Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মশা নিধনে তৎপরতা বাড়লেও কমছে না ডেঙ্গু আক্রান্ত

২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১৬২৬

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

এডিস মশা নিধনে তৎপরতা বাড়লেও প্রায় প্রতিদিনই দেড় হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৬২৬ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগের দুই দিন নতুন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা কম ছিল, গত মঙ্গলবার এক হাজার ৫৭২ এবং সোমবার এক হাজার ৬১৫ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গত জুনে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়ার পর ব্যাপকতা বাড়ে জুলাইয়ে। সরকারি হিসাবেই রেকর্ড ১৬ হাজার ২৫৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। তবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আগের মাসের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি হয়ে ওঠে, ৭ আগস্ট একদিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪২৮ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

এই অবস্থা চলতে থাকে সপ্তাহখানেক, প্রতিদিনই দুই হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে যান। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যার গ্রাফে অবনমন ঘটে ঈদের পরদিন, ১৩ আগস্ট মাত্র এক হাজার ২০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে তার পরের দিন থেকেই আবার ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে একদিন এক হাজার ৪৬০ জন হলেও বাকি দিনগুলোতে সংখ্যাটি দেড় হাজারের বেশিই রয়েছে।

ডেঙ্গু নিয়ে উৎকণ্ঠা-উদ্বেগ ও সমালোচনার মধ্যে ঈদের আগেই এই রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশা নিধনে বিদেশ থেকে নতুন ওষুধ আনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। সেই ওষুধ নিয়মিত ছিটানোও হচ্ছে ঢাকা শহরজুড়ে। মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার হয়েছে বলে মনে করছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। মশার প্রজননস্থলগুলো ধ্বংসে সফলতা না এলে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরো বাড়বে বলে গত মাসে সতর্ক করেছিলেন তিনি। সেই সফলতা কতটুকু জানতে চাইলে সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এখন পর্যন্ত মনে হয় ভালোই কন্ট্রোল হচ্ছে। যদিও এখনও অনেক এরিয়া আছে যেখানে আমাদের কাজ করতে হবে। তবে কার্যক্রম আগের তুলনায় জোরদার হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই।

এর মধ্যেও নতুন করে মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে থাকায় আগস্টের এই ২১ দিনে সারা দেশে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৫৩৪ জন। আর এ বছর এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ৯৯৫ জন।

এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪৭ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসকদের কাছ থেকে অন্তত ১৭৪ জনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে নতুন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমলেও সারা দেশে বেড়ে গেছে। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ঢাকায় ৭১১ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, যেখানে আগের দিন এই সংখ্যা ছিল সাড়ে সাতশ’। এদিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ৯১৫ জন।

তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ছয় হাজার ২৭৮ জন। রাজধানীতে তিন হাজার ৩৬০ জন এবং ঢাকার বাইরে দুই হাজার ৯১৮ জন।

এর আগে মঙ্গলবার পর্যন্ত ছয় হাজার ৪৭০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ঢাকায় তিন হাজার ৪১৩ জন এবং দেশের অন্যান্য হাসপাতালে তিন হাজার ৫৭ জন ভর্তি ছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে যত রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তার থেকে বেশি রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন।

রাজধানীতে ভর্তি হয়েছেন ৭১১ জন। আর সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন ৭৬৪ জন। দেশের অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯১৫ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন এক হাজার ৫৪ জন।

রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগে ২৯৫ জন, খুলনা বিভাগে ১৭৫ জন, বরিশাল বিভাগে ১২৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ৯৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫২ জন, রংপুর বিভাগে ৪০ জন এবং সিলেট বিভাগে ১১ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা প্রায় ৩ হাজারে অতিক্রম করেছে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৭ জন। এছাড়াও বাইরে বিভিন্ন পর্যায়ে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নেয়া রোগীর সংখ্যা আরো দু হাজারেরও বেশি। তবে এ ব্যাপারে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর কোন মন্তব্য করেনি। ইতোমধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন প্রায় ১৪শ’ রোগী।

এ অবস্থাতেই সরেজমিনে দক্ষিণাঞ্চলের ডেঙ্গুজ্বর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে খুব শীঘ্রই আইসিডিডিআরবি’র একটি গবেষণা প্রতিনিধিদল দক্ষিণাঞ্চলে আসছে বলে জানা গেছে। ঢাকাসহ দেশের বেশীরভাগ এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করলেও দক্ষিণাঞ্চলে তা হতাশাব্যাঞ্জক বলে মনে করছে আইসিডিডিআরবি। বরিশালের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলেও পিরোজপুরসহ কয়েকটি এলাকায় রোগী কিছুটা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন।

এদিকে গতকাল বুধবার সকালের পূর্ববর্তী ৯৬ ঘণ্টায় দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় আরো ৫৭৫জন ডেঙ্গজ্বর নিয়ে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত সোমবার বরিশালের শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের এক কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু হয়। গতকাল সকাল পর্যন্ত এ অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৩ হাজার ৩১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বলা হয়েছে। দিনের শেষে তা প্রায় সাড়ে ৩ হাজারের কাছে পৌঁছেছে।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছে। গতকাল বুধবার হাসপাতালে মোট চিকিৎসাধীন রয়েছে ৫০ জন ডেঙ্গুরোগী। টাঙ্গাইলে জেলায় সর্বমোট ৩৬৪জন ডেঙ্গু রোগী আক্রন্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গু

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ