Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছুটিতে তিন বিচারপতি, পেশাগত অসদাচরণের তদন্ত

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৪৭ এএম


হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতিকে বিচারিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের নাম বাদ দিয়েই মামলার দৈনন্দিন কার্যতালিকা (কজলিস্ট) প্রণীত হয়। এর ফলে তারা কোনো বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেননি। দুপুরে তিন বিচারপতি ছুটির আবেদন জানিয়েছেন। তিন বিচারপতি হলেন, বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, কাজী রেজা-উল হক এবং বিচারপতি একেএম জহিরুল হক।

গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্রিফিং করা হয়। প্রধান বিচারপতির বিশেষ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার সাইফুর রহমান ব্রিফিংয়ে বলেন, তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তাদের বিচার কার্য থেকে বিরত রাখা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের কথা ওই তিন বিচারপতিকে অবহিত করা হয়েছে। এর পরপরই তারা ছুটির আবেদন করেন। কে তদন্ত করেছে? ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ নাকি জাতীয় সংসদÑ এমন প্রশ্ন করা হলে কোনো উত্তর দেননি সাইফুর রহমান।

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের দপ্তর থেকে জানানো হয়, তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। এ কারণে তাদেরকে দায়িত্ব থেকে তাদের বিরত রাখা হয়েছে। তবে এই তদন্ত সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়টি শুনেছি। তবে এটা প্রধান বিচারপতি ও প্রেসিডেন্টের বিষয়। তাই আপাতত এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।

এর আগে চলতিবছর ১৬ মে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিচারিক আদালতের মামলায় হস্তক্ষেপ করে ডিক্রি পাল্টে দেয়ার অভিযোগ ওঠে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী এবং বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চ। সান মুন স্টার গ্রæপের মালিক মিজানুর রহমান বনাম ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানিকালে বিষয়টি ধরা পড়ে। ওই ঘটনা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আপিল বিভাগে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অবৈধ হস্তক্ষেপ করে ডিক্রি জারির মাধ্যমে হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ রায় পাল্টে দিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের এ অভিযোগের ধারাবাহিকতায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট অর্থঋণ আদালতের (নিম্ন আদালত) মামলাটির সব ডিক্রি ও আদেশ বাতিল করেন। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার গোলাম রব্বানী। পরে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আদেশটি প্রত্যাহার করেন।

ওই ঘটনার সূত্র ধরেই এ বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী এবং বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে কি না সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। হাইকোর্ট বিভাগের মূল ভবনের ১০ নম্বর এজলাসে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী এবং বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ ডিভিশন বেঞ্চে বসতেন। বুধবার পর্যন্ত সালমা মাসুদ চৌধুরী এ বেঞ্চে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অন্যদিকে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক মূল ভবনের ৬ নম্বর এজলাসে এবং বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক অ্যানেক্স ভবনের ৩০ নম্বর এজলাসে বসতেন।

বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী হাইকোর্টের ৯৯ জন বিচারপতির মধ্যে দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। ২০০২ সালের ২৯ জুলাই তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হোন। ২০০৪ সালে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে স্থায়ী হোন। বিচারপতি কাজী রেজা উল হক ২০১০ সালে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ২০১২ সালে তাকে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বিচারপতি একেএম জহিরুল হক ২০১০ সালে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হোন। ২০১২ সালে এ পদে স্থায়ী হোন। বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভের আগে তিনজনই সুপ্রিম কোর্ট বারে আইনজীবী ছিলেন।

এদিকে সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুবউদ্দীন খোকন সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শুধুমাত্র তিন বিচারপতিই নন-আরও অনেক বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে বিষয়টি প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেছি। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকাশ্যে দুর্নীতি করেন। আইনজীবীরা তাদের কাছে প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত ও বিচারাঙ্গনের ভাবমর্যাদা রক্ষায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আমরা সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করার বিষয়টিকে স্বাগত জানাই। তবে এ তদন্ত কারা করছে, তা স্পষ্ট করারও দাবি জানাচ্ছি। খোকন বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আবারও পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। এখন এটির কার্যক্রম কি অবস্থায় রয়েছে আমরা জানি না। তাই এটি স্পষ্ট করা দরকার।

তিনি বলেন, বিচার বিভাগে আরও অনেকে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে এর আগে প্রধান বিচারপতিকে বারের পক্ষ থেকে অবহিত করেছি। তিনি এ বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত কাজ অব্যাহত রাখবেন বলে আশা করি।

 

 



 

Show all comments
  • Babar ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
    অনুসন্ধানমূলক বিস্তারিত তথ্য আশা করছি। তিনজন বিচারপতি ওনারা কারা?
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Afsaruddin ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
    It is a very serious concern for the country's highest court's integrity and respect and people's confidence . It is definitely very sad and unfortunate situation. Bizarre , puzzlement and shameful.
    Total Reply(0) Reply
  • Najmul Hasan ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
    সত্য এবং বাস্তব ঘটনার আসল খবর পাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম
    Total Reply(0) Reply
  • Shamaun Iqbal Shamun ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
    তিন বিচারপতির ছুটি কিংবা অব্যাহতি দিয়ে পার পাওয়ার সুযোগ নাই! এই বিচারপতিগণ কর্তৃক নিস্পত্তি হওয়া সকল মামলা নতুন করে রিভিও করে দেখা হোক! যদি কোনো বিচার প্রার্থী কিংবা আসামি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে তাহলে এই বিচারপতিগণকে ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • HàBíb Islåm ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
    ইতিহাস হারিয়ে যায় না।ইতিহাস বার বার ফিরে আসে।এখানে একজন বিচারপতি আছেন যিনি,আওয়ামীলিগকে খুশি করতে গিয়ে,নিজেক বিশস্ত প্রমান করতে গিয়ে,একটি মামলায় রায় দিয়েছিল তারেক রহমানের কোনো কথা কিংবা বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার যাবে না।ভাগ্যের নির্মম পরিহাস,সেই আওয়ামীলিগ আজ তাকে .. দিল।
    Total Reply(0) Reply
  • Amzad Hossain ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
    জনগন জানতে চায় তাদের অপরাধ কি?
    Total Reply(0) Reply
  • Belal Hossain ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
    এস কে সিনহা এর ভাগ্য বরন করতে যাচ্ছে এই তিন জন।
    Total Reply(0) Reply
  • Babu Haq ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ৯:৪৩ এএম says : 0
    Their all facility should also turn off untill they verified...
    Total Reply(0) Reply
  • Abul Kalam ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ৯:৪৩ এএম says : 0
    জাতী গত ভাবে এটাই আমাদের বড় ব্যর্থতা যে সাধারন মানুষের মৌলিক অধিকার গুলো নিশ্চিৎ করা যায়নি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিচারপতি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ