পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আসছে সেপ্টেম্বরে রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে। কারণ বাংলাদেশের ডেঙ্গু মৌসুমে আগষ্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিপায়। বিগত ১১ বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা গেছে, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সাত বছরই সেপ্টেম্বর মাসে আগষ্টের তুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল। এ বিষয়টি ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কেউ মনে করছেন জেলা -উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে ইতিমধ্যে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে সহজেই অনুমেয়, গ্রামীন এডিস এলবোপিক্টাস দ্বিতীয় পর্যায়ের বাহক হিসেবে কাজ শুরু করছে। বিস্তারিত জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হবে। যেহেতু স্থানীয় পর্যায়ে মশক নিধনের কার্যক্রম নেই বলেই চলে আবার প্রান্তিক পর্যায়ের নাগরিকদের এ বিষয়ে তেমন সচেতন করাও হয়নি, তাই আসছে সেপ্টেম্বরে রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে। যদিও চলতি বছরে আগষ্ট মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে নতুন করে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৬ হাজার ৬৪ জন। এ সময়ে সুস্থ্য হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন ৬০ হাজার ৫৬৯ জন। গত ২৪ ঘন্টায় (সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছের ১ হাজার ২৯৯ জন। যা গত ২৪ ঘন্টার (রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) তুলনায় ৪৮ জন বেশি। সরকারের রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রন ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে গত ১ জানুয়ারি থেকে ২৭ আগষ্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু সন্দেহে ১৭৩ মৃত্যুর তথ্য এসেছে। যারমধ্যে ৮৮টি মৃত্যু পর্যালোচনা সম্পন্ন করে ৫২টি মৃত্যু নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বাইরে আরও এক স্কুল শিক্ষার্থীসহ পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা এখনও সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
সরকারের রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)’র বিগত ১১ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এরমধ্যে ৭ বছরই আগস্ট মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল। ২০১৮ সালেই আগষ্ট মাসে যেখানে ডেঙ্গু আক্রান্তের রোগীর সংখ্যা ছিল ১৭৯৬ জন সেখানে সেপ্টেম্বরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে দাড়ায় ৩ হাজার ৮৭ জনে। একই ভাবে ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৪৬ ও ৪৩০, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৪৫১ ও ১ হাজার ৫৪৪, ২০১৫ সালে ৭৬৫ ও ৯৬৫, ২০১৩ সালে ৩৩৯ ও ৩৮৫। একইভাবে ২০১২ সালে ১২২ ও ২৪৬ জন এবং ২০০৯ সালে আগষ্ট রোগীর সংখ্যা ছিল ১২৫ এবং সেপ্টেম্বরে ১৮৮ জন।
এদিকে হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, বিগত ৭দিনে রাজধানী ঢাকার তুলনায় দেশের অন্যান্য বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গতকাল ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা যেখানে ছিল ৬০৮ জন, ঢাকার বাইরে এই সংখ্যা ৬৯১ ছিল জন। একইভাবে ২৬ আগস্ট ঢাকায় ছিল ৫৭৭ জন ঢাকার বাইরে ৬৭৪ জন। গত ২৫ আগষ্ট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যথাক্রমে ৬০৭ ও ৬৯২ জন, ২৪ আগষ্ট ৫৭০ ও ৬০৯ জন, ২৩ আগষ্ট ৬৮৯ ও ৭৫৭ জন, ২২ আগস্ট ৭৬১ ও ৮৩৬ জন এবং ২১ আগষ্ট ৭১১ ও ৯১৫ জন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী এবছরও সেপ্টেম্বর মাসে রোগী বাড়বে কিনা জানতে চাইলে কীটতত্ত¡বিদ ড. মঞ্জুর চৌধুরী বলেন, বিগত ১০ থেকে ১১ বছরের পরিসংখ্যানে বেশিরভাগ সময় সেপ্টেম্বরেই রোগী বাড়ার প্রবণতা রয়েছে। চলতি বছর জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আক্রান্তের হার বেশি দেখা যাচ্ছে। যেহেতু গ্রামীণ এডিস এলবোপিকটাস দ্বিতীয় পর্যায়ের বাহক হিসেবে কাজ করে তাই বিষয়টি উদ্বেগের। তাছাড়া প্রান্তিক পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে মশা মারা হয় না। এমনকি প্রান্তিক জনগোষ্টিও এ বিষয়ে তেমন সচেতন নন। তাই সেপ্টেম্বরে রোগী বাড়ার একটা আশংকা রয়েছে। বাড়ার হার কেমন সেটা বুঝতে আরও ৭ থেকে ১০ দিন সময়ের প্রয়োজন।
এদিকে পরিসংখ্যান অনুযায়ী আসছে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সংখ্যা বাড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন আইইডিসিআর’র প্রাক্তন পরিচালক প্রফেসর ড. মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, যেহেতু এ বছর আগষ্ট মাসে একটি বড় ধরনের ‘পিক’ হয়েছে। তাই সেপ্টেম্বরে নতুন করে পিক হওয়ার আশংকা নেই বলেই চলে। ঢাকার বাইরে বর্তমানে যে হারে বাড়ছে সেটিও ধীরে ধীরে কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি। ড. মাহমুমুদর রহমান বলেন, এবছর আমাদের দেশে ডেঙ্গুর মৌসুম আগে শুরু হয়েছে তাই আগেই এটা নিয়ন্ত্রত পর্যায়ে আসবে।
পাঁচ মৃত্যু: দেশের পাঁচ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ছয় জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও দেলদুয়ারে দুই স্কুল শিক্ষার্থী, প্রায় একই সময় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫৫ বছর বয়সী এক নারী, পিরোজপুরে ৪ সন্তানের জননী এবং সোমবার মধ্যরাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক তরুনের মৃত্যু হয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সামন্তপুর এলাকার ডেঙ্গু আক্রান্ত এক স্কুলছাত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শাহজাহান মিয়া জানান, মঙ্গলবার ১০টার দিকে জিসান নামে এই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়। সে স্থানীয় ছোট দেওরা অগ্রণী উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটে জিসানের মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গু উলেখ করা হয়েছে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেঙ্গু আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিকিৎসক হুসাইন শাফায়াত জানান, মঙ্গলবার সকাল পোনে ১০টায় তাদের হাসপাতালে সুফিয়া বেগম (৫৫) নামে এই নারীর মৃত্যু হয়। তিনি সোমবার সকালে জ্বর ও মাথা ব্যথা নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসক হুসাইন বলেন, রক্ত পরীক্ষায় সুফিয়ার ডেঙ্গু ধরা পড়ে।
ডেঙ্গু নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি যুবক মাহবুবুর রহমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক একেএম শাহাদুজ্জামান জানান, সোমবার রাত ২টার দিকে মাহতাব (২৪) নামে ওই যুবকের মৃত্যু হয়।
পিরোজপুরে নাজিরপুরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৪ সন্তানের জননীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত মাহামুদা বেগম উপজেলার মধ্য কলারদোয়ানিয়া গ্রামের আমির হোসেনের স্ত্রী। পরিবারিক সূত্রে জানাগেছে, তিনি গত ৪ দিন আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে পরিবারের পক্ষ থেকে গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা অবস্থায় গতকাল ভোরে তার মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে ডেঙ্গু আক্রান্ত এএকরিম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমন মারা গেছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।