পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাদা কাপড়ে মোড়ানো মায়ের লাশের সামনে আদরের দুই শিশু সন্তান রামিছা মোর্শেদ (৮) ও রাফসান মোর্শেদ (৬)। তাদের চোখেমুখে বিষাদ আর বিস্ময়। বার বার মায়ের পাশে গিয়ে ‘মা’ ‘মা’ বলে চিৎকার করছে। বলছে, মা তুমি ওঠো। কিন্তু মা-তো সাড়া দেয় না। আশপাশের সবাই কাঁদছে। বাবা রিয়াজ মোর্শেদ বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। আত্মীয়-স্বজনরা দুই শিশু সন্তানের আকুতি দেখে চোখের পানি থামিয়ে রাখতে পারছেন না। তার মধ্যেও তারা অবুঝ দুই শিশুকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা কিছুই বুঝতে চাইছে না।
দুই শিশুর মা সৈয়দা সামিয়া আক্তার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারা গেছেন ঢাকায় হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। এ সময় তাকে রাখা হয়েছিল আইসিইউতে। সেখানেই কাউকে কিছু না বলে বিদায় নিলেন চিরদিনের জন্য। এ সময় তার সন্তানরা কাছে ছিল না। সন্ধ্যার অন্ধকারের মতোই যেন তাদের জীবনেও নেমে এলো এক অজানা অন্ধকার। যখন ওই দুই সন্তানের সামনে মাকে হাজির করা হলো তখন তিনি মৃত। সন্তানের কথায় আর সাড়া দেন না।
সৈয়দা সামিয়া আক্তার ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার চরমুরারদিয়া গ্রামের রিয়াজ মোর্শেদের স্ত্রী। স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন। সপরিবারে তারা ঢাকায় থাকতেন।
সামিয়া আক্তারের মামা মোহাম্মদ নিসারুল বাশার জানান, তার মেয়ে পবিত্র ঈদুল আযহায় গিয়েছিলেন গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আনন্দে ঈদ করতে। সেখানেই তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। ঈদের আগেরদিন জ্বর আসে সামিয়ার। তাকে ঈদের দিন ভর্তি করানো হয় ফরিদপুর ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হওয়ার পর রেফারড করা হয় ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে। সেখান থেকে রেফারড করে ঢাকার কোনো ভালো হাসপাতালে। রিয়াজ মোর্শেদ স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় ছুটে আসেন। ভর্তি করেন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে ১৫ই আগস্ট স্থানান্তর করা হয় হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। তাকে ১৬ ই আগস্ট নেয়া হয় এ হাসপাতালের আইসিইউতে। সেখানেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে থাকেন তিনি। তার ফুসফুস অকেজো হয়ে যেতে থাকে। একটি ফুসফুস একেবারে অকেজো হয়ে যায়। অন্যটিরও অবনতি হতে থাকে।
জানা যায়, গত রোববার তার একটি ফুসফুসের এক-তৃতীয়াংশ কাজ করছিল। লিভার পুরো নষ্ট হয়ে যায়। এ সময় তার দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশ কমতে থাকে। আইসিইউতে মনিটর ক্রমশ জানান দিচ্ছিল তিনি অজানার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। ঠিকই রাতের অন্ধকার যখন নেমে আসছে, অন্ধকার যখন গ্রাস করছে চারপাশ, ঠিক তখনই সামিয়া আক্তার সবাইকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়ে চলে গেলেন চিরদিনের জন্য। এ সময় তার দুই সন্তানও পাশে ছিল না।
রিয়াজ মোর্শেদ হাউমাউ করে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, আমার দুটি সন্তানকে আমি কি বলবো? ওরা যখন মায়ের কথা বলবে, ওদের সামনে বাবা হয়ে আমি কি জবাব দেবো? আমার সন্তানদের লেখাপড়ার কি হবে? আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে চিৎকার করছেন তিনি। চারদিক থেকে আত্মীয়-স্বজনের মাঝে কান্নার রোল। কে কাকে শান্তনা দেবেন! সে এক ভয়াবহ দৃশ্য। এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। যে দৃশ্য যে কারোর চোখের কোন ভিজিয়ে দেবে।
সামিয়া আক্তারের লাশ রোববার রাতেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে ফরিদপুরে। গতকাল স্থানীয় আলীপুর গোরস্থানে বাদ যোহর তার দাফন করা হয়। সৈয়দা সামিয়া আক্তার ফরিদপুর পৌরসভার কুঠিবাড়ি কমলাপুরের সৈয়দ আবু সালেহ মোহাম্মদ মুছার কন্যা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।