পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারাদেশের প্রতিটি জেলা-উপাজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এমন কোনো এলাকা নেই, যেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী নেই। তাই ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে গ্রামে গ্রামে। জেলা-উপাজেলা পর্যায়ে প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্তরে সংখ্যা বাড়ায় আতঙ্ক কোনোভাবেই কাটছে না। অনুক‚ল আবহাওয়া ও পর্যাপ্ত প্রজননক্ষেত্র থাকায় বেড়েই চলছে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫৪ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে আরও তিনজনের। নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেও এডিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে ডেঙ্গু জ্বর নির্মূল করা এক প্রকার অসম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে এডিস নির্মূলের পাশাপাশি ব্যক্তি সচেতনতা বাড়াতে হবে। মশা এবং মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে হবে, যাতে মশা সহজেই মানুষের সংস্পর্শে আসতে এবং কামড়াতে না পারে। একই সঙ্গে মশার সব ধরনের প্রজননক্ষেত্রে ধ্বংস করতে হবে। চলতি বছরে পূর্ণাঙ্গ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসার পর ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে সচেতনতা সপ্তাহ বা দিবস পালন করা যেতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ আগস্ট সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৪ হাজার ৯৭৯ জন। এর মধ্যে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন ৪৮ হাজার ২৪ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৬ হাজার ৭৩৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৬১৫ জন। কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৫৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ৮৫৮ জন। গতকাল এ পর্যন্ত এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ৭০টি সম্ভাব্য মৃত্যু পর্যালোচনা করে এই ৪০ জনের ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই হিসাব ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি ৪১টি হাসপাতালের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি। প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দেড়শ’র বেশি। এদিকে গতকালও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বনশ্রীতে এক শিশু চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরার পর মারা যায়। রাজধানীর সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল ও বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন দুই তরুণী। তা ছাড়া ফরিদপুর, খুলনা এবং ময়মনসিংহে আরো চারজন মারা গেছেন। গতকাল ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেলোয়ার হোসেন নামে মসজিদের এক খাদেম। খুলনা মেডিক্যালে মিজানুর রহমান নামে একজন মারা গেছেন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোববার রাতে নেত্রকোনার আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি মারা যান।
জানা গেছে, ডেঙ্গু আক্রমণ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)-এর তথ্য মতে, বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকায় বসবাস করে। এশিয়া, প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চল, আমেরিকা, আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের প্রায় ১০০টি দেশে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে- প্রতি বছর ৫ থেকে ১০ কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে ৫ লাখ মানুষ হেমোরেজিক জ্বরে ভোগে আর কমপক্ষে ২২ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। যাদের মধ্যে একটি বড় অংশই শিশু।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) প্রফেসর ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, আমাদের দেশ থেকে বা পৃথিবী থেকে এডিস মশা চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব নয়। তাই ডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণ করতে হলে অবশ্যই যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. সানিয়া তাহমিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমেছে। আশা করছি, এই সংখ্যা আর বাড়বে না। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার হাসপাতালে মোট রোগীর সংখ্যা ৭ শতাংশ ও ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা ৫ শতাংশ কমেছে। আক্রান্তদের সংখ্যার সূচকে নিম্নগতি পর্যবেক্ষণ করেছি। আশা করছি, এই নিম্নগতি অব্যাহত থাকবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত প্রচেষ্টা ও জনসচেতনতার কারণে এ সংখ্যা কমেছে।
সানিয়া তাহমিনা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক দেশের সব ডাইরেক্টর ও লাইন ডাইরেক্টরের উপস্থিতিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিভিল সার্জন এবং ইউএইচএফপিওদের ডেঙ্গুর প্রতিকার, প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গতকালও নানা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু সংক্রমণ ঠেকাতে বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে মানুষকে আক্রমণকারী মশাবাহিত ভাইরাস প্রতিরোধে ওলবাকিয়া ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে কাজ করছে। এই ব্যাক্টেরিয়া নিরাপদ। প্রকৃতিতে অন্যান্য পোকামাকড়ের মধ্যে এটি পাওয়া গেলেও এডিস ইজিপ্টি মশায় এটি পাওয়া যায় না। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই ব্যাক্টেরিয়া যদি এডিস ইজিপ্টির মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া যায় তাহলে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ লাঘব সম্ভব হবে। এটি মূলত দুইভাবে মশার দেহে কাজ করে- ভাইরাসের বিরুদ্ধে মশার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ভাইরাসের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। বিজ্ঞানীদের মতে, এ প্রক্রিয়াটি প্রাকৃতিক, সাশ্রয়ী ও টেকসই। ওয়ার্ল্ড মাস্কিউটো প্রোগ্রাম নামক প্রকল্প অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ১২টি দেশে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করছে।
এছাড়া স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক (এসআইটি) বা মশা বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি প্রয়োগ করেও কোনো কোনো দেশে এডিস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় গামারশ্মি ব্যবহার করে এডিস পুরুষ মশাকে বন্ধ্যাকরণ করা হয়। তারপর এই মশা স্বাভাবিক মশার তুলনায় ১০ গুণ বেশি ছেড়ে স্ত্রী মশার সঙ্গে প্রজনন ঘটানো হয়। তারপর স্ত্রী এডিস ডিম পাড়লে, সেই ডিম থেকে আর লার্ভা জন্মায় না।
বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর চৌধুরী বলেন, ওলবাকিয়া এবং এসআইটি পদ্ধতি দু’টিই ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। বর্তমানে আমাদের দেশে ডেঙ্গুর যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, সেই অবস্থায় এসব পদ্ধতি প্রয়োগ সময়োপযোগী নয়। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে উন্নতমানের ফগিং মেশিন ও কার্যকর ওষুধ ব্যবহার করে বিস্তীর্ণ এলাকায় ফগিং করে প্রাপ্তবয়স্ক এডিস মশা মারতে হবে। পাশাপাশি প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে। এ ছাড়া মানুষ ও মশার মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে মশা মানুষকে কামড়াতে না পারে। এ ক্ষেত্রে ফুলহাতার জামা-পাজামা পরা, মশারি ব্যবহার করা, বাড়িতে অ্যারোসল স্প্রে করা, গায়ে মশক নিরোধক স্প্রে বা ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সিঙ্গাপুরের মতো দেশেও এই বছর ১০ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তাই শুধু কর্তৃপক্ষই নয়, নিজে থেকেও যার যার অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে। এডিস মশা থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে। তিনি বলেন, এভাবে চেষ্টা করলে অল্প সময়ে হয়তো এডিসের প্রকোপ সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব হবে। ‘ওলবাকিয়া’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে হলে ১০ হাজার মানুষ বসবাস করে এমন স্থানে পাইলট করে সফল হলে তারপর বিস্তীর্ণ এলাকায় এটা ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বর্তমান সময়ে এটা তেমন কার্যকর নয়। তা ছাড়া এসআইটি পদ্ধতিকে ব্যয়বহুল হিসেবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরাসরি মশক নিধন ও উৎস নির্মূল কর্মসূচির পাশাপাশি ব্যক্তিগত সচেতনতাই সবচেয়ে কার্যকর। এ বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসার পর এ বিষয়ে সচেতনতা অব্যাহত রাখতে আগামীতে ডেঙ্গু বিষয়ক সচেতনতা দিবস বা সপ্তাহ পালন করা যায় কি না, সেটিও ভেবে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।