Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফের বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী

২৪ ঘন্টায় ভর্তি ১২৯৯ জন ৩ জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ২৬ আগস্ট, ২০১৯

রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের ৬৪ শতাংশই ঢাকায় এসে আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ ঢাকায় অবস্থানকালে বা ভ্রমনের জন্য ঢাকায় এসেই তারা এ রোগে আক্রান্ত হন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর এক জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য। ১ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ঢাকার বাইরের রোগীদের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। আইইডিসিআর’র জরিপে উল্লেখ করা হয়, গত ১ আগষ্ট ২০১৯ হতে হাসপাতালে ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে জ্বরের লক্ষণ প্রকাশের কাছাকাছি সময়ে থেকে ২ সপ্তাহ পূর্বে পর্যন্ত ঢাকায় ভ্রমনের ইতিহাস পাওয়া গেছে। জ্বরের লক্ষণ প্রকাশের প্রথম দিন থেকে ১০ দিনের মধ্যে তারা ঢাকা থেকে নিজ এলাকায় ফিরেছেন। অথবা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গেছেন। সেখানে গিয়েই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

আইইডিসিআর’র উল্লেখিত জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫ দশমিক শূন্য ভাগ মানুষ আক্রান্তের পূর্বে ঢাকায় ৩ দিন অবস্থান করেছেন। এছাড়া আক্রান্তদের ২২ দশমিক ১ শতংশ ঢাকায় ভ্রমন করেছেন দু’দিন, ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ ভ্রমন করেছেন ৫দিন এবং ১৩ দশমিক ২ শতাংশ মানুষের ৪ দিন পূর্বে ভ্রমনের ইতিহাস রয়েছে।

আইইডিসিআর’র পরিচালক প্রফেসর ডা.মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ঢাকায় অবস্থাকালে ডেঙ্গু জীবানু দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার পরে ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে যান। ফলে ঈদের ও ঈদ পরবর্তী সময়ে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি দেখা গেছে। বাকীরা কিভাবে আক্রান্ত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাকীরা সম্ভবত স্থানীয় ভাবে আক্রান্ত হয়েছে। তবে এ সংক্রান্ত একটি জরিপ বর্তমানে বরিশালে পরিচালিত হচ্ছে। এর ফল পাওয়া গেলে এবং ইতিমধ্যে পরিচালিত জরিপের ফলের সঙ্গে সমন্বয় করে সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য দেয়া যাবে।

এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) আরও ১ হাজার ২৯৯ জন রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। যা পূর্বের ২৪ ঘন্টার (শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) তুলনায় ১২০ জন বেশি। অর্থাৎ আক্রান্তে হার নিম্নমুখী হলেও সেটি ধারাবিহকতা রক্ষা করছে না। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু সন্দেহে ১৬৯টি মৃত্যুর তথ্য রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এ এসেছে। এরমধ্যে এ পর্যন্ত ৮০টি মৃত্যুর পর্যালোচনা করে ৪৭টি নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক জনসহ ৩ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা এখনও সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এ নিয়ে চলতি মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাড়ালো ১৭২ জনে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, গত ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৩ হাজার ৫১৪জন। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরেছেন ৫৭ হাজার ৪০৫ জন। যা মোট আক্রান্ত রোগীর ৯০ শতাংশ। শুধু চলতি আগষ্ট মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৫ হাজার ৫৩ জন। বর্তমানে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫ হাজার ৯৪০ জন। এরমধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ৩২৬৮ জন এবং অন্যান্য বিভাগে ২৬৭২ জন। এ পর্যন্ত আইইডিসিআর-এ পর্যালোচনার জন্য ১৬৯ জন রোগীর তথ্য এসেছে। যারমধ্যে ৮০ জনের পর্যালোচনা সম্পন্ন করে ৪৭ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

মৃত্যু তিন : ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন এবং মাদারীপুরের শিবচর হাসপাতাল থেকে ঢাকা নেয়ার পথে সুমি আক্তার (৩০) নামের এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে। তিনি ২০ আগষ্ট স্বাস্থ্য কমপেক্সে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবনতি ঘটলে রাতে ঢাকা নিতে বলা হয়। এ সময় পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকা আসার পথে মাঝ নদীতে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শিবচর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল মোকাদ্দেস।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর ফজলুর রহমান (৫৫) শুক্রবার ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, ঢাকা মেডিকেলে ‘ডেথ রিভিউ’ প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় ফজলুর রহমান ডেঙ্গুতেই মারা গেছেন কি না- তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে শনিবার যে ৫৬৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতলে ভর্তি ছিলেন, ফজলুর রহমান তাদেরই একজন। এছাড়া পাবনার সাঁথিয়ার জীবন নাহার রত্মা (৪৪) নামে এক স্কুল শিক্ষিকা ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গতকাল মারা গেছেন।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে গতকাল (রোববার) আরও ৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৫৭ জন ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ১০ জন। এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ২৫৬ জন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। চমেক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪১৪ জন।
পাবনা : পাবনা জেনারেল হাসপাতালে গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ১১ জন। ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৪ জন। বেডে চিকিৎসাধীন আছেন ২২ জন রোগী। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা: রঞ্জন কুমার দত্ত গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এই তথ্য জানান।

শিবচর (মাদারীপুর) : মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে ডেঙ্গু আক্রান্ত সুমি আক্তার(৩০) নামের এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে। লাশটি গত শনিবার মধ্যরাতে তার বাড়ি জেলার শিবচর উপজেলার কাঠালবাড়িতে আনা হয়েছে। এনিয়ে শিবচরে ৪ জনসহ মাদারীপুরে এখন পর্যন্ত ৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে গত ৩ দিনে শিশুসহ ১০ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে সরকারি হিসেব অনুযায়ী উপজেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩ জন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গু

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ