট দেয়া প্রতিবেদনে ৭৮ হাজার ৫৪৬ লিটার ফার্নেস অয়েল বেশি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তাতে তেল অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার বিষয়টির সাথে কেউ কেউ জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়। তারই অংশ হিসেবে ২২ আগস্ট যমুনার প্রধান ডিপোর টার্মিনাল ম্যানেজার ডিজিএম (অপারেশন) জসিম উদ্দিন এবং ডেপুটি ম্যানেজার (বাল্ক) এ এইচ এম মনজুর কাদেরকে প্রত্যাহার করার নির্দেশনা দেয়া হয়। একইসাথে তেল অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অধিকতর তদন্ত ও পর্যালোচনার জন্য বিপিসির ঊর্ধ্বতন মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) মো. আবু হানিফকে আহ্বায়ক করে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং) মো. আবু সালেহ ইকবাল, ইস্টার্ন রিফাইনারির মহাব্যবস্থাপক (ডেপেলভমেন্ট অ্যান্ড কন্ট্রোল) মো. আনোয়ার সাদাত এবং মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) শেখ আবদুল মোতালেবকে সদস্য করে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিপিসি। ওই কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিপিসির গঠিত এই কমিটির সদস্যরা যমুনা অয়েলের প্রধান ডিপো পরিদর্শন করার পাশাপাশি তদন্ত কমিটি ডিপোতে আসা লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ এমটি এনএস প্যারেড থেকে খালাস নেয়া তেল আইটিটির মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। এর আগে আসা এমটি পামির থেকে ৭৮ হাজার ৫৪৬ লিটার ফার্নেস অয়েল বেশি হওয়ার কথা বলা হয়। তবে সমপরিমাণ তেল নিয়ে আসা এমটি এনএস প্যারেড থেকে খালাস নেয়ার পর আইটিটি করে মাত্র ২৮০ লিটারের মতো বেশি (গেইন) পাওয়া গেছে। গত ২৬ আগস্ট নতুন একটি জাহাজ এমটি এনএস প্যারেড ফার্নেস অয়েল নিয়ে ডিপোর টার্মিনালে আসে। ২৯ আগস্ট জাহাজ থেকে তেল খালাস সম্পন্ন হয়। এর পরের দিন শুক্রবার সকালে বিপিসির তদন্ত দল ডিপোতে আসে। তদন্ত দলের উপস্থিতিতে শুক্রবার আইটিটি করে মাত্র ২৮০ লিটার গেইন (বেশি) পাওয়া গেছে।
তদন্তে অংশ নেয়া ও সহযোগিতা করা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩০ আগস্ট সকালে তদন্ত দল যমুনা ডিপোতে গিয়ে নানা ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করে। এরপর দুপুর দুটার দিকে ১ নং ট্যাংক থেকে ৭ নং ট্যাংকে প্রায় ২ লাখ লিটার তেল আইটিটি করে। তখন ট্যাংকের তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আইটিটির পর হিসেব করে দেখা ২৬০ লিটার লস (কম) হয়েছে। এরপর দুপুর আড়াইটায় ১ নং ট্যাংক থেকে ৮ নং ট্যাংকে প্রায় ২ লাখ লিটার তেল আইটিটি করা হয়। তখন ট্যাংকের তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে আইটিটির পর হিসেব করে ২৮০ লিটার তেল গেইন (বেশি) পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে এমটি এনএস প্যারেডে আসা ২৭ হাজার ৪৫১ লিটার তেলের আইটিটি হিসেব করে প্রায় ১৪০ লিটারের মতো গেইন হয়েছে, যা স্বাভাবিক হিসেবে উল্লেখ করেন তদন্তে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
অথচ এইভাবে গত ১০ আগস্ট যমুনা ডিপোর ডলফিন জেটিতে আসা মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমটি পামির থেকে গুপ্তখাল ডিপোতে খালাসের পর প্রায় ৭৮ হাজার লিটার তেল বেড়ে গেলে তোলপাড় শুরু হয়। ডিপোর সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা বাড়তি পাওয়া তেল তাপমাত্রাজনিত কারণে গেইন (অর্জিত) থেকে পাওয়া বলে দাবি করছেন। কিন্তু এ দাবি গ্রহণ করতে নারাজ বিপিসি। কারণ এর আগে তাপমাত্রাজনিত কারণে এত তেল একসঙ্গে গেইন হওয়ার রেকর্ড নেই। ফলে ডিপো ইনচার্জসহ কর্মকর্তাদের এমন দাবিকে যুক্তিহীন বলে মনে করছে বিপিসি। বিপণন প্রতিষ্ঠানের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতে, তেল হয়তো অন্য কোনো উৎস থেকে সংগৃহীত নতুবা তাপমাত্রাজনিত কারসাজিতে চুরি করে জমিয়ে রাখা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমটি পবির জাহাজটি রিলিজের পরে টার্মিনাল ম্যানেজারের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) জসিমউদ্দিন ও বি ও হিসেবে দায়িত্বে থাকা মঞ্জুর কাদের গং শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো ৭৮ হাজার লিটার ফার্নিস তেল আইটিটিতে গেইন দেখায়। নিজেদের দায় এড়ানোর জন্য তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে ৭৮ হাজার লিটার তেল গেইন হয়েছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা। এমটি পবির জাহাজ খালাসের পর ট্যাংক নং ০১ এ ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ট্যাংক নং ৭ এ পূর্বের রেকর্ড ছিল ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মাত্র ৪ ডিগ্রির ব্যবধানে ২১৮৩৩৪ লিটার তেল আইটিটিতে বৃদ্ধি হওয়ার কথা আনুমানিক ৫৩২ লিটার। কিন্তু ৭৮ হাজার লিটার তেল কিভাবে ট্যাংক নং ০১ থেকে ট্যাংক নং ৭ এ উদ্ধৃতি হলো সেটিই বড় প্রশ্ন।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. আবু হানিফ ইনকিলাবকে বলেন, তদন্তের স্বার্থে আমরা বন্ধের দিনেও যমুনা অয়েলের গুপ্তখাল ডিপোতে গেছি। সর্বশেষ আসা জাহাজের তেল আইটিটি (ইন্টারনাল ট্যাংক ট্রান্সফার) করেছি। বিষয়টি তদন্ত চলছে, তার আগে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তিনি বলেন, আমরা তদন্ত টিম বেশ কয়েকবার বসেছি। রিপোর্ট দিতে দেরি হচ্ছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে চেয়েছিলাম। আবারো সময় নেয়া হয়েছে। যেহেতু এটি একটি বড় ঘটনা, তাই তদন্ত টিম একটু সময় নিচ্ছে। রিপোর্ট জমা দিতে আরও এক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। জড়িতরা শাস্তি পাবেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।