Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নিরাপত্তা প্রশ্নে বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে চায় ঢাকা

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ ২৪ জুন

প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : নিরাপত্তার প্রশ্নে বিব্রতকর যে কোনো ধরনের পরিস্থিতির দায় এড়াতে চায় ঢাকা। বাংলাদেশে উগ্রপন্থিদের হুমকি থাকলেও দেশি-বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছেÑ সেই বার্তাই ওয়াশিংটনকে দিতে চান ঢাকার কর্মকর্তারা। আগামী ২৪ ও ২৫ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় পঞ্চম পার্টনারশিপ ডায়ালগ বা অংশীদারি সংলাপে এ নিয়ে দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তবে এ সংলাপে বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। দু’দিনের ওই সংলাপে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। তার সঙ্গে থাকবেন সরকারের অর্থ, স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য, আইন ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও বিনিয়োগ বোর্ডের প্রতিনিধিরা।
সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনীতি বিভাগের নবনিযুক্ত আন্ডার সেক্রেটারি থমাস এ শ্যানন। স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফোর্থ র‌্যাংকিং ওই কর্মকর্তার সঙ্গে দেশটির বিভিন্ন ব্যুরো ও দপ্তরের কর্মকর্তারা সংলাপে অংশ নেবেন। ঢাকায় মার্কিন মিশনের এক কর্মকর্তা তার বন্ধুসহ নিজ বাসায় খুনের ঘটনায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির জরুরি বার্তা নিয়ে ঢাকা সফর করে যাওয়া এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিশা দেশাই বিসওয়ালও সেখানে উপস্থিত থাকছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী হামলায় দেশি-বিদেশি নাগরিকদের হত্যাকা-ের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। অন্যদিকে গত তিন মাসে মার্কিন সাহায্য সংস্থার এক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন হত্যাকা-ের ফলে ঢাকায় নিজেদের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত ওয়াশিংটন। এ পরিস্থিতিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টি বেশ জোর দিয়েই বলছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নিশা দেশাই বিসওয়ালসহ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তিনজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সফরের সময় ওয়াশিংটনের দেয়া সহযোগিতা প্রস্তাবে বাংলাদেশ ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছে। ওই তিনজন কর্মকর্তার সফরের সময় নিরাপত্তা সহযোগিতার কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা নেয়া হবে ‘প্রয়োজনীয়তার মূল্যায়নের’ পর বাংলাদেশ তা সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়েছে। দুই দেশের নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদারে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতার কথা বারবার বললেও বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এবারই প্রথম উল্লেখ করেছে কোন কোন ক্ষেত্রে সহায়তার প্রয়োজন। মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ সাইবার (আন্তর্জাল) নিরাপত্তার অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারের ব্যবহার, তথ্য আদান-প্রদান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামর্থ্য বাড়াতে প্রশিক্ষণের কথা তুলেছে।
গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক নিরাপত্তা বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্রেগরি বি স্টারের নেতৃত্বে আরেকটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে যায়। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দু’দিনের সফরে প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশে মার্কিন কূটনীতিকদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টিতে আলোচনা করেছেন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সাথে। কূটনৈতিক এবং অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ঢাকার বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন তাদের কার্যালয় এবং আবাসস্থলের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য লিখিতভাবে জানিয়েছে। আর এর পরবর্তী সময়ে মার্কিন এ নিরাপত্তা প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফর ছিল তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, সামগ্রিক এ পরিস্থিতির কারণে আগামী ২৪-২৫ জুন অনুষ্ঠেয় দুই দেশের অংশীদারিত্ব সংলাপেও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের প্রসঙ্গটি বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মতো বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে আমাদের নিজেদের বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন প্রয়োজন। এরপর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে সহযোগিতার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতাকে বিশেষভাবে বিবেচনায় নেয়া যায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সহযোগিতা ঘনিষ্ঠতর করার ব্যাপারে দুই দেশ সম্মত হলেও এখনই নতুন করে কোনো চুক্তি হচ্ছে না। ২০১৩ সালের অক্টোবরে দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ সহযোগিতা উদ্যোগ’ শীর্ষক সমঝোতা স্মারকের আওতায় দুই দেশ নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়াবে।
ওই সমঝোতা স্মারকে সন্ত্রাসবাদ, আন্ত:সীমান্ত অপরাধ ও সন্ত্রাসী সংগঠনের বিস্তৃতি রোধ করতে দুই দেশ জোরালো অঙ্গীকার করেছে। এতে কার্যকরভাবে সন্ত্রাসবাদ দমনে আধুনিক কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে সামর্থ্য বাড়ানো, মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন রোধ, দুই পক্ষের প্রয়োজন অনুযায়ী সমন্বিত সাইবার অপরাধ রোধে নিরাপত্তা এবং বন্দর ও সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত, নীতিমালা চূড়ান্ত করার সমীক্ষায় সহযোগিতার পাশাপাশি সন্ত্রাসী হামলা-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় অভিজ্ঞতা বিনিময়ের কথা বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি পারস্পরিক সম্মতিতে ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নিয়ে আলোচনার উল্লেখ আছে ওই সমঝোতা স্মারকে।
এদিকে, অস্ত্রসহ বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য গত মাসে একটি প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। কিন্তু স্থানীয় আইনে এ বিষয়ে কোনও বিধান না থাকায় বাংলাদেশ সরকার এ প্রস্তাবে আগ্রহী হয়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ মাসের শেষ সপ্তাহে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক ও  যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনীতি-বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি টম শ্যানন বসছেন পঞ্চম অংশীদারিত্ব সংলাপে।  
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দেয়া স্বাগতিক দেশের দায়িত্ব এবং সেটি স্থানীয় আইন অনুযায়ী দেয়া হয়। বাংলাদেশের আইন অস্ত্রসহ বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা সমর্থন করে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এর আগে এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা বলেছি তোমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) কাছে যদি অ্যাডভান্স তথ্য থাকে, সেটি আমাদের দেয়ার জন্য। আমরা বলেছি আধুনিক প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। সেই জায়গায় তারা যদি হার্ডওয়্যার বা সফ্টওয়্যার দিয়ে সহায়তা করতে পারে, বিশেষ করে কাউন্টার টেরোরিজম ও সাইবার ক্রাইমের ক্ষেত্রে, তাহলে আমাদের অফিসারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি করুক। এই বিষয়ে অনুরোধ করেছি।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে অংশীদারিত্ব সংলাপে পররাষ্ট্র সচিবকে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অবহিত করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র কী সহায়তা দিতে আগ্রহী, সেটি নিয়েও আলোচনা হবে।
সউদি আরবে যাওয়ার আগে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের অংশীদারিত্ব সংলাপ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়। অংশীদারিত্ব সংলাপে উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও বাণিজ্য এ তিনটি আলোচিত বিষয় থাকলেও নিরাপত্তা ইস্যুটি এবার প্রাধান্য পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
পররাষ্ট্র সচিবের সাথে বার্নিকাটের বৈঠকের পর জানা গেছে, দুই দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক সফরে নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাব বিষয়ে পর্যালোচনা হবে অংশীদারিত্ব সংলাপে। এবারের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা (জিএসপি) পুনর্বহালের বিষয়টি তুলবে না বাংলাদেশ। তবে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বিষয়ক কর্মদলের বৈঠকে শ্রম অধিকার ও কর্মপরিবেশের প্রসঙ্গ এলে বাংলাদেশ সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিরাপত্তা প্রশ্নে বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে চায় ঢাকা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ