Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাধ যত আছে সাধ্য তত নাই - চমক সৃষ্টির বাজেট

প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩২ পিএম, ১০ জুন, ২০১৬

মোবায়েদুর রহমান : এই বাজেট নিয়ে আর লিখবো কি? আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী এই বাজেট দিয়েছেন। অথচ আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যদেরই এই বাজেটের প্রতি কোন আগ্রহ নাই। গত বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে দেখা গেল, সরকার দলীয় কোন সংসদ সদস্য বাজেট নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী নন। তাদের অনীহা এমন চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে যে স্পিকার বিরক্ত হয়ে সংসদের অধিবেশনই মুলতবী করতে বাধ্য হন। সেই বাজেট নিয়ে কী লিখবো? যে বাজেটে দেশের গরীব মানুষ তথা নিম্ন ও মধ্যবিত্তের অভাব অনটন ও আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের কোন পথ-নির্দেশ নাই, সেই বাজেট নিয়ে লেখার জন্য ভেতর থেকে কোনো তাগিদ অনুভব করি না। জনগণ সুলভ মূল্যে কিভাবে ওষুধ পেতে পারেন, সাশ্রয়ী খরচে কিভাবে চিকিৎসা পেতে পারেন, নিজের সামর্থ্যরে মধ্যে কিভাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা পেতে পারেন, সে সম্পর্কে বাজেট সম্পূর্ণ নিরুত্তর। কোটি কোটি ছিন্নমূল মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই কোথায় এবং কিভাবে পাবে তার কোন দিক-নির্দেশনা নাই। পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ থেকে দেখা যায় যে, দেশে হুহু করে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। তাদেরকে কিভাবে সর্বাধিক সংখ্যায় চাকরি বাকরি দেওয়া যায় তার কোন ইঙ্গিত নাই এই বাজেটে। চাকরিজীবীরা অবসর গ্রহণের পর যে রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট পান সেই বেনিফিটের টাকা কিভাবে ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে বাড়তে পারে সে ব্যাপারে কোন আশ্বাস বাণী নাই। বরং তাদের অবস্থা আরো খারাপ করার জন্য তাদের আমানতের সুদের হার কমিয়ে তাদেরকে আরো পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে।
শেয়ার বাজারে পতনের ঘণ্টাধ্বনি
জাতীয় বাজেট ঘোষণার পর তীব্র নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। গত কয়েক মাসে দেশের শেয়ারবাজার এমনিতেই তলানিতে ছিল। প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর আরও ধস নেমেছে শেয়ারবাজারে। বাজেটের পর ধারাবাহিকভাবেই কমেছে সূচক। গত কয়েক দিনে লেনদেনও কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। এই কয়েক দিনে প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। এতে ব্যাপকভাবে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা ও শিল্পে বিনিয়োগের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে।
জিনিসপত্রের বাজারে আগুন
আজকের এই অর্থনৈতিক ভাষ্যের এক জায়গায় আমি বলেছি যে, বাজেট ঘোষণার সাথে জিনিসপত্রের বাজারে দাম কমা বা বাড়ার কোন সম্পর্ক নাই। যারা দাম বাড়ায় তারা বাজেটের তোয়াক্কা করে না। যখন তখন তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। সরকারের প্রতি কিছুটা দুর্বল একটি বাংলা সহযোগী গত শুক্রবার একটি টেবিল দিয়েছে। ওই টেবিল থেকে দেখা যায় যে, যেসব পণ্যের ওপরে নতুন করে ট্যাক্স বসেনি সেসব পণ্যের দামও ২রা জুনের পর কেজি প্রতি ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরা কাঁচা বাজারের ওপর দিয়ে ঘুরে এলো। একাধিক ক্রেতা রাখঢাক না করে বললেন যে, জিনিসপত্রের দাম গত ৫/৬ দিনে যে রকম হুহু করে বেড়ে চলেছে সেগুলো দেখে তাদের বিশ্বাস হতে চায়না যে, দেশে কোনো সরকার আছে। এই কথাটি তারা সরাসরি বলেই ফেললেন। অন্য একটি চ্যানেলে ২/১ জন ক্রেতা বললেন যে, জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না কেন? এদিকে নজর দেওয়ার সময় কোথায় সরকারের? তারা তো ব্যস্ত আছে একে ধরো, আর ওকে ঠা-া করো, এই সব নিয়ে।
৮টি মেগা প্রজেক্ট
এই যেখানে জনগণের মানসিক অবস্থা, সেখানে অর্থমন্ত্রী বাজেটে ৮টি মেগা প্রজেক্টের ঘোষণা দিয়েছেন। এগুলোর প্রজেক্ট কস্ট ১ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা। নুন আনতে যাদের পানতা ফুরায় তাদের কাছে পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল লাইন, দোহাজারি ঘুনধুম রেল লাইন, মেট্রোরেল, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, রূপপুর আণবিক কেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প প্রভৃতি তাদের স্নায়ুতন্ত্রকে উজ্জীবিত করতে পারে না। ভরা পেটে এগুলো শুনতে ভাল লাগে। মেট্রো রেলের কথা তারা বহুদিন থেকেই শুনছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়েও সোনাদিয়া আর পায়রার মধ্যে টানাহেঁচড়া চলছে। তিনটি বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়েও তারা খুশিতে নেচে ওঠেন না। কারণ, বিগত সাড়ে সাত বছর ধরে এই রেন্টাল, কুইক রেন্টালের ঠেলায় তাদেরকে ৪/৫ গুণ বেশি বিদ্যুৎ বিল গুনতে হচ্ছে। তারপরেও তাদেরকে লোড শেডিংয়ের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
চমক সৃষ্টির নিষ্ফল প্রয়াস
বর্তমান সরকার প্রতি বছরই বাজেট নিয়ে একটি চমক সৃষ্টি করতে চায়। চমক সৃষ্টি করে জনগণকে বেওকুফ বানিয়ে তাদের বাহবা কুড়াতে চায়। কিন্তু তারা এই সস্তা প্রচারণার খেলায় প্রতিবারেই ব্যর্থ হয়। এই সরকার সাধ্যের অতীত বোঝা ঘাড়ে নেয়। কিন্তু সেই বোঝা টানার ক্ষমতা তাদের থাকে না। কিছুদূর গিয়েই তারা মুখ থুবড়ে পড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
বাহাদুরী দেখানোর জন্য এবারে জাতীয় সংসদে একটি বিশাল আকারের বাজেট পেশ করা হয়েছে। বাজেটের আকার হলো, ৩ লক্ষ ৪০ হাজার ৬ শ’ ৫ কোটি টাকা। গত বছর মূল বাজেট ছিল ২ লক্ষ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৪৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা বেশি। কিন্তু তারা এই ২ লক্ষ ৯৫ হাজার কোটি টাকার বাজেটই বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বছর শেষে সেই বাজেট সংশোধন করে বা কাটছাঁট করে ২ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা করতে হয়েছে। অর্থাৎ গত বছরের বাজেট থেকে ৩০ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা কমিয়ে তারপর সেই বাজেটটি বাস্তবায়ন করতে হয়েছে। এই যেখানে অবস্থা সেখানে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকার এই বিশাল বাজেট পেশ করার অর্থ কি? এর অর্থ হলো গত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭৬ হাজার ৪০ কোটি টাকা বেশি। যেখানে তারা ২ লক্ষ ৯৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারে না, সেখানে তারা ৩ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন করবে কিভাবে? কোথা থেকে আসবে এই অতিরিক্ত ৭৬ হাজার কোটি টাকা? আর কিভাবে সেই টাকা ব্যয় করা হবে?
বাজেটের আকার
প্রশ্নটি উঠেছে বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই প্রস্তাবিত বাজেটের সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট মিলে বাজেটের ব্যয় হবে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা। আর ব্যয় হবে ২ লক্ষ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, বাজেটের ঘাটতি হবে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। যেখানে ঘাটতি প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা সেটিকে ডেফিসিট বাজেট বা ঘাটতি বাজেট ছাড়া আর কি বলব?
ডেফিসিট ফিনান্সিং
কেন আমরা প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট কাঁধে নিচ্ছি? একটি বাজেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই করতে হবে ঘাটতি অর্থায়ন। এটি সোজা কথা নয়। যারা অর্থনীতির ছাত্র তারা জানেন যে, ডেফিসিট ফিনান্সিং বা ঘাটতি অর্থায়ন তখনই করা হয় যখন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য ট্যাক্সের পরিমাণ কমানো হয় অথবা সরকারি খরচ বাড়ানো হয়। অর্থনীতিতে যখন মন্দাভাব থাকে তখনও ঘাটতি অর্থায়ন করা হয়। আরেকটি হলো, অর্থনীতিকে ওপরে ওঠার জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা মারা বা পুশ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে কোন মন্দাভাব নাই। সরকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার কথাও বলছেন না। তারা তো বলছেনই যে, অর্থনীতিতে তেজীভাব এসেছে এবং উন্নয়নের জোয়ার বইছে। সরকারের মতে উন্নয়ন এত বেশি হচ্ছে যে তার মোমেন্টাম ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনে গণতন্ত্রকে ব্যাক বার্নারে রাখা হবে। তারপরেও এত বড় ডেফিসিট ফিনান্সিং করা হচ্ছে। তার কারণটি মনে হয় ধাক্কা দিয়ে অর্থনীতিকে হাই জাম্প বা পোল ভল্টের মতো অনেক ওপরে তোলা। এজন্যই প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৭.২ শতাংশ। আরো বলা হচ্ছে যে, একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করা হবে।
অর্থায়নের উৎস
ঘাটতি অর্থায়ন করা হয় প্রধানত দু’টি পথে। একটি হলো দেশী বা বিদেশী উৎস থেকে ধার করে। আরেকটি হলো টাকশাল থেকে নোট ছাপানো। দ্বিতীয় উৎস থেকে অর্থায়ন করা হবে কিনা, অথবা কতটুকু করা হবে সেটি আগে ভাগে জানান দিয়ে করা হয় না। প্রথমে ধার করে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করা হয়। এই বাজেটে সরকার বলেছে যে, তারা এই ঘাটতি অর্থায়ন করবে প্রধানত ৩ টি সূত্র থেকে। ১ম টি হলো, ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে। ২য় টি হলো, বিদেশ থেকে ৩৬ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা ধার এবং অনুদান নিয়ে। আর ৩য় টি হলো, ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ২২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে।
সীমাবদ্ধতা : (ক) প্রশাসন যন্ত্র
সমগ্র বাজেট পড়ে মনে হলো, বেসরকারি খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না আসার কারণে সরকার উন্নয়ন বাজেট অর্থাৎ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীকেই প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছে। এজন্য উন্নয়ন বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, চলতি আর্থিক বছরের মূল বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৯৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে সেটি কাটছাঁট করে করতে হয় ৯১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬ হাজার কোটি টাকা কর্তন করতে হয়। যে প্রশাসন চলতি এডিপি বাস্তবায়নের কাজে নিয়োজিত ছিল সেই একই প্রশাসন আগামী অর্থ বছরেও একই কাজে নিয়োজিত থাকবে। যারা ৯৭ হাজার কোটি টাকা বাস্তবায়ন করতে পারেনি তারা ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা বাস্তবায়ন করবে কিভাবে?
সীমাবদ্ধতা : (খ) বেসরকারি বিনিয়োগ
বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ হলো জিডিপি’র ২১ থেকে ২২ শতাংশ। ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে গেলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে কমপক্ষে ২৭ শতাংশ করতে হবে। কিন্তু জমি, বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের ব্যবস্থা করতে না পারলে এটি অসম্ভব হয়ে পড়বে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে যে আয় আসত অর্থাৎ প্রবাসীদের রেমিট্যান্স সেটাও নিম্নমুখী। গত মে মাসে রেমিট্যান্স হ্রাস পেয়েছে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা। শতাংশের হারে এটি ৮.৩৩ শতাংশ।
বিনিয়োগের ২ টি দিক আছে। একটি স্বদেশীদের বিনিয়োগ, আরেকটি প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ। একটি ইংরেজী সহযোগী গত ২রা জুন খবর দিয়েছে যে, ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের চেয়েও বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ কম। যে পাকিস্তান আল-কায়েদা, তালেবান এবং আইএস হামলায় ক্লান্ত এবং বিধ্বস্ত, সেই পাকিস্তানের বিদেশী বিনিয়োগও আমাদের চেয়ে বেশি হচ্ছে কেন?
সীমাবদ্ধতা : (গ) কর্মসংস্থান সৃষ্টি
বেসরকারী থিংক ট্যাঙ্ক দি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ মন্তব্য করেছে যে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও কর্মসংস্থান সৃষ্টির সংখ্যা কমে গেছে। অথচ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার যত বৃদ্ধি পাবে কর্মসংস্থানের বা চাকরি-বাকরির সংখ্যাও তত বাড়বে। প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ বা তার বেশী থাকলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। এটি উন্নয়ন অর্থনীতির স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই থিওরি খাটছে না। এখানে উন্নয়নের হারের সাথে সাথে কর্মসংস্থানের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। সিপিডি যে পরিসংখ্যান দেয় সেখান থেকে দেখা যায় যে, ২০০২-২০১৩ এই এগারো বছরে প্রতি বছর ১৩ লক্ষ ৬০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ২০১৩ সালের পর থেকে এই পর্যন্ত কর্মসৃষ্টির হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। প্রতিবছর সৃষ্টি হয়েছে ৩ লক্ষ কর্মসংস্থান। অন্যকথায় প্রতি বছর ১০ লাখ মানুষ নতুন চাকরি-বাকরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধুমাত্র ম্যানুফ্যাচারিং খাতে বিগত ২ বছরে ১২ লক্ষ কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে। সুতরাং আমরা যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলি, তখন শুধু কয়েকটি অংকের পরিসংখ্যান অর্থাৎ ৫ শতাংশ, ৬ শতাংশ বা ৭ শতাংশের মতো সংখ্যাতত্ত্ব দিলেই উন্নয়নের জোয়ার আসে না। যদি নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি না হয় অথবা কর্মসংস্থানের পরিমাণ হ্রাস পায়Ñ তাহলে সেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সাধারণ জনগণের কোনো কল্যাণ হয় না।
বেকারত্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, বিগত ৩ বছরে শিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা বিশেষ করে যারা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে, তাদের সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েক দিন আগে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে দেখা যায় যে, দেশের সামগ্রিক বেকারত্বের মধ্যে শিক্ষিত বেকারদের হার ৪৫ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যানে বেকারত্বের যে চিত্র ফুটে উঠেছে সেটি পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বিগত ৩ বছরে অন্তত ৩০ লক্ষ মানুষ চাকরি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সর্বনাশ
বণিক সমিতির টাকার কুমীরদের অর্থ লালসা মেটাবার জন্য গরীবদের ওপর খাঁড়ার ঘা বসানো হচ্ছে। নিম্ন ও মধ্যম পর্যায়ের চাকরিজীবী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের কষ্টার্জিত ক্ষুদ্র সঞ্চয় ফিক্সড ডিপোজিটে (এফডিআর) অথবা সঞ্চয়পত্রে আমানত রাখেন। এফডিআরের আমানতের সুদ কমাতে কমাতে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। পক্ষান্তরে সেই এফডিআরের বিপরীতে ঋণ নিতে গেলে সেই একই আমানতকারীকে কম করে হলেও ১১ শতাংশ সুদ দিতে হচ্ছে। অর্থনীতির পরিভাষায় ৫ শতাংশ এবং ১১ শতাংশের মধ্যবর্তী অংশকে বলা হয় স্প্রেড। এই স্প্রেড ৩ শতাংশ থাকলে ভাল হয়। সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ থাকতে পারে। কিন্তু এখানে স্প্রেড হলো ৬ শতাংশ। তার অর্থ সরকার বা ব্যাংক আপনাকে যে হারে সুদ দিচ্ছে তার চেয়ে দ্বি-গুণেরও বেশি সুদ নিচ্ছে যখন তারা আপনাকে ঋণ দিচ্ছে। ফলে এফডিআরের বিপরীতে আমানতকারী যে ঋণ গ্রহণ করছে সেই ঋণ আর কোনদিন পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এভাবে সে ফতুর হয়ে যাচ্ছে।
এই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী, যাদের সংখ্যা কোটি কোটি, তারা অনেক দিন থেকেই মার খাচ্ছে। তারা শেয়ার বাজারে মার খেয়েছে, সঞ্চয়পত্রে মার খেয়েছে এবং এফডিআরে মার খেয়েছে। এদের স্বার্থ সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা বাজেটে নাই।



 

Show all comments
  • জাবেদ ১১ জুন, ২০১৬, ১১:২০ এএম says : 0
    এই বাজেট জনগনের জন্য নয়, এটা তাদের জন্য।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাধ যত আছে সাধ্য তত নাই - চমক সৃষ্টির বাজেট
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ