পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বঙ্গবন্ধু টানেল আজ আর স্বপ্ন নয়। টানেলের অভূতপূর্ব নির্মাণ কার্যক্রম পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর তলদেশ ভেদ করে দৈত্যাতার খননযন্ত্র টানেল বোরিং মেশিনের (টিবিএম) সাহায্যে প্রতিদিনই এগুচ্ছে খনন কাজ। একটু একটু করে টানেলের আকার অবয়ব হচ্ছে দৃশ্যমান। বাংলাদেশে অতীত-বর্তমানে বড়সড় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পবহরের সহযোগী অকৃত্রিম বন্ধুরাষ্ট্র চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এই মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু টানেলের মূল খনন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ চৌধুরী গতকাল শনিবার দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এ যাবৎ প্রকল্পের সার্বিক বাস্তবায়ন কাজে ৪৫ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে। টানেলের ৩৬০ মিটার অংশে একে একে ১৮০টি রিং বসানো হয়েছে। নদীর তলদেশে তাও আবার মাটির নিচের কাজ। তাই টানেল নির্মাণ কাজের ধরণও ভিন্ন। সাগরের জোয়ার, বৃষ্টিসহ প্রতিক‚ল আবহাওয়া চিন্তা মাথায় রেখেই খনন কাজ পরিচালনা করতে হয়। সেতু কর্তৃপক্ষ আশা করছে নির্মাণ কাজ এই গতিতে এগিয়ে গেলে ২০২২ সালের মধ্যে টানেল সম্পন্ন করা যাবে।
বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মিত হলে শুধু চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি তথা জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জনের স্বপ্নপূরণ হবে এমনটি প্রত্যাশা ফুটে উঠেছে। টানেলটি নির্মিত হলে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের দাঁড়াবে হংকং-এর আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিনিয়োগ-শিল্পায়ন, পর্যটন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, খনিজ, কৃষিজ, সামুদ্রিক ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণসহ বিভিন্ন খাত উপখাতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। রাজস্ব জোগান বৃদ্ধি পাবে। চীন পর্যন্ত সরাসরি সড়ক পথে যোগাযোগের দুয়ার খুলে যাবে।
কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মাণাধীন বহুলেন সড়ক-টানেল তথা বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রকল্প ঋণ হিসেবে চায়না এক্সিম ব্যাংক ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকার অর্থায়ন করছে। অবশিষ্ট অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি)। বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ মেগাপ্রকল্পে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারের বরাদ্দ এক হাজার ৩৪৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। বিগত ২০১৮-১৯ সালে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ১৭৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বিগত ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ মেগাপ্রকল্পের যৌথভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহু লেনবিশিষ্ট সড়ক-টানেল নির্মাণ প্রকল্প শীর্ষক মেগাপ্রকল্পের চলমান বিশাল নির্মাণ কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়, চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেলের নির্মাণ কাজ করছে। চার লেনের দুইটি টিউব থাকছে টানেলে। এটি হবে বাংলাদেশের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বাধুনিক টানেল। ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত নদীর তলদেশ দিয়ে হচ্ছে মূল টানেল। টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব অংশে প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজ নির্মাণের কাজও পাশাপাশি এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পের জন্য ৩৮১ একর জমির বেশিরভাগই অধিগ্রহণ করে ঠিকাদারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট জমির অধিগ্রহণ শিগগিরই সম্পন্ন হবে।
কারিগরি সমীক্ষার ‘সি’ অ্যালাইনমেন্ট অনুসারে টানেলের অবস্থান। এর প্রবেশ মুখ নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে। আর দক্ষিণ অংশে টানেলের বহির্গমন পথ কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাশে অবস্থিত আনোয়ারা উপজেলায় সিইউএফএল-কাফকো’র পাশে।
বন্দরনগরীর পতেঙ্গায় আউটার রিং রোডের শেষ দিকে কর্ণফুলী মোহনার পাড়ে এবং আনোয়ারার সিইউএফএল-কাফকো অংশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের কর্মব্যস্ততা চলছে প্রতিদিনই। নদীর তলদেশ দিয়ে চীনে নির্মিত টিবিএম’র সাহায্যে মূল টানেলের খনন কাজ এগিয়ে চলেছে। মাঠে তদারক করছেন দেশীয় এবং চীনের প্রকৌশলী দল। পতেঙ্গায় কর্ণফুলী মোহনা থেকে আনোয়ারা অভিমুখে প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৬ মিটার করে টানেল খননের কাজ করা হচ্ছে। এ যাবৎ টানেলের ৩৬০ মিটার অংশে ১৮০টি রিং বসানো হয়েছে।
আটটি আরসিসি পাটাতন যোগে করে দুই মিটার আকৃতির একেকটি রিং তৈরি করা হয়। খনন কার্যক্রমের সাথে সাথে এই রিংগুলো স্থাপনের মধ্যদিয়ে টানেলের অবয়ব তৈরি হচ্ছে নদীর তলদেশে। যা এদেশর জন্য এক বিস্ময়কর এবং অভ‚তপূর্ব কারিগরি বা প্রকৌশল কার্যক্রম। নদীর তলদেশে ৯৪ মিটার দীর্ঘ এবং ২২ হাজার মেট্রিক টন ওজনবিশিষ্ট টানেল বোরিং মেশিনের সাহায্যে খনন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে সতর্কতার সঙ্গে। টানেলের নির্মাণ কাজ চলছে ‘শিল্ড ড্রাইভেন’ পদ্ধতিতে। টানেলের ভেতরে-বাইরে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে কর্ণফুলীর উভয় দিকে ৩৩ কেভির দুটি নিজস্ব সাব-স্টেশন ও সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে।
কর্ণফুলীর তলদেশে মাঝ বরাবর অংশে প্রায় ১৫০ ফুট গভীরে টানেলের টিউব স্থাপন করা হবে। নদীর তলদেশের আরো ৫০ থেকে ৬০ ফুট নিচে নির্মিত হবে টানেল বা সুপরিসর সুড়ঙ্গ-সড়ক। দুটি টিউবে আলাদাভাবে টানেল তৈরি হবে। প্রতিটি টিউবে ডাবল লেইন করে চারটি লেইনে যানবাহন চলাচল করবে। উভয় টিউবের সঙ্গে পৃথকভাবে তিনটি স্থানে সংযোগ সড়ক থাকবে। এরফলে যে কোনো জরুরি সময়ে প্রয়োজনে এক টিউব থেকে আরেক টিউবে গাড়ি চলাচল করতে পারবে।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মতোই বর্তমানে কর্ণফুলীর বঙ্গবন্ধু টানেলের বিশাল পরিসরের নির্মাণ কর্মকান্ড এখন দৃশ্যমান। এরফলে বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর মাঝে বিপুল প্রত্যাশার সঞ্চার হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু টানেল প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী সুফল বয়ে আনবে। এটি দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বড়সড় পদক্ষেপ। এ টানেল নির্মিত হলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে প্রসারিত হবে। সেখান থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে। এর পাশাপাশি সমুদ্র তীর দিয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। টানেল নির্মাণের মধ্যদিয়ে দেশের অর্থনীতির জন্য ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।
চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল উন্নতির সাথে সাথে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অগ্রগতি আসবে। কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে বড় ধরনের উন্নতি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী পরিকল্পনার অন্যতম দিক হচ্ছে কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।