পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অবশেষে বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির দুই শর্তে জামিন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ জামিনের আদেশ দেন। তবে এ জামিন শর্ত সাপেক্ষ। জামিনে থাকাকালে মিন্নি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না। তাকে বসবাস করতে হবে বাবার বাড়িতে।
জামিনের পর মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। হাইকোর্টের এ জামিন আদেশের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ আপিল করবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। জামিন আদেশে মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান সম্পর্কে বরগুনার এসপি মারুফ হোসেন আগাম ব্রিফিং করায় তাকে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট।
দীর্ঘ আদেশে হাইকোর্ট মিন্নির জামিন প্রসঙ্গে বলেন, এজাহারে আসামির নাম উল্লেখ না থাকা, গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে স্থানীয় পুলিশ লাইনসে আটক এবং গ্রেফতারের প্রক্রিয়া, আদালতে হাজির করে রিমান্ড শুনানির সময়ে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ না পাওয়া, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামির দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক লিপিবদ্ধ করার আগেই আসামির দোষ স্বীকার সম্পর্কিত জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্য, তদন্তকারী কর্মকর্তার মতে মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। সুতরাং আসামি কর্তৃক তদন্ত প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ না থাকায় সর্বোপরি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারার ব্যতিক্রম অর্থাৎ আসামি একজন মহিলা। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা তাকে জামিন দেয়া ন্যায়সঙ্গত মনে করছি। জারি করা রুলটি আমরা যথার্থ মনে করে ‘চূড়ান্ত’ ঘোষণা করছি।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি রিমান্ডে থাকা অবস্থায় বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা শুধু অযাচিত অনাকাক্সিক্ষত নয় বরং ন্যায়নীতি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ তদন্তের পরিপন্থী। আদালত বলেন, পরিস্থিতি ও বাস্তবতা যাই হোক না কেন কোনো পুলিশ সুপারের মতো দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য জনমনে নানা প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে। একদিকে যেমন জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে তেমনি তিনি তার দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বকে প্রশ্ববিদ্ধ করেছেন। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং হতাশাব্যঞ্জক।
আদালত বলেন, উচ্চ পর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে এ ধরনের কাজ প্রত্যাশিত এবং কাম্য নয়। ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনে আরো সতর্কতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দেবেন- এটাই আদালতের কাম্য। মামলাটির তদন্ত এখনো চলমান। এ কারণে এ মুহূর্তে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে আদালত বিরত থাকছে। তবে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
প্রাথমিকভাবে উল্লেখ করা সঙ্গত হবে যে, ইদানীং প্রায়ই লক্ষ করা যাচ্ছে যে, সংঘটিত আলোচিত ঘটনার তদন্তকালীন সময়ে পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারকৃত অভিযুক্তদের বিষয়ে এবং তদন্ত সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিং করা হয়। গ্রেফারকৃত সন্দেহভাজন বা অভিযুক্তদের কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়, যা অনেক প্রশ্নের উদ্রেক করে। যদিওবা এ বিষয়ে অত্র আদালত একটি রায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।
পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত বিষয়ে অতি উৎসাহ নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিতে দেখা যায়। একথা আমাদের সকলেকেই মনে রাখতে হবে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত না হচ্ছে, ততক্ষণ বলা যাবে না যে, সে অপরাধী বা অপরাধ করেছে।
তদন্ত বা বিচার পর্যায়ে এমনভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করা উচিত নয় যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধী। সে কারণে মামলার তদন্ত পর্যায়ে তদন্তের অগ্রগতি বা গ্রেফতারকৃতদের বিষয়ে গণমাধ্যমে কতটুকু বিষয় প্রচার বা প্রকাশ করা যাবে সে বিষয়ে একটি নীতিমালা করা বাঞ্ছনীয়। এই নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রচারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ প্রদান করা হলো।
এর আগে গত ২৮ আগস্ট মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের ওপর শুনানি হয়। শুনানিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর মামলার নথি নিয়ে হাজির হন। শুনানি শেষে গতকাল আদেশের দিন ধার্য করা হয়। গত ২০ আগস্ট মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে ২৮ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে সিডি (কেস ডকেট) নিয়ে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়। এছাড়া মিন্নির দোষ স্বীকার নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে পুলিশ সুপারকে (এসপি) লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। গত ৮ আগস্ট বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ জামিন দেয়ার পক্ষে রুল জারি করতে চাইলে মিন্নির আইনজীবী আবেদন ফেরত নেন। পরে ১৮ আগস্ট মিন্নির জামিন চেয়ে নতুন করে আবেদন করা হয়।
গত ২৬ জুন প্রকাশ্য দিবালোকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে রিফাত শরীফকে কোপাতে থাকে সন্ত্রাসীরা। স্ত্রী মিন্নি রিফাতকে রক্ষার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ২ জুলাই ভোরে প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। ১৬ জুলাই সকালে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনার পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিফাত হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ওই দিন রাতে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
মিন্নির জামিন কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে গত ২০ আগস্ট রুল জারি করেছিলেন আদালত। এর আগে গত ৩০ জুলাই বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন। তার আগে গত ২১ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালত মিন্নির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরে মিন্নির জামিনের বিষয়টি হাইকোর্টে আসে।
মিন্নির বাবা কিশোরের শুকরিয়া জ্ঞাপন
বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। তিনি বলেন, এটি আমার বিজয়। আদালতের প্রতি আমি ও আমার পরিবার কৃতজ্ঞ। তবে এখনো মামলার সব আসামি গ্রেফতার হয়নি, তাই আমি হুমকিতে আছি। বিভিন্ন ধরনের হুমকি রয়েছে। তবে হত্যার হুমকি নেই।
গতকাল মিন্নির জামিন ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হাইকোর্ট অঙ্গনে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। মিন্নির বাবা শুকরিয়া জ্ঞাপন করে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আমি খুব খুশি যে, ন্যায়বিচার এখনো বাংলায় (বাংলাদেশে) প্রতিষ্ঠিত হয়, এটার প্রমাণ আজকে পাওয়া গেল। দুষ্কৃতকারীরা যেগুলো করছে সেগুলো সব জনসম্মুখে প্রকাশ পেয়েছে। এ জন্য আমি গর্বিত। আমি সুন্দর একটা রায় পেয়েছি। এটি আমার বিজয়।
বরগুনার এসপিকে সাবধান করলেন হাইকোর্ট
এদিকে মিন্নিকে নিয়ে আগাম ব্রিফিং করায় বরগুনার এসপি মারুফ হোসেনকে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট। মিন্নির ভুল স্বীকার মর্মে পুলিশ সুপার (এসপি) যে বক্তব্য দিয়েছেন তা হতাশা ও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন আদালত। বলা হয়, এসপি হিসেবে তিনি (মারুফ হোসেন) পেশাদারিত্বের পরিচয় দেননি। ভবিষ্যতে কোনো পুলিশ অফিসার তদন্তাধীন বা বিচারাধীন মামলার বিষয়ে ব্রিফ করলে সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) সময়মতো ব্যবস্থা নেবেন।
এ ছাড়া রিফাত হত্যার ঘটনায় করা মামলা বিচারাধীন বিষয় বিধায় আদালত এ ব্যাপারে কোনো আদেশ দিচ্ছেন না। তবে কোনো মামলার তদন্ত ও বিচারাধীন বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন আদালত। কোনো আসামি গ্রেফতারের পর তাকে মিডিয়ার সামনে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রেস ব্রিফিং করার ব্যাপারে নীতিমালা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।
মিন্নির জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করবে সরকার
হাইকোর্টে মিন্নির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না। জামিনের বিরোধিতা করে সরকারপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পি। আদালত থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না- এই মর্মে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। সেই রুল চূড়ান্ত করে মিন্নিকে জামিন দেয়া হয়েছে। যেহেতু তিনি নারী এবং তিনি তার বাবার জিম্মায় থাকবেন, তাই তাকে জামিন দেয়া হয়েছে। তবে এই জামিনের তিনি অপব্যবহার করবে না । মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। তিনি যদি জামিনের শর্ত ভঙ্গ করেন, তাহলে বিচারিক আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারবেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মিন্নির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। তিনি যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে নিজের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। যা-ই হোক, আদালত তবুও তাকে জামিন দিয়েছেন। আমরা হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।