Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

হাত বাড়ালেই অস্ত্র

চট্টগ্রামে পাহাড়-জঙ্গলে গোপন কারখানা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বৃহত্তর চট্টগ্রামে দেশি অস্ত্রের ছড়াছড়ি। হাত বাড়ালেই মিলছে এলজি, বন্দুক, কাটা-রাইফেল। পাহাড়, জঙ্গলে সন্ত্রাসীদের গোপন ডেরায় তৈরি হচ্ছে অস্ত্র। এসব অস্ত্র সিন্ডিকেটের হাত ধরে চলে যাচ্ছে সারা দেশে। ব্যবহার হচ্ছে ছিনতাই, ডাকাতি, দস্যুতা, ভূমি দখলসহ নানা অপরাধে। মাঝে মধ্যে র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়। উদ্ধার হয় অবৈধ অস্ত্রের কারখানাও। এরপরও বন্ধ হচ্ছে না অস্ত্র তৈরি। কারাগার থেকে বের হয়ে ফের নতুন উদ্যমে অস্ত্র তৈরির কাজে নেমে পড়ছে কারিগররা।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কক্সবাজারের মহেশখালীতে মাত্র চার দিনের ব্যবধানে পৃথক দুটি অভিযানে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র। এর আগে ফটিকছড়ির ভূজপুরে র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত এক অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পাওয়া যায় ভয়ঙ্কর একে-২২ রাইফেল। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের কারখানায় তৈরি হচ্ছে দেশি অস্ত্র। সীমান্ত পথে আসছে বিদেশি হালকা ও ভারী অস্ত্র। পাবর্ত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী গ্রুপের হাত ধরেও অস্ত্র প্রবেশ করছে দেশে। ফলে অস্ত্রের আনাগোনার সাথে অপরাধীদের দৌরাত্ম্যও বাড়ছে। গত ২০ মাসে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ৪২৫টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র। এ সময়ে ৬৪টি ম্যাগজিন, ১১ হাজারের বেশি গুলি ও কার্তুজ উদ্ধার হয়। মহানগর ও জেলা পুলিশের হাতেও ধরা পড়েছে সমান সংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি। র‌্যাব পুলিশের অভিযানে প্রতিনিয়ত অস্ত্র, গুলি উদ্ধারের ঘটনা প্রমাণ করে অবৈধ অস্ত্রের সংখ্যা বাড়ছে। সেসাথে বাড়ছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারও। চুরি, ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় অস্ত্র ব্যবহার করছে অপরাধীরা।

ডাকাত ও দস্যু দলের সদস্যরা অস্ত্র ব্যবহার করছে। সম্প্রতি নগরীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে ১১ জন আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় অস্ত্র ও গুলি। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে, রাতের আঁধারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দরজা ও সার্টার ভেঙে লুটপাট করে তারা। আর এ সময় কেউ বাধা দিতে আসলে প্রতিহত করতে সাথে অস্ত্র রাখে তারা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ডাকাত দলের হাতে ভারী অস্ত্র দেখা গেছে। ডাকাতির সময় গুলিতে একাধিক খুনের ঘটনাও ঘটেছে। সড়ক, মহাসড়কে দস্যুতার ঘটনায় অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে।

উপকূলীয় এলাকায় নৌদস্যুদের অস্ত্রভান্ডারও এখন সমৃদ্ধ। সাগরে মাছধরা নৌকা ও ট্রলারে হানা দিয়ে অস্ত্রের মুখে জেলেদের জিম্মি করছে দস্যুরা। মাছ, নৌকা ও জাল লুটের পাশাপাশি মাঝি-মাল্লাদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাও ঘটছে। এসব অপরাধের ঘটনায় দস্যুরা ব্যবহার করছে দেশি-বিদেশি অস্ত্র। গত শুক্রবার বাঁশখালীর চাম্বলে র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মো. ইরান নামে এক নৌদস্যু নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে ২৬ রাউন্ড গুলিসহ ১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ১০ মামলার ওই আসামি তার সহযোগীদের নিয়ে সেখানে দস্যুতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আর এ কারণে অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ ছিল তাদের কাছে। র‌্যাব জানায়, বাঁশখালীসহ এ অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় তৎপর নৌদস্যু দলের কাছে দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে।

এর আগেও বাঁশখালীতে একাধিক ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর উদ্ধার হয় বিপুল সংখ্যক অস্ত্র। গতকাল সোমবার কক্সবাজারের মহেশখালী থানার মাতারবাড়ির চাইরার ডেইল এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নুরুল কাদের রানা (৩৪) নামে এক নৌদস্যু নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তলসহ ৭টি অস্ত্র ও ৬৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে, জানিয়েছে র‌্যাব। এর আগে দ্বীপ উপজেলা স›দ্বীপেও অস্ত্রকারখানা এবং বিপুল সংখ্যক দেশি অস্ত্র উদ্ধার হয়।

বাঁশখালী, মহেশখালী ও পেকুয়া থেকে একাধিকবার অবৈধ অস্ত্রকারখানা উদ্ধার করে র‌্যাব। এসব কারখানা থেকে দেশি অস্ত্র তৈরির বিপুল সরঞ্জামও উদ্ধার হয়। অস্ত্রের কারিগররা গ্রেফতার হলেও পরে অনেকে জামিনে বের হয়ে যায়। জানা যায়, কারাগার থেকে বের হয়ে নতুন নতুন এলাকায় তারা অস্ত্রকারখানা গড়ে তোলে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে দুর্গম এলাকায় গড়ে ওঠা গোপন কারখানায় তৈরি অস্ত্র চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। বিদেশি অস্ত্রের তুলনায় দাম কম হওয়ায় এসব অস্ত্রের চাহিদাও বেশি।

চট্টগ্রাম মহানগরী এবং জেলায় অস্ত্রধারীদের দৌরাত্ম্য দীর্ঘদিন ধরে। তুচ্ছ ঘটনায় অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। ছিনতাই ও দস্যুতার ঘটনায়ও অস্ত্রহাতে নামছে সন্ত্রাসীরা। সরকারি দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিরোধে সংঘাত, সহিংসতায়ও অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে তাদের প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা গেছে। নগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, পুলিশি অভিযানে প্রায় অবৈধ অস্ত্র ও গুলি ধরা পড়ছে। কোন সংঘাত, সহিংসতার ঘটনায় অস্ত্রের ব্যবহার হলে তা উদ্ধারের চেষ্টা করছে পুলিশ।



 

Show all comments
  • MD Imran ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:১২ এএম says : 0
    Obijan chay
    Total Reply(0) Reply
  • Aian Linkon ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:১৪ এএম says : 0
    কিছু মুষ্টিমেয় পাহাড়ি জংগির কারনে আজ পাহাড়িদের এত দুর্দশা। ওদেরকে ধরে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক। আর এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী ব্যপক ভুমিকা পালন করতে পারবে বলে আমি মনে করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Sakib hasan ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:১৫ এএম says : 0
    পাহাড়ি সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে কিছু কতিপয় সন্ত্রাসী বাহিনী। তারা বুঝাতে চাচ্ছে যে তারা বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের মধ্যে পরে না। তাই এইসব কর্মকাণ্ড যে বা যারা করে যাচ্ছে তাদেরকে ধরার জন্য সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rupali Rangunia ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:১৬ এএম says : 0
    দেশের সবাইকে সচেতন হতে হবে, পাহাড়িদের অবৈধ কোন কর্মকান্ড দেখার সাথে সাথে প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jasim Uddin ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:১৬ এএম says : 0
    সন্ত্রাস দেখা মানি এক কথায় যাকে বলে "ক্রস ফায়ার"
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অস্ত্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ