Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোনো দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক ছিন্ন করায় বিশ্বাসী নয় বাংলাদেশ-প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পাকিস্তান-তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় সতর্ক বাংলাদেশ
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে এ সংশ্লিষ্ট বিষয় ও রায়কে নিয়ে পাকিস্তান ও তুরস্ক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এই দুই দেশের প্রতিক্রিয়ার ফলে দেশ দুটির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার দাবিও ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুধু এ দুটি দেশ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে বাংলাদেশ বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক মানদ-ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে মুসলিম শক্তি হিসেবে সউদি আরব একটি বড় বিবেচনা ও উদ্বেগের জায়গায় ছিল। কিন্তু সউদি আরবের পক্ষ থেকে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সউদি আরব সফরেও ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে দেশটির তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, পাকিস্তান ও তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের কূূটনৈতিক সম্পর্ক এখনই ছিন্ন করার ইচ্ছা বাংলাদেশের নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করলে পকিস্তানের কাছ থেকে ১৯৭১-এর গণহত্যার জন্য ক্ষমা আদায়, ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও তাদের কাছ থেকে যে অর্থ পাওনা রয়েছে তার অধিকার পাওয়া বানচাল হয়ে যাবে।
গত বুধবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে এক সাংবাদিকের জিজ্ঞাসার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোনো দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক ছিন্ন করায় আমরা বিশ্বাসী নই। পাকিস্তান যা বলার বলে যাচ্ছে, এসব বলায় এখন স্পষ্ট হচ্ছে যে, এরা (যুদ্ধাপরাধীরা) পাকিস্তানের এজেন্ট ছিল, গণহত্যা চালিয়েছিল। এখনও যাদের ভেতরে পাকিস্তান প্রীতি আছে, পাকিস্তানি বাসমতি চাল খেয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়েন তাদের বিষয়ে কিছু বলার নেই।
তুরস্কের বিষয়েও বাংলাদেশের মনোভাব এমনই। এখনই দেশটির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেছেন, সরকার এখনই এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে না। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে তুরস্ক তাদের কূটনীতিক প্রত্যাহার করে নিয়েছে মর্মে দেশটি লিখিত কোনো কিছু জানায়নি বলেও জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তবে দেশ দুটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রতি সতর্ক নজর রাখছে ঢাকা। তুরস্কে ২৩ ও ২৪ মে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মন্ত্রী পর্যায়ে আমন্ত্রণ জানানো হলেও সেখানে সচিব পাঠায় বাংলাদেশ। অন্যদিকে চলতি বছর ১০-১১ নভেম্বর ইসলামাবাদে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করেও বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যা প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার ওপরই নির্ভর করবে।
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, তুরস্কের সঙ্গে কিছু ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুলায়মান দেমিরেল ১৯৯৭ সালে নেলসন ম্যান্ডেলা এবং ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তুরস্কের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুল ও প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান ২০১০ সালে ঢাকা সফর করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১২ সালে আঙ্কারা সফর করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসির সম্মেলনে তুরস্ক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৬ সালে ঢাকায় তুরস্ক দূতাবাস এবং ১৯৮১ সালে আঙ্কারায় বাংলাদেশের দূতাবাস প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কোনো ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার জন্য আঙ্কারাকে সতর্ক করেছে ঢাকা। এটি অব্যাহত রাখতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো কথা না বলে সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিয়ে গেলে দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের জন্যই মঙ্গল।
এ ব্যাপারে সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান বলেন, তুরস্ক ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ না করে কিছুটা সীমাবদ্ধ করা যেতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেন ও জার্মানি তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করেনি। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার বিষয়ে তাদের অবশ্যই কড়া প্রতিবাদ রাখা উচিৎ। কারণ এ বিচার এখনই শেষ হবার নয়। যদি সম্পর্ক ছেদ করা হয় তাহলে এ প্রতিবাদটুকু করার যৌক্তিকতা থাকবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোনো দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক ছিন্ন করায় বিশ্বাসী নয় বাংলাদেশ-প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ