Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দীনের উপর জমে থাকাই ঈমান

মিযানুর রহমান জামীল | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

আল্লাহ তাআলা আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন আখিরাতের প্রস্তুতির জন্য। আখিরাত বানানো প্রত্যেকের দায়িত্ব। আখিরাত তৈরি হবে তো ঈমান আমলের দ্বারাই। প্রত্যেক ঈমানওয়ালা তার আমলী জিন্দেগীকে তৈরি করবে। যদি কেউ বলে আমি ঈমানদার; অথচ তার জীবন নাফরমানির মধ্যে কাটে; তবে সে কীভাবে ঈমানদার হলো? এ জন্য সে ঈমানের দাবী করার পরও, ঈমানওয়ালা দাবী করার পর মকবুল হতে পারবে না। কারণ তার দ্বারা তো এমন এমন কাজ হয়, যার সাথে ঈমানের কোনো সম্পর্ক নেই। আর এ কারণেই সে দোযখে যাবে। ঈমানের কাজ না করে তার বিপরীত কাজ করে সে জাহান্নামি হয়েছে। কারণ তার ঈমান ছিল ভেজালযুক্ত এবং আমল ছিল ময়লাযুক্ত। এ জন্য রাসূলের তরিকায় মেহনত করা। দুনিয়ার মোকাবেলায় দীন যেন বিক্রী না হয়ে যায়।

রাসূল ঈমানের কালেমার দাওয়াত দিয়েছেন। তিনি দাঈ হয়ে এসেছেন, শেখানেওয়ালা হয়ে এসেছেন, তালীম করনেওয়ালা হয়ে এসেছেন। আল্লাহ তাআলা রাসূল পাঠালেন উম্মতের হেদায়েতের জন্য। তিনি নবী উম্মি ছিলেন। প্রথমে তিনি শিখলেন এবং পরে শেখালেন। কিতাবুল্লাহর তালীম করলেন, যাতে তারা জান্নাতমুখী হয়ে যায়। জাহান্নামের পথ থেকে ফিরে আসে। এ জন্য আল্লাহকে স্বীকার করার পাশাপাাশি নবীর উপরও ঈমান নিয়ে আসা ফরজ।

আল্লাহ তাআলা বলেন- যারা ঈমানের দাবী করে তারা কি মনে করে যে এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে? না; বরং আল্লাহ তাদের থেকে পরীক্ষা নিবেন। পূর্বের লোকদেরও আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এভাবে তিনি সাব্যস্ত করবেন কে ঈমানের দাবীতে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী! পরীক্ষায় টিকলে সে হবে ঈমানওয়ালা আর পরীক্ষা না টিকলে সে ঈমানওয়ালা হবে না। আল্লাহ তাআলা তো ঈমানওয়ালার সাহার্য করবেন। ঈমানওয়ালা আল্লাহর সাহার্য প্রাপ্ত হবে। কারণ সে সঠিকভাবে তার ঈমানকে বৃদ্ধি করেছে। আর বেঈমান আল্লাহর কঠিন আযাবের মুখোমুখি হবে; কারণ সে সঠিকভাবে তার ঈমান বৃদ্ধি করে নাই। তাই ঈমানকে তৈরি করা দরকার। এমন নয় যে যেমন ইচ্ছা তেমন করবে আর ঈমানের আশা করে বসে থাকবে; বরং ঈমানওয়ালার জন্য দায়িত্ব হলো ঈমানকে বানানো। মনচাহি আমল আল্লাহর কাছে অত্যন্ত দুর্বল আমল। মনচাহি আমল করার দ্বারা বান্দা ঈমানের পরীক্ষা টিকতে পারবে না এবং কবরে প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো লোক ঈমানওয়ালা হবে না যতক্ষণ আল্লাহ ঈমানের ব্যাপারে যে শিক্ষা দিয়েছেন সে শিক্ষা অনুযায়ী মেহনত করা না হবে। যদি কাউকে বলা হয় যে আপনি কি সুন্দর নামাজের মেহনত করেছেন? তখন সে বলে- যা পারি তা দিয়ে নামাযটা পড়ে নিলাম। দেখা যাবে সে আর পরীক্ষা টিকতে পারবে না। যেমন- কেউ পরীক্ষার হল থেকে বের হওয়ার পর তাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়- ‘তুমি কি পরীক্ষা দিয়েছ? যদি সে বলে- যেটুকু পারি সেটুকুই দিয়েছি। যদি বলা হয়- সেটা কী? তবে সে আর উত্তর দিতে পারবে না। এর দ্বারা বুঝা গেল সে পরীক্ষায় পাশ করতে পারে নি।

তাই চেষ্টা করে আল্লাহর থেকে আশা করতে হবে যে তিনি যেন আমাকে আমলের উপর উঠিয়ে দেন। কারণ আমি তো আমল করে রহমতের আশা করি। রাসূল সা. বলেন- আমি আমল করেও পরকালে বাঁচতে পারবো না যদি আল্লাহ আমাকে নিজ রহমতে মাফ না করেন।

ধোকাবাজ শয়তান ধোকা দিয়ে বলে- দুনিয়া লও! দুনিয়া কামাই করো!! আজ আমরা শয়তানের ধোকায় পড়ে দুনিয়া কামাই করে আখেরাতকে ভুলে যেতে বসেছি। শয়তানের এ কথায় যেন আমরা ধোকায় না পড়ি। শয়তান যেন আমাদের কোনোভাবেই ধোকায় না ফেলে। এ জন্য যদি আমি ঈমানওয়ালা হই তো আমার আখেরাত সফল হবে। আর আখেরাতে আল্লাহ আমাকে অনেক বেশি দান করবেন। ঈমানওয়ালাকে শয়তান ধোকা দিতে পারে না। শয়তানকে আসলে ঈমানওয়ালা বলবে- আমি দুনিয়া বানাবো না; আখিরাত বানাবো কারণ আমি ঈমানওয়ালা। আর এর দ্বারা আল্লাহ তাকে আখিরাতের ভালাই দান করবেন। যে ঈমানওয়ালা সে হবে আখিরাতওয়ালা। আর যে দুনিয়াওয়ালা সে ঈমানওয়ালা হবে না। কারণ ঈমানওয়ালা হলে দুনিয়া কামাই করার সুযোগ থাকে না। আর দুনিয়াওয়ালা হলে ঈমানওয়ালা হওয়ার সুযোগ থাকে না। যেমন কাফির-মুশরিক। তাই এমন মেহনত চাই যেন আমি আল্লাহ তাআলার কাছে মকবুল হয়ে যাই। ঈমানওয়ালা জিন্দেগী আর আমলওয়ালা জিন্দেগী তো সাহাবাদের জিন্দেগী। এ জিন্দেগী অর্জন করলে আল্লাহ তাআলা তাকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী রিযিক দান করবেন।

এক ব্যক্তি নামায পড়ছে তার রুকু সিজদাহ সঠিকভাবে আদায় হচ্ছে না। তো বলা হয়েছে- তুমি এরকম নামায কত দিন পড়ছ? সে বলল- ৪০ বছর থেকে আমি এভাবে নামায পড়ে আসছি। বলা হয়েছে- এ অবস্থায় যদি তুমি মৃত্যুবরণ করো তবে তো তুমি নবীওয়ালা নামাযের হিসেব দিতে পারবে না। ঈমান বান্দাকে সব রকমের খারাবী থেকে ফিরিয়ে রাখে। যে নামায পড়ে এবং নামাজের মধ্যে চুরি করে তার চেয়ে আর কেউ নিকৃষ্ট চোর হতে পারে না। রাসুল বললেন- এভাবে হলেও তাকে পড়তে দাও! সে একসময় শুদ্ধ পড়বে আর চুরি করা ছেড়ে দেবে।

রাসুল সা. এক ব্যক্তির সাথে সালাম বিনিময় করে তাকে নামাজে পাঠান। সে একবার পড়ে আসলে রাসুল তাকে আবার নামায পড়ার জন্য পাঠালেন। আবার পড়ে আসলে আবার পাঠালেন। এভাবে যেতে যেতে চারবার নামাযের জন্য পাঠান। বলা হয়- রাতে এক ব্যক্তিকে দেখা গেল সে নামায পড়ছে অথচ তার নামায রাসুলের নামাজের মতো হচ্ছে না। বলা হলো- ‘আরে মিঁয়া! দেখো তো আমি ওযু করে এসে নামায পড়ি, আমার নামায হয় কিনা?’ তারা তো শেখানোর জন্য যায় নি; বরং তারা ওযু করে নামায পড়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।

যখন কোনো সমস্যা আসতো তখন তারা নামাযে মনোনিবেশ করতেন আল্লাহর দিকে ফিরতেন। হাদীসে তো বলা হয়েছে- যে ব্যক্তি এ নামায গুরুত্ব ও এহতেমামের সাথে আদায় করবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে পাঁচটি পুরস্কার দিবেন।

এক. দুনিয়ায় রিযিকের অভাব দূর করে দিবেন।

দুই. কবর আযাব মাফ করে দেবেন।

তিন. ডান হাতে আমলনামা দেবেন।

চার. পুলসিরাত বিজলীর আকারে পার করাবেন।

পাঁচ. বিনা হিসেবে জান্নাত দান করবেন।

এ জন্য বলা হয় আল্লাহকে রব বলে স্বীকার করতে। যে কালেমা পড়ে আল্লাহকে রব বলে স্বীকার করতে পারে নি সে ঈমানওয়ালা হতে পারে নি। যে ব্যক্তি আমলের মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে লেনেওয়ালা হয়েছে সে হলো ঈমানওয়ালা। আর নবীওয়ালা তরিকায় জিন্দেগী যাপন না করলে সে ঈমানওয়ালা নয়। কবরে যখন প্রশ্ন করা হবে- তোমার রব কে? তখন ঈমানওয়ালা ছাড়া এ প্রশ্নের জবাব কেউ দিতে পারবে না। কারণ ঈমানওয়ালা তো রবকে জেনে তার উপর ঈমান এনেছে। যখন বলা হবে- তোমার দীন কী? যারা দীনের উপর অটল ছিল, দীনের দাওয়াতের জন্য কুরবানি করেছিল। দীনের মেহনত করে মানুষকে তৈরি করেছিল, তাদের জন্য এই প্রশ্নের জবাব দেয়া সহজ হয়ে যাবে। যখন বলা হবে- তোমার নবী কে? তখন যে নবীর তরিকায় আমল করেছিল কেবল সে ছাড়া কেউ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। আর তার জন্য রয়েছে পরকালীন মুক্তি আর কামিয়াবী। এ প্রশ্নগুলোর জবাব যে দিতে পারবে না সে হবে নাকাম। সেখানেই তার হাশর শুরু হয়ে যাবে। হাশরে কেউ এক কদমও সামনে যেতে পারবে না যতক্ষণ তার নামাযের হিসেব দেওয়া হবে না।

কবরের মধ্যে বদকারের জীবন তার কাছে ৪০ হাজার বছরের মতো মনে হবে। আর মুমিনের কাছে মনে হবে এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজের মতো। সেখানে মুমিন বান্দার কোনো ভোগ তো দূরের কথা পিপাসাও লাগবে না। ঐতিহাসিকরা বলেন- দুনিয়ার বয়স তো আট হাজার বছরের বেশি। নেককারের কাছে পুলসিরাত মনে হবে একমুহূর্তের মতো। আর বদকারের কাছে হাজার বছরের চেয়েও বেশি। বলেন যে- পুলসিরাত তো ৩০ হাজার বছরের পথ। কেউ কেউ বলেন- ১৫ হাজার বছরের পথ। সন্তান পুলসিরাত দিয়ে জান্নাতে যাওয়ার সময় পিতা তাকে ডাক দিয়ে বলবে- আমি কি তোমার বাবা নই? তারপর ছেলে তার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে পার হওয়ার পর দেখবে তার বাবা নেই। কারণ তার কাছে যদিও বিজলীর মতো পুলসিরাত মনে হয়েছে কিন্তু তার পিতা তো কত আগেই এরপর দেখবে তার বাবার শরীর কঙ্কাল হয়ে গেছে। তাকে চেনা যাচ্ছে না। (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ