Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৌচাক-মালিবাগ সড়কের বেহাল দশা : দুর্ভোগ চরমে

প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : একপশলা বধষ্টিতেই রাজধানীর সড়কের অবস্থা বেহাল। রাস্তায় নেমেই নগরবাসীকে পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। বিশেষ করে রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ ও মৌচাক এলাকার রাস্তার অবস্থা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না, কী করুণ অবস্থা হয়ে আছে। ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের ধীরগতির জন্য এ রাস্তা দিয়ে এখন জনসাধারণের চলাচল অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবুও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছে।
মালিবাগ-মৌচাক সড়কের বেহালদশা নিজ চোখে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে বুধবার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সড়কটি মেরামত করে রাস্তা যান চলাচলের উপযোগী করা এবং পানি সরিয়ে দিতে তমা কন্সস্ট্রাকশন ও ঢাকা ওয়াসাকে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
রাস্তার বেহাল দশার কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাস্তায় পানি জমে যান চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ার জন্য ওয়াসা এবং ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজে থাকা তমা কনস্ট্রাকশন দায়ী। তারা রাস্তা ঠিক না করায় চূড়ান্তভাবে তাদের সাত দিনের সময় দেয়া হলো। এই সাত দিনের মধ্যে রাস্তা উপযোগী করে দিতে হবে, তা না হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্ত্রীর নির্দেশের প্রায় ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও রাস্তা মেরামত কাজ শুরুর কোনো আলামত চোখে পড়েনি। বরং দিন দিন দৃশ্য আরো করুণ হয়ে উঠছে।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীতে একপশলা বৃষ্টিতেই ওই এলাকাসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যায়। শহরের প্রধান সড়কগুলোসহ পাড়া-মহল্লার অলিগলির রাস্তাঘাটেও পানি জমে কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। এ কারণে গতকাল সরকারি ছুটির দিন থাকলেও রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয় যানজট। গাড়িতে উঠলে যানজট, হাঁটতে গেলে কাদাপানি ও খানাখন্দকে ভরা রাস্তায় জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীসহ বেসরকারি অফিস-আদালতগামী মানুষকে কাদাপানি ও যানজট উপেক্ষা করেই বিকেলে ঘরে ফিরতে হয়েছে।
শনিবার সকালে রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায় একপশলা বৃষ্টি হয়। এ কারণে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে রাস্তায় পানি জমে থাকায় গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে অচল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর গুলিস্তান, সিদ্দিক বাজার, বাবুবাজারসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সড়কে পানি থৈ থৈ করছে। পুরাতন ও অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে না পেরে মূল সড়ক ও অলিগলিতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়ে। এছাড়াও মুগদাপাড়া, মানিকনগর, মতিঝিল, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, টাউন হল, আসাদ গেট, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার, গুলশান, বনানী, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, নয়াপল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
টানা না হলেও গত কিছু দিন ধরেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম না এলেও তারই প্রস্তুতি চলছিল প্রকৃতিতে। রৌদ্র ছায়ার খেলায় পড়ে কখনো কিছুটা স্বস্তিকর আবার কখনো অস্বস্তিকর গরমে পড়ে অতিষ্ঠ। কিন্তু শুক্রবারের রোদের তেজ অস্বস্তিটা একটু বেড়ে যায়। রোজাদারদের কষ্টটা ছিল একটু বেশি। শুক্রবার দিনের পর রাতেও তাপমাত্রা ছিল প্রচ- গরম। গতকাল শনিবার সকালটাও ছিল গুমোট গরমে অস্বস্তিকর।
কিন্তু সকাল পৌনে ১১টার দিকে দৃশ্যপট পাল্টে যায়। মেঘে মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। ঘড়ির কাঁটা ১১টা পেরোতেই বৃষ্টি ছুঁয়ে যায় তপ্ত প্রকৃতি।
ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলায় এ এলাকার বেশ কয়েকটি রাস্তার অবস্থা বেহাল। তাই এ এলাকার রাস্তাগুলোতে যানজট সকাল-দুপুর, রাত-দিন সবসময় লেগেই থাকে। এ থেকেই শহরজুড়ে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণেই রাজধানীর যানজট এখন সাপ্তাহের সাত দিনই থাকে। বিশেষ করে কর্মদিবসের শুরুর দিন রোববার, প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ে অফিস করেন সোমবার আর কর্মদিবসের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এ তিন দিন রাজধানীর রাস্তায় ভয়াবহ যানজটে সৃষ্টি হয়। এ সময় নগরবাসীকে রাস্তায় নেমেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
শনিবার দুপুরের দিকে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের প্রধান ফটকের সামনে, মহাখালীর আমতলী মোড় পর্যন্ত রাস্তার অর্ধেকজুড়ে ও বনানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, হালকা বা মাঝারি বৃষ্টিতেই ফটকের সামনে পানি জমে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি জমে থাকে। এতে তাদের কলেজে প্রবেশ করতে ও বের হতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়।
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সালমা বলেন, বেশি বৃষ্টি হলে তো ফটকের আশপাশে দাঁড়ানোই যায় না। অনেক সময় পানি সরে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হয়। আর পানিও খুব নোংরা। পা চুলকায়। কলেজের সামনে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় ওই সড়কে যাতায়াতকারী অনেকেও কলেজ ও এলাকার জনপ্রতিনিধির দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রসঙ্গ তুলে সমালোচনা করেন।
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের দুর্ভোগের কথা কেউ ভাবেন না। ড্রেনের পচা পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানি মিশে খুবই নোংরা হয়। আর সেই নোংরা পানির মধ্য দিয়ে কলেজে প্রবেশ বা বের হতে হচ্ছে।
এদিকে রাজধানীর মহাখালী আমতলী মোড় থেকে ওয়্যারলেস গেট পর্যন্ত পুরো সড়কের কোল ঘেঁষে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই তাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বৃষ্টি শেষ হলেও পানি জমে থাকে।
বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় মহাখালীর এ প্রধান সড়কে পানি জমে থাকলে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশ সমস্যায় পড়তে হয় বলেও জানান তারা।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শান্তিনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ওই এলাকার প্রধান সড়কটি পানিতে পুরো ডুবে আছে। একই সঙ্গে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলাতে এ এলাকায় গাড়ি যেন থেমে আছে। পানি শুধু সড়কেই নয়, বিভিন্ন জায়গায় ফুটপাথেও পানি উঠে একাকার হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন অফিস আদালতে যাওয়া মানুষ।
বৃষ্টির কারণে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় থেকে মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, রাজারবাগ, শান্তিনগরসহ আশপাশ এলাকায় দেখা দেয় তীব্র যানজট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৌচাক-মালিবাগ সড়কের বেহাল দশা : দুর্ভোগ চরমে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ