পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঋতুবৈচিত্রের এই বাংলাদেশে নদী তীরের কাশফুল জানান দেয় শরৎ এসেছে। কিন্তু শরতের আগমনী বার্তা ইট-পাথরের ঢাকা শহরে বোঝার উপায় নেই। কখনো বোঝা গেলেও নগর জীবনের ব্যস্ততা উৎসব আয়োজন উপভোগ করা হয়ে ওঠে না। তবুও কিছু আয়োজন নগরবাসীকে এখনও জানান দিয়ে যায় ঋতুচক্রের আবর্তে প্রকৃতিতে এসেছে বর্ষা, বসন্ত কিংবা শীত। তেমনি একটি আয়োজন ‘শরৎ উৎসব-১৪২৬’।
ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এমনই সাজে সাজে প্রকৃতি, তাতে মন উড়ে যায় শুভ্র মেঘের নীল আকাশে। শরৎ তারুণ্যের হৃদয়কে নবযৌবন রাগে রাঙিয়ে দেয়। কাশফুল, শিউলী, কামিনী, দোলনচাঁপা, মল্লিকা, নয়নতারা, ছাতিম, সন্ধ্যামণি, শাপলা, মাধবীর আগমনে শরৎকাল হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। এমন শরতে রবীন্দ্রনাথের মতো আমরাও যেন বলে উঠি ‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ/আমরা গেঁথেছি শেফালী মালা/নতুন ধানের মঞ্জরি দিয়ে সাজিয়ে এনেছি বরণডালা।’ গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় ছুটির দিনে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী দিনভর আয়োজন করেছিল শরৎ উৎসব।
ঈদ পাথরের ঢাকা শহরে এ যেন আলোর ঝলকানি! নীলাকাশ সাধা মেঘ ভেসে যাচ্ছে; নদী তীরে সাদা কাশফুলে বাতাস দোল দিয়ে যায়। মহাকবি কালিদাস লিখেছেন ‘প্রিয়তম আমার ঐ চেয়ে দেখ/নববধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎকাল সমাগত।’
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে ঢাকা শহরের মানুষের ঘুম তখনো ভালো করে ভাঙেনি। পথ ছিল ফাঁকা। টিএসসিতে তারুণ্যের আড্ডা জমতে দেখা যায়নি। কিন্তু চারুকলায় শরতের নৈসর্গিক রূপবন্দনা ছিল উৎসবের সংগীতে, নৃত্যে। মঞ্চও সাজানো হয়েছিল শরতের মেঘ আর কাশফুলের ছবি দিয়ে। উৎসবে অংশ নিতে আসা দর্শকদের পোশাকেও ছিল শরতের নীল-সাদার প্রভাব। তরুণীরা পরেছিলেন সাদা ও নীল রঙের নকশা করা শাড়ি। অনেকের খোঁপায় জড়ানো শিউলীর মালা। সব মিলিয়ে শরতের মতো উৎসবেও ছিল স্নিগ্ধ পরিবেশ।
চারুকলার বকুলতলায় এই আয়োজনে নৃত্য, গান, কবিতার পরিশীলিত পরিবেশনে শিল্পীরা যেমন শরৎকে বরণ করেছেন, ঠিক তেমনি উৎসবপ্রিয় দর্শকদের আন্তরিক অভিবাদনেও উঠে এসেছে শরতের প্রতি তাঁদের ভালো লাগা আর ভালোবাসার প্রকাশ। বকুলতলায় সকালের পর্বটি শেষ হওয়ার পরই চারুকলা অনুষদের বারান্দায় উৎসব উপলক্ষে শুরু হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু ‘শরৎ ঋতু’। উৎসবের বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ঘরে দেখেন। বিকেল সাড়ে চারটায় দ্বিতীয় পর্বে দলীয় গান পরিবেশন করেন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, উদয়ন, উজান, সুর সাগর ললিতকলা একাডেমি ও সমস্বরের শিল্পীরা। দলীয় নৃত্য পরিবেশনে অংশ নেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, স্বপ্ন বিকাশ কলাকেন্দ্র, স্কেচ, অঙ্গীকার, ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্র ও বেনুকা ললিতকলা একাডেমির শিল্পীরা। দলীয় আবৃত্তি করেন মুক্তধারা সংস্কৃতি ও আবৃত্তি চর্চাকেন্দ্রর শিল্পীরা। একক গান পরিবেশন করেন মহাদেব ঘোষ, মহিউজ্জামান চৌধুরী, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, সরদার রহমত উল্লাহ প্রমুখ।
সকালে অসিত বিশ্বাসের সেতার বাদন দিয়ে শুরু হয় উৎসবের কার্যক্রম। এরপর সুরবিহারের শিল্পীরা ‘আমার নয়ন- ভুলানো এলে’ গানটি সমবেত কণ্ঠে গানটি পরিবেশন করেন। আয়োজক সংগঠন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা শোনান ‘দেখো দেখো, দেখো, শুকতারা আঁখি মেলি চায়’ গানটি। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা শোনান ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী’ গানটি। এ সময় গান শোনান বিশ্বজিৎ রায়, সালমা আকবর, অণিমা রায়, তানভীর সজিব, রত্না সরকার, আবিদা রহমান, মাহমুদা মৌমিতা।
অনুষ্ঠানের মাঝে মঞ্চে শরৎ-কথন পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি রবীন্দ্রগবেষক ও লেখক হায়াৎ মামুদ।
ইট-কাঠের রাজধানী শহরে নেই শুভ্র কাশবন। দালানে দালানে আকাশ ঢাকা। নীল আকাশজুড়ে তুলার মতো পেঁজা মেঘের ভেসে বেড়ানোর দৃশ্য চোখে পড়ে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় দিনব্যাপী শরৎ উৎসবে নগরজীবনে শরতের স্নিগ্ধতা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করার সুযোগ করেছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।