Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঝুঁকি এড়াতে নতুন সেতু হচ্ছে

বয়সের ভারে ন্যুব্জ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৭:১১ এএম

একশ’ বছরের পুরনো দেশের বৃহৎ রেলসেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ঝুঁকি এড়াতে নতুন রেলসেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রেলওয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে দীর্ঘদিন হয়ে যাওয়ায় ক্রমান্বয়ে দেবে যাচ্ছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। বর্তমান রেলসেতুটি রয়েছে প্রচÐ ঝুঁকিতে। ঝুঁকি এড়াতে কম সময়ের মধ্যে নতুন একটি রেলসেতু নির্মাণ করা হবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মনিরুজ্জামান মনির এ তথ্য জানান।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, উপনিবেশিক শাসনামলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি কল্পে ১৯১০-১১ সালে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ অবিভক্ত ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি উদ্বোধন করেন। তাঁর নামেই ব্রিজটির নামকরণ করা হয় ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’। তবে ব্রিজটি দেশের মানুষের কাছে পাকশি ব্রিজ নামেও পরিচিত। ব্রিজটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (৩ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৪ রুপি)। ১৫টি স্প্যানের এই ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৫ হাজার ৯৪০ ফুট। ব্রিজ দিয়ে শুধু ট্রেন চলাচলের জন্য পাশাপাশি দুটি ব্রডগেজ রেললাইন রয়েছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ভারবহন ক্ষমতা ১ হাজার ৯২৭ টন। এই ব্রিজটি খুলনা থেকে পার্বতীপুর হয়ে চিলাহাটি পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথকে সংযুক্ত করেছে। বর্তমানে প্রতিদিন এই ব্রিজের উপর দিয়ে ২৪টি ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে আন্ত:নগর ১৬টি, মেইল ট্রেন ৬টি এবং লোকাল ২টি। এছাড়া নিয়মিত তেল ও মালবাহী ট্রেনও চলাচল করে এই ব্রিজের উপর দিয়ে। এছাড়াও পায়ে হাঁটার পথ রয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রিজটিতে বোমা মারা হয়। এতে ১২ নম্বর স্প্যানটির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে তা মেরামত করা হয়।
রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বর্তমান সেতু থেকে এক হাজার ফুট দূরে অনুরূপ নতুন একটি সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি নির্মাণ করতে প্রায় পাঁচ বছর সময় লাগবে। কারিগরি সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরই রেলসেতু নির্মাণের মূল প্রকল্প নেয়া হবে। নতুন রেলসেতু নির্মাণের জন্য বিশদ নকশাসহ সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতে ১৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ দেবে এডিবি।
পদ্মা নদীর ওপর উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের সংযোগ রক্ষাকারী এই রেলসেতুটি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী রেলওয়ে স্টেশনের কাছাকাছি অবস্থিত। সেতুটি পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলাকে সংযুক্ত করেছে। নতুন রেলসেতুর অবস্থান ও দৈর্ঘ্য একই হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের অনুরূপ নতুন রেলসেতু নির্মাণের জন্য সমীক্ষা প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ‘টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স (টিএ) ফর রেলওয়ে কানেকটিভিটি ইমপ্রæভমেন্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটিটি (আরসিআইপিএফ)’ প্রজেক্টের আওতায় এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে রেল সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের বয়স ১০০ বছর পেরিয়ে গেছে। বয়সের ভারে সেতুটি বসে যাচ্ছে। তাই দ্রæততম সময়ের মধ্যে নতুন রেলসেতু নির্মাণ করা হবে। রেলসেতুটি নির্মাণের আগেই আমরা সম্ভাব্যতা যাচাই করব। তিনি আরো বলেন, আমরা রেলপথে কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। বিদ্যমান হার্ডিঞ্জ ব্রিজকে যত দ্রæত মুক্ত করতে পারব ততই মঙ্গল। বর্তমান হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৭৯৮.৩২ মিটার। নতুন রেলসেতুর দৈর্ঘ্যও একই হবে। এর ওপর দুটি ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য একটি ইতিহাস। একটি অমর কীর্তি। ব্রিটিশ আমলে এই ব্রিজটি নির্মাণের সূত্র ধরে হাজার হাজার মানুষের রেলওয়েতে চাকরির সুযোগ হয়। সে সময় ২৪ হাজার লোকবল দিয়ে পদ্মা নদীর উপর এই ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এই ব্রিজ দিয়ে চাকরি শুরু করেছিলেন এমন অনেকেই এখনও জীবিত আছেন। তাদেরও একজন অবসরপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার মো. ময়েজ উদ্দিন বলেন, এই ব্রিজ আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ, আমাদের গৌরব। পাকিস্তান আমলে ব্রিজটি মাঝে মধ্যে পরিষ্কার করে ধোয়ামোছা করা হতো, রঙ করা হত। কিন্তু এখন তা দেখা যায় না। একারণে এর গুণগত মান নষ্ট হওয়া নিয়ে আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি। তবে পশ্চিমাঞ্চল পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম বলেন, সেতু বিভাগ থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য করণীয় সবকিছুই নিয়মিত করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ব্রিজের স্থায়িত্ব আরও কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়েও রেল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় সকলেই খুশি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ