Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুলিশ আইন-কানুন মেনে কাজ করলে দেশে এত অপরাধ ঘটতো না

আইনজীবীদের অভিমত

প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শেখ জামাল : বেআইনী পথে আইন প্রতিষ্ঠা হয় না। পুলিশ আইন-কানুন মেনে কাজ করলে দেশে এত অপরাধ ঘটতো না বলে মন্তব্য করেছেন আইনজ্ঞরা। এই বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহ্দীন মালিক বলেছেন, পুলিশের দেশের আইন-কানুন মেনে চলা উচিত। পুলিশকেও মনে রাখতে হবে তারা আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, আপিলের রায় অনুযায়ী ৫৪ ও ১৬৭ ধারা পুলিশকে বাধ্যতামূলকভাবে পালন করতে হবে। পুলিশের অযোগ্যতা অদক্ষতার কারণে দেশে গুম, হত্যাসহ খুন-খারাবি বেড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে দেয়া অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে না। অস্ত্র উদ্ধার না করা হলে দেশের পরিণতি আরো ভয়াবহ হবে। মানবাধিকারকর্মী এডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, দেশে অবৈধ অস্ত্রে সয়লাব। এই অস্ত্র উদ্ধারে সরকারের কঠোর হতে হবে।
এদিকে সাদা পোশাকে গ্রেপ্তার গুম হত্যা নির্যাতন বন্ধে গত ২৪ মে সুপ্রিম কোর্টের রায় দিয়েছেন। ফৌজদারি কার্যবিধির বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার (৫৪ ধারা) ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ধারা (১৬৭ ধারা) প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা দেওয়ার কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায়ের ফলে আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেওয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবে না। কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। এছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কর্তৃক গুম, হত্যা ও নির্যাতন বন্ধে সতর্ক করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
অপরদিকে গতকাল জঙ্গি ও সন্ত্রাসী ধরতে বিশেষ অভিযানের প্রথম রাতে আট শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত, পরোয়ানা, নিয়মিত মামলার আসামি, মাদক বিক্রেতা ও চাঁদাবাজ রয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে পুলিশ সদরদপ্তর সূত্র জানায়, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে রংপুরে বিভিন্ন মামলায় ১৬২ জন, সিলেটে ১৫১ জন, দিনাজপুরে ১০০ জন, টাঙ্গাইলে ৬৮ জন, যশোরে ৬৮ জন, কুষ্টিয়ায় ৫৭ জন, রাজশাহীতে ৩১ জন, নাটোরে ২৭ জন, মাগুরায় ২৪ জন, ঝিনাইদহে ১৭ জন এবং নোয়াখালীতে পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়। এ ছাড়া আরো কয়েকটি জেলায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের নিজ নিজ জেলার আদালতে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এর অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকাতেও রাস্তার মোড়ে মোড়ে তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সকাল থেকে ‘অনেককে আটকের কথা জানালেও সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বলেননি। পুলিশ সদরদপ্তর বলছে, শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান আগামী সাত দিন চলবে।
চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী খুন হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এই ‘সাঁড়াশি অভিযান’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়।
এই বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহ্দীন মালিক ইনকিলাবকে বলেন, বেআইনী পথে আইন প্রতিষ্ঠা হয় না। পুলিশ আইন-কানুন মেনে কাজ করলে দেশে এত অপরাধ ঘটতো না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইন অনুযায়ী কাজ করে না। এ কারণেই খুন-খারাবি বেড়ে যায়। বাংলাদেশের পুলিশের দেশের আইন-কানুন মেনে চলা উচিত। আইন মেনে না চললে তারা একদিন অভিযুক্ত হবেন। তাদের বিচারও হবে। পুলিশকেও মনে রাখতে হবে তারা আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, ৫৪ ও ১৬৭ ধারা আপিলের রায় অনুযায়ী পুলিশকে বাধ্যতামূলকভাবে পালন করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনের আওতায় অভিযুক্ত হবেন। অভিযুক্ত হলে তার বিচার হবে। অবৈধ অস্ত্র থাকলে তা খুঁজে বের করতে হবে বলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের এই সাবেক সম্পাদক।
সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, পুলিশকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি থেকে থামানো যাচ্ছে না। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমনের নামে সাধারণ জনগণও গ্রেপ্তার হচ্ছে এবং হয়রানির শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশের অযোগ্যতা অদক্ষতার কারণে দেশে গুম, হত্যাসহ খুন খারাবি বেড়ে গেছে। পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে দেয়া অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে না। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনের আগে সরকার দলীয় প্রার্থীরা কর্মীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। এই অস্ত্র উদ্ধার না করা হলে দেশের পরিণতি আরো ভয়াবহ হবে। খুন খারাবি আরো বেড়ে যাবে। পুলিশের এখন প্রধান কাজ অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করা।
হিউম্যান রাইডস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মনজিল মোরসেদ বলেন, সারা দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য পুলিশ বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। সরকারের মনিটরিং করে দেখা উচিত পুলিশের এই অভিযানের নামে অসৎ উদ্দেশ্য পালন না করে। জঙ্গি দমনের নামে অসৎ উদ্দেশ্যে পুলিশ কাউকে হয়রানি না করে খেয়াল রাখতে হবে। দেশে অবৈধ অস্ত্রে সয়লাব। এই অস্ত্র উদ্ধারে সরকারের কঠোর হতে হবে।
হাইকোর্টের নির্দেশনা হলো- ক. আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেওয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবে না। খ. কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। গ. গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে। ঘ. বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেপ্তার ব্যক্তির নিকট আত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে হবে। ঙ. গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে তার পছন্দ অনুযায়ী আইনজীবী ও আত্মীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে। চ. গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে কারাগারের ভেতরে কাচের তৈরি বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। ওই কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকট আত্মীয় থাকতে পারবেন। ছ. জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। ট. পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবে। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নেবেন এবং তাকে দ-বিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে। এসব নির্দেশনা ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল হাইকোর্টের সেই রায়ে। এই রায় আপিল বিভাগেও বহাল রাখা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ আইন-কানুন মেনে কাজ করলে দেশে এত অপরাধ ঘটতো না
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ