পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধান অপরাধী ‘নিলাভান্নান’ নভেম্বরে কীভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসেন
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ফেডারেল রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৮শ’ কোটি টাকা চুরি হয়েছে মাত্র ৫ ঘন্টায়। আর এই চুরিতে হ্যাকারদের পর্যবেক্ষণ ছিল দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে সুইফটের কাছে লেনদেনের তথ্য চেয়েও পাওয়া যায়নি। ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য দিয়েছে। রিজার্ভ চুরির সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যারা কম্পিউটারের দায়িত্বে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশও করা হয়েছে প্রতিবেদনে। রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই চলছে নানামুখি তদন্ত। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি জমা দিয়েছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন। সেটি হাতে পেয়ে তাৎক্ষণিভাবে কিছু না বললেও, শিগগিরই তা প্রকাশের কথা জানান অর্থমন্ত্রী। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্ব ৩ সদস্যের ওই কমিটি প্রথমে একটি অন্তবর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে সেটি চূড়ান্ত হওয়ার আগে নিয়োগ দেয়া হয় আরও ৩ জন আইটি বিশেষজ্ঞকে। যাদের উদঘাটিত তথ্যেই বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পৃক্ততার তথ্য। গেল ৪ঠা ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৩টা, মাত্র ৫ ঘণ্টার মধ্যে চুরি হয় রিজার্ভের ৮০০ কোটি টাকা। তবে হ্যাকাররা চুরির প্রস্তৃতি নেয় আরও আগে। কম্পিউটারের নানা তথ্য পর্যালোচনায় জানা গেছে জানুয়ারি থেকে শুরু করে চুরির দিন পর্যন্ত অনলাইনে অর্থ লেনেদনের প্রতিষ্ঠান সুইফটের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটারে পাঠানো হয় বিভিন্ন ধরনের সিগন্যাল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হয় এসব সিগন্যাল বোঝেননি, না হয় গোপন করেছেন। এসব তথ্য দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে তাদের শাস্তির। ৪ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কম্পিউটার লগ শিটের তথ্য চাওয়া হলেও, সুইফট তা দেয়নি বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন হ্যাকাররা প্রতিনিয়ত স্মার্ট হচ্ছে। তাই তাদের সাথে পাল্লা দিতে দরকার অত্যন্ত দক্ষ জনবল। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নাম আসায়, এটি পুরোপুরি প্রকাশ করা হবে কিনা তা নিয়ে খানিকটা সংশয়ে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে বিদেশী এক সাইবার অপরাধী জড়িত থাকার বিষয় উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। সুইফটের প্রতিনিধি হিসেবে গত নভেম্বরে ‘নিলাভান্নান’ নামের একজন ব্যক্তি বাংলাদেশ ব্যাংকে আসে। ওই ব্যক্তিকে প্রতিবেদনে ‘ভূয়া’ বললেও সে সময়ে ওই ব্যক্তি কার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছিলেন সে বিষয়ে কোন ক্লু বের করতে পারেনি তদন্ত কমিটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ‘নিলাভান্নান’ কিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসেন, কার সাথে যোগাযোগ করে এসেছেন তা খতিয়ে দেখা উচিত। একই সঙ্গে তখন সবকিছু যাচাঁই-বাছাঁই কেন করা হয়নি। আর কেনই বা এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা, গাফিলতি এ রকম শব্দ দিয়ে দায় চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারা প্রশ্ন রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের যে কর্মকর্তাদের সাথে ‘নিলাভান্নান’ যোগাযোগ করেছিলো তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। কার নির্দেশে নিলাভান্নান বাংলাদেশ ব্যাংকে কাজ করেন। এগুলো উঠে আসলেই রিজার্ভ চুরির আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তারা।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সুইফটের ‘ভুয়া’ প্রতিনিধি সেজে বাংলাদেশে এসেছিলেন ‘নিলাভান্নান’ নামের একজন ব্যক্তি। গতবছর নভেম্বরে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে আসেন। ওইসময় তার হাতে চলে যায় সুইফটের মূল্যবান পাসওয়ার্ড। আর তাই রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নিলাভান্নানকে প্রধানতম অপরাধী বলে চিহ্নিত করেছে ফরাস উদ্দিনের তদন্ত কমিটি।
এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির খবর উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন করার বিষয়টিকে গর্হিত অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে কমিটি। এজন্য তৎকালীন গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদেরকে দায়ী করা হয়েছে। যদিও এর দায়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা গভর্নর ড. আতিউর রহমান। একই সঙ্গে দুই ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম ও নাজনীন সুলতানাকে অব্যহতি দেয়া হয়। যদিও আরেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন।
পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টে বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের ৬ কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। তারা নিজেরা জেনে না জেনে অপরাধীদের সহায়তা করেছেন। এসব কর্মকর্তা অসাবধানতাবশত নিজেদের পাসওয়ার্ডের গোপন তথ্য সাইবার অপরাধীর হাতে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু পাসওয়ার্ড তুলে দেয়ার মূলে যে গোষ্ঠীটি কলকাঠি নেড়েছে তাদেরকে উ˜্ঘাটন করা হয়নি।
এদিকে রিজার্ভ চুরির পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে সব কর্মকর্তাদের অবহেলা বা দায়িত্বহীনতার কথা বলা হচ্ছে এখনো তাদেরকে দিয়েই একই বিভাগে কাজ করানো হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সামনে হাজির হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এসব কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ করানোয় আরও বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দায়িত্বে অবহেলা, গাফিলতি ইত্যাদি শব্দ দিয়ে রিজার্ভ চুরিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের কিভাবে দায়ী করা হয়। এ বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রদানে গভর্নরের সাথে কাউন্সিল কথা বলেছে। অচিরেই বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরবে বলে জানিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।