পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর হত্যা মামলার তদন্তে পথ হারিয়েছে পুলিশ। পুলিশসহ ৫টি সংস্থা চাঞ্চল্যকর মামলাটি তদন্ত করছে। ৫ দিনে তাদের তদন্তের ফলাফল এখনও শূন্য। তদন্তে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি। দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী লোমহর্ষক এ হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটন করা যায়নি। চিহ্নিত কিংবা গ্রেফতার করা যায়নি খুনীচক্রের সদস্যদের। গত রোববার সকালে বন্দরনগরীর ব্যস্ততম জিইসি মোড়ের অদূরে ও আর নিজাম রোডে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মিতুকে।
হত্যাকা-ের ২৪ ঘণ্টা পর বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি ওইদিনই নগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। ঘটনার পর থেকে পুলিশের পাশাপাশি ডিবি, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), এলিট বাহিনী র্যাব এবং পুলিশের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স মামলাটি তদন্ত করছে। তবে গতকাল পর্যন্ত উল্লেখ করার মতো কোন অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছেন সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য।
মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকা-ের পরপর এটি জঙ্গিগোষ্ঠীর কাজ বলে দাবি করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মোঃ ইকবাল বাহার। একই সময়ে সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে বিজিবি’র এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও মিতুর খুনী হিসেবে জঙ্গিদের প্রতি সন্দেহের তীর ছোঁড়েন। পরদিন ঢাকায় গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে, ইতোমধ্যে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে, পুলিশ ৪জনকে ধরে ফেলেছে। পরে দেখা যায়, ওই ৪জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে সেটিও এ ঘটনায় ব্যবহৃত হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেলে ব্যবহৃত নাম্বার প্লেটটি ভুয়া। যে নাম্বারটি এতে ব্যবহার করা হয়েছে সেই মোটরসাইকেলটি সাতকানিয়ায়। ওই মোটরসাইকেলের মালিক গতকাল সেটি সাতকানিয়া থানায় নিয়ে পুলিশের কাছে জমা দেন। যাচাই-বাছাই করে পুলিশ সেটি ছেড়ে দিয়েছে। হত্যাকা-ের একদিন পর নগরীর বাদুরতলা বড় গ্যারেজ নামক এলাকা থেকে পরিত্যক্ত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে পুলিশ। ওই মোটরসাইকেল উদ্ধারের পর এ ঘটনায় জঙ্গির সাথে শিবিরকেও সন্দেহ করে পুলিশ। পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার সাংবাদিকদের বলেন, মোটরসাইকেলটি যেখানে পাওয়া গেছে সেটি জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকা। আবার খুনীরা খুন করে গোলপাহাড় হয়ে বাদুরতলা দিয়ে পালিয়ে যায়। সে এলাকাও জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত। আর এ যুক্তিতে তিনি এ ঘটনায় শিবির জড়িত বলে সন্দেহ করেন।
এর একদিন পর সাবেক এক শিবির কর্মী সন্দেহে হাটহাজারী থেকে আবু নসর গুন্নু নামে এক মাজারের খাদেমকে ধরে নিয়ে আসে ডিবি। গতকাল তার পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, তিনি এ হত্যাকা-ে জড়িত নন। মুসাবিয়া দরবার শরীফ নিয়ে বিরোধের জের ধরে এক পক্ষ তাকে এ ঘটনায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে। পরিবারের দাবি আমলে না নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করে। আদালত কোন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে এ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে তা জানতে চান তদন্ত কর্মকর্তার কাছে। প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণসহ আগামী রোববার আদালতে হাজির হতে বলা হয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে। ওইদিন রিমান্ড আবেদনের উপর আদালত শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
আইনজীবীরা জানান, আদালত মামলাটি স্পর্শকাতর উল্লেখ করে সতর্কতার সাথে তদন্ত করার জন্য পুলিশকে পরামর্শ দেন। এদিকে হত্যাকা-ের সময় একটি মাইক্রোবাস খুনীদের পাহারা দিচ্ছিল বলে পুলিশ দাবি করে। বুধবার রাতে ওই মাইক্রোবাসটি আটক করা হয়েছে বলেও জানান নগর পুলিশের কর্মকর্তারা। তবে জানা যায়, মিডিয়ায় একটি কালো মাইক্রোবাসকে পুলিশ খুঁজছে এমন খবর পেয়ে ওই মাইক্রোবাসের চালক মাইক্রোবাসটি নিয়ে সিএমপির সদর দপ্তরে হাজির হন। মাইক্রোবাস চালক জানে আলম পুলিশের কাছে দাবি করেছেন তিনি ঘটনার পরপর ওই এলাকা অতিক্রম করছিলেন। রাস্তায় রক্তাক্ত এক মহিলার লাশ দেখে তিনি গাড়ির গতি কিছুটা থামিয়ে ওই দৃশ্য দেখেন। এরপর ভয়ে দ্রুত গন্তব্যে চলে যান। তিনি খুনীদের পাহারা দিয়েছেন কিংবা তার গাড়িতে খুনীরা কেউ ছিল এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন চালক।
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে কখনও মোটরসাইকেল উদ্ধার, কখনও মাইক্রোবাস উদ্ধার, আবার কখনও খুনীদের সহযোগী সন্দেহে একজনকে পাকড়াও করার তথ্য প্রচার করা হলেও হত্যাকা-ের মূল রহস্য উদঘাটনে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। মিতু ওইদিন নির্ধারিত সময়ের আগে কেন সন্তানকে স্কুল বাসে তুলে দিতে বাসা থেকে বের হলেন তার জবাব এখনও পায়নি পুলিশ। গতকাল দুপুরে সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন) দেবদাস ভট্টাচার্য নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তিনি বলেন, আমরা বাবুল আক্তারসহ সবার সাথে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে মিতু প্রতিদিন সকাল সাতটায় বাসা থেকে বের হতো ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দেয়ার জন্য। অতিরিক্ত কমিশনার জানান, প্রতিদিন সকাল সাতটা ১৫ মিনিটে বাস আসে। উনি (মিতু) সাতটায় বাসা থেকে বের হতেন। ওইদিন কেন সাড়ে ছয়টায় বের হয়েছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি।
প্রতিবেশীরা জানান, মিতু’র মোবাইলে অন্যদিনের তুলনায় তাড়াতাড়ি স্কুল বাস আসবে বলে একটি এসএমএস আসে। এ প্রেক্ষিতে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, হত্যাকা-ের পর থেকে এসপি পতœীর মোবাইল ফোনটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ কর্মকর্তা দেবদাস বলেন, তার (মিতু) মোবাইলে কোন এসএমএস আসেনি। সিসিটিভি ফুটেজে হত্যাকারীরা মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাবার পর ওই স্থান অতিক্রম করা কালো মাইক্রোবাসটিকেই আটক করা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, মাইক্রোর চালক জানে আলমকেও আটক করা হয়েছে। তার বাড়ি সীতাকু-ের সলিমপুরে। সে নিজেই মাইক্রোবাসটির মালিক। এটিতে কারা ছিল এবং গাড়িটির গতিবিধি সম্পর্কে জানে আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। উগ্র জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী হত্যাকা- ঘটাতে পারে এমন ধারণা থেকেই তদন্ত চলছে উল্লেখ করে পুলিশ কর্মকর্তা দেবদাস বলেন, বাবুল আক্তার অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করেছে। তাদের মধ্যে অনেকেরেই আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রয়েছে। তাই সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সুপার স্ত্রীর হত্যাকারীদের খুঁজতে পুলিশের সকল ইউনিট কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যথাযথ প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত সুস্পষ্ট কিছু বলা যাবে না।
কোন তথ্যে গুন্নু গ্রেফতার জানতে চায় আদালত
পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম ওরফে মিতু আক্তার হত্যাকা-ের ঘটনায় আবু নসর গুন্নুকে (৪৫) কোন সূত্রে ও তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন আদালত। মহানগর হাকিম আবদুল কাদেরের আদালতে গুন্নুর রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে আগামী রোববার শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী জানান, মিতু হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার গুন্নুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন জানায় গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় কোন সূত্রে ও কি ধরনের তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে গুন্নুকে গ্রেফতার করা হয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে তা জানতে চান আদালত। উত্তরে তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, মিতু হত্যার সময় গুন্নু ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল, তা মোবাইল ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এ সম্পর্কিত তথ্য প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। তথ্য প্রমাণগুলো আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি কেন তা জানতে চান বিচারক। গুন্নু গ্রেফতার সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রমাণ হাজির করার নির্দেশ দিয়ে রোববার রিমান্ড শুনানির দিন নির্ধারণ করেন আদালত। মিতু হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মঙ্গলবার গভীর রাতে আবু নসর গুন্নুকে মূসাবিয়ার মাজার থেকে আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, নছর সাবেক শিবির কর্মী। সে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। মিতু আক্তার হত্যাকা-ের সঙ্গে সে যুক্ত থাকতে পারে, এই সন্দেহে তাকে আটক করা হয়েছে। তবে এরপরই আবু নাছের গুন্নুকে (৪৫) মাজারকেন্দ্রিক বিরোধে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে। মূসাবিয়ার মাজারের আধিপত্য নিয়ে আধ্যাত্মিক সাধক মূসাবিয়ার দুই মেয়ে শামসুন্নুর মনিরা সিদ্দিকা ও হামিদুন্নেছা সিদ্দিকার মধ্যে বিরোধের জেরে এক মেয়ের অনুসারী গুন্নুকে স্পর্শকাতর এ মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। গুন্নু কখনোই ছাত্রশিবিরের রাজনীতি এবং জঙ্গিবাদী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলেও দাবি করেন মাজার পরিচালনা কমিটির একাংশের নেতারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।