পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অবিশ্বাস্য ধূর্ত প্রতারক শাহীন। প্রতারণা করেই পথের ভিখারী থেকে কোটিপতি সে। আছে বাড়ি, জমি, দামি গাড়ি। কখনও অর্থমন্ত্রীর কন্যা, কখনও তার এপিএস, কখনও বিসিএস ক্যাডারের নামে প্রতারণা করে সে। আর এ প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অনেককে করেছে সর্বশান্ত।
টাকার বিনিময়ে বদলি থেকে শুরু করে মসজিদ নির্মাণের নামে টাকা-পয়সাও হাতিয়ে নিয়েছে সে। তার প্রতারণার জাল বিস্তৃত হয় দেশ-বিদেশে। কথা অনুযায়ী কাজ না করলে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পার্বত্য জেলায় শাস্তিমূলক বদলিরও হুমকি দিয়েছে সে। কুমিল্লায় পুলিশের হাতে গত বছরের মার্চ ও সেপ্টেম্বরে দুই দফায় গ্রেফতার হলেও কারাগার থেকে বেরিয়ে যায় সুচতুর এ প্রতারক।
সর্বশেষ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামালের কণ্ঠ নকল করে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারের কাছে তদবির করতে এসে ধরা পড়ে সে। তিনদিনের রিমান্ডের গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে চট্টগ্রাম জেলার জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। পুলিশের জেরার মুখে প্রতারণার নানা কৌশল ও বিভিন্নজনের কাছ থেকে অর্থ এবং সুযোগ-সুবিধা আদায়ের নানান কাহিনীও বর্ণনা করে শাহীন। পাঁচ ছয় রকমের কথা বলতে পারে সে। মানুষের কণ্ঠস্বর নকলেও পারদর্শী এ প্রতারক। আজ শুক্রবার রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হবে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শাহীন জানায়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের হতদরিদ্র কৃষক পরিবারে তার জন্ম। তার পিতার নাম এনামুল হক। অভাবের তাড়নায় ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে সে। একপর্যায়ে ঢাকায় গিয়ে নাট্যদলের সাথে কিছুদিন কাজ করে। সেখানে সে মানুষের কণ্ঠ নকল করার তালিম নেয়। এরপর কুমিল্লায় ফিরে এসে শুরু হয় তার প্রতারণা। কয়েক বছর আগে তৎকালীন পরিকল্পনা মন্ত্রী ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর কন্যার কণ্ঠস্বর নকল করে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে নানা তদবির শুরু করে সে। একইসাথে চলে চাঁদাবাজিও। এ অপকর্ম করতে গিয়ে ২০১৮ সালের মার্চ ও সেপ্টেম্বরে দুই দফা গ্রেফতার হয় সে।
আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে নেতা ও কর্মকর্তাদের সাথে ছবি তুলে ফেইসবুকে সেই ছবি ছড়িয়ে দিত সে। বাইরে সে নিজেকে অর্থমন্ত্রীর কন্যার পিএস পরিচয় দিতো। আবার টেলিফোনে তার কণ্ঠ নকল করে তদবির করতো। যে কর্মকর্তার কাছে ফোনে তদবির করা হতো পরবর্তীতে কাজ হয়েছে কিনা তা জানার জন্য সে নিজেই যেতো। অর্থমন্ত্রীর বিভিন্ন ছবি তার ভুয়া ফেইসবুক আইডিতে আপলোড করা হতো। এতে করে অনেকে প্রতারিত হতেন।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরেআলম মিনাকে ওই প্রতারক ফোন করে প্রথমে অর্থমন্ত্রীর প্রসঙ্গে বেশকিছু কথা বলে। তিনি বিদেশে আছেন এ তথ্যও জানায়। পুলিশ সুপার বলেন, বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য যা যা বলা দরকার সবকিছুই সে টেলিফোনে বলেছে। এত নিখুঁতভাবে সে সবকিছু বলে যাচ্ছিল বোঝার উপায় নেই সে ভুয়া। তবে পরে কয়েকবার কথা বলে আমি নিজেই বুঝতে পারি সে একজন প্রতারক। আর তখনই তাকে জালে আটকানো হয়।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, শাহীন ধূর্ত একজন প্রতারক। প্রতারণা করতে গিয়ে ধরা পড়ার পর কুমিল্লায় সে তার অপকর্ম কমিয়ে দিয়েছে। এরপর সে বাইরের জেলাগুলোতে তার প্রতারণার জাল বিস্তার করে। কুমিল্লার সবাই এখন তার প্রতারণার বিষয়টি জানে। তার বিরুদ্ধে মামলা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব মামলা এখন বিচারাধীন। গ্রেফতারের পর তার কাছে প্রতারিত অনেকেই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মশিহুদ্দৌলা রেজা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গ্রেফতার শাহীন আপাদমস্তক একজন প্রতারক। তার প্রতারণার কৌশল এবং টার্গেটও অভিনব। তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেকে। চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার প্রবাসী দিদারুল আলমও তার প্রতারণার শিকার হন। বিসিএস ক্যাডার পরিচয়ে ভুয়া আইডি খুলে ওই প্রবাসীর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে সে। এরপর নানা অজুহাতে তার কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
সে টাকা ফেরত চাইলে ওই প্রতারক অর্থমন্ত্রীর মেয়ের পিএস পরিচয়ে মীরসরাই এসে তাকে হুমকি দিয়ে যায়। একপর্যায়ে সে পুলিশ সুপার নূরেআলম মিনাকে ফোন করে ওই যুবককে গ্রেফতার করতে বলে। তাকে ধরতে গিয়ে প্রতারণার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। এ ঘটনায় জোরারগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা হয়েছে জানিয়ে মশিহুদ্দৌলা রেজা বলেন, প্রয়োজন হলে তাকে আবারও রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এদিকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শাহীন স্বীকার করেছে, সে কুমিল্লার বেশ কয়েকজন সাবেক এসপি ও ডিসি এবং ইউএনওকে এখনও ফোনে বিভিন্ন কাজ করে দিতে তদবির করেন। চট্টগ্রামের মীরসরাই ছাড়াও রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ির কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার কাছে সে একই পরিচয়ে তদবির করেছে। কুমিল্লা ও আশপাশের জেলার এসিল্যান্ডের কাছে তদবির করে নিজেও হাতিয়ে নিয়েছেন সরকারি জমি।
আবার টাকার বিনিময়ে অনেককে খাস জমি লিজ নিয়ে দিয়েছেন এ প্রতারক। তার প্রতারণার শিকার মীরসরাইয়ের প্রবাসী দিদারুল আলমকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে গিয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরেআলম মিনার হাতে ধরা পড়েন প্রতারক শাহীন। গত সোমবার কৌশলে তাকে চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেফতারের পর প্রতারণার মামলায় তিনদিনের রিমান্ডে আনা হয়। তার সাথে তার সহযোগী মো. হারুনও রিমান্ডে রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।