পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জানাজায় মুসলিম বিশ্বের নেতারা
ইনকিলাব ডেস্ক : সর্বকালের সেরা মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মাদ আলীর গ্রামের বাড়ি কেনটাকির লুইসিভিলে গতকাল শুক্রবার তার দাফন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর সেখানে জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ। ইসলাম গ্রহণকারী এই মহান যোদ্ধার মৃত্যুশোকে কাতর হয়ে কয়েক হাজার মানুষ দোয়া করেছে তার জানাজায়। মোহাম্মদ আলীর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তিনি মুষ্টিযুদ্ধের রিংয়ের ভেতর আজীবন আগ্রাসী যুদ্ধ করেছেন। তার প্রতিপক্ষ বুঝে ওঠার আগেই ধরাশায়ী করেছেন তাকে। কিন্তু রিংয়ের বাইরে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ উল্টো মানুষ, যে কিনা শান্তি চায়, মানুষের মঙ্গল চায়। এটা অতি দুর্লভ বৈশিষ্ট্য। মোহাম্মদ আলীর জানাজায় অংশ নিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান, জর্ডানের বাদশা আবদুল্লাহসহ মুসলিম বিশ্বের নেতারা। পাশাপাশি দাফন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সব ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ।
বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের প্রায় ১৪ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল তার জানাজাকে ঘিরে। আলী এবং তার পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা আগামী ১০ বছর যাবৎ আলীর শোক পালন করবেন, যাতে করে একইসাথে আলীর ইসলাম বিশ্বাস এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির জনপ্রিয়তা দুটোকেই রক্ষা করা যায়। অপর এক খবরে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার কেনটাকি এক্সপোজিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত আলীর জানাজায় শরীক হতে ১৪ হাজারের বেশি লোক টিকিট কেনেন। সারাবিশ্বের টিভি ও অনলাইনে তার জানাজার নামাজ প্রচারিত হয়। আয়োজকরা বলছেন, মুসলিমদের হিরো হিসেবে বিবেচিত মোহাম্মদ আলীর জানাজায় শরীক হওয়াটাকে অনেকেই বিরল সুযোগ হিসেবে দেখছেন।
মাত্র ২২ বছর বয়সে ইসলামের পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন হেভিওয়েট বক্সিংয়ে তিন বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মুহাম্মদ আলী। গত ৫০ বছর তিনি ছিলেন একজন খ্যাতিসম্পন্ন মুসলিম, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে। মুহাম্মদ আলীর মৃত্যুর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ মুসলিমদের সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানার সুযোগ পাবেন বলে আশা করছেন জানাজার আয়োজকরা। খবরে বলা হয়, মানুষের চোখে তিনি শুধু মুষ্টিযোদ্ধায় একজন বিজয়ী নন, তিনি জনমানুষের নির্বাচিত বিজয়ী। মোহাম্মাদ আলী তিনবার হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। একাধারে একজন দক্ষ ও চতুর খেলারি, রাজনৈতিক কর্মী এবং মানবতাবাদী আলী যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা অঙ্গরাজ্যের একটি হাসপাতালে ৭৪ বছর বয়সে সেপটিক শকে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। বক্সিং খেলাটিকে বিশ্বের আপামর মানুষের কাছে যিনি জনপ্রিয় করেছিলেন তিনি আলী। বক্সিং রিংয়ে প্রজাপতির মত নেচে নেচে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার দৃশ্যটি মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখত। তিনি তিন বারের ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন এবং অলিম্পিক লাইট-হেভিওয়েট স্বর্ণপদক বিজয়ী হন। ৬১টি বক্সিং প্রতিযোগিতার মধ্যে ৫৬টিতেই জয়ী হন তিনি। পরাজিত হয়েছিলেন মাত্র পাঁচটিতে। এ কারণেই ১৯৯৩ সালে আমেরিকার ৮০০ জীবিত অথবা মৃত অ্যাথলেটের মধ্যে বেইব রুথের সাথে তাকে যুগ্মভাবে সেরা ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৯ সালে বিবিসি এবং স্পোর্টস ইলাসট্রেটেড তাকে স্পোর্টসম্যান অব দ্য সেঞ্চুরী অর্থাৎ শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা করে। তার মৃত্যুর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা মানুষ শোক জানিয়েছেন। এমনকি মোহাম্মদ আলীর নামে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনের ওয়েস্ট থার্টি থার্ড স্ট্রিটকে অস্থায়ীভাবে মুহাম্মাদ আলী ওয়ে হিসেবে ঘোষণা দেন নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো। মোহাম্মদ আলী ১৯৬৪ সালে একটি ইসলামিক নাম গ্রহণ করে পশ্চিমা বিশ্বকে প্রথম চমকে দেন। দ্বিতীয় চমক ছিল ১৯৭০ সালে সরাসরি সুন্নি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা। পরবর্তীতে তিনি সূফীবাদের চর্চা করেছেন। মোহাম্মাদ আলী একইসাথে দ্বৈত জীবনযাপন করেছেন। এপি, আল-জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।