পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে ঠিকই; কিন্তু এডিস মশা নিধনে ঢাকার দুই মেয়রের হাঁকডাক ছাড়া কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। এডিস মশা নিধনের ওষুধ ছিটানোর কথা মুখে মুখে শোনা গেলেও বাস্তবে রাজধানীর মানুষ দেখতে পাচ্ছেন না। শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
মাস তিনেক আগে ঢাকায় শুরু হওয়া ডেঙ্গুর প্রকোপ ক্রমেই বেড়েছে, আগস্টের মাঝামাঝিতেই আগের মাসের তুলনায় দ্বিগুণ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ দিকে ঈদের পর তিন দিন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমতে থাকলেও রাজধানীসহ সারাদেশে গত শনিবার থেকে তা আবারও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরো সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে। তবে আবহাওয়া অপরিবর্তিত থাকলে এবং কার্যকর মশা নিধন অভিযান পরিচালনা করা না হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগতে পারে বলেও জানান তারা। এমনকি তা আগামী অক্টোবর মাসজুড়েও থাকতে পারে। যদিও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের আশাবাদ, সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ ডেঙ্গুর চলমান পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
এদিকে গত ৫ বছরের হিসাবে বেশির ভাগ সময় (৩ বছর) সেপ্টেম্বর মাসেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এ বছর পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। তাই এক্ষেত্রে এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নিয়মিতভাবে সোর্স রিডাকশন, লার্ভা কন্ট্রোল করতে হবে। একই সঙ্গে শুধু আবহাওয়ার ওপর ডেঙ্গুর প্রকোপ হ্রাস-বৃদ্ধি নির্ভর করে না। থেমে থেমে বৃষ্টি মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করে। তাই সেগুলো ধ্বংসের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, বর্তমান সময়ে যে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে সেটি হলো গ্রামে ঈদ করে যারা ঢাকায় ফিরছেন, তাদের ঘরে প্রবেশের আগে অবশ্যই মশক নিধন ওষুধ স্প্রে করতে হবে। আর ঈদের ছুটির পর যেসব স্কুল-কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে, খোলার আগেই সেসব প্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করতে হবে এবং পর্যাপ্ত ফগিং করতে হবে। তাহলে নতুন করে আক্রান্তের হার কমানো সম্ভব হবে।
গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৭০৬ জন মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে রাজধানীর ৪১টি হাসপাতালে ৭৩৪ জন ও বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে ৯৭২ জন ভর্তি হয়েছেন।
বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ১৬৮। তাদের মধ্যে রাজধানীতে ৩ হাজার ৬৬৮ ও বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে ৩ হাজার ৫০০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি ২৫২ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়া চট্টগ্রামে ১৮৮ জন, খুলনা বিভাগে ১৩৩ জন, রংপুর বিভাগে ৬৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ১২০ জন, বরিশাল বিভাগে ১৪০ জন, সিলেট বিভাগে ১৯ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৭ জন ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু নিয়ে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার হাসপাতালগুলো থেকে এক হাজার ১০৯ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলো থেকে এক হাজার ২৮৫ জন ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
ডা. আয়েশা আক্তার জানান, গত ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সারাদেশের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৫৩ হাজার ১৮২। তাদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৫ হাজার ৯৭৪ জন। শুধু আগস্টের এই কয়দিনেই প্রাণঘাতী এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ হাজার ৭২১ জন।
সূত্র মতে, ঢাকায় গত মে মাসের শেষ দিকে ডেঙ্গু দেখা দেয়, ওই মাসে মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হন ১৯৩ জন। পরের মাস জুনে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয় এক হাজার ৮৮৪ জন। জুলাইয়ে এই সংখ্যা পৌঁছায় ১৬ হাজার ২৫৩ জন। ওই সময় ডেঙ্গু নিয়ে চারদিকে আলোচনার প্রেক্ষাপটে এই রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশা নিধনে নানামুখী তৎপরতা নেয়ার কথা জানায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।
তবে এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। আগস্টের প্রথম দিক থেকেই দিনে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা হাজারের ঘর ছাড়িয়ে দুই হাজারের বেশি হয়।
সরকারি হিসাবে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করা হলেও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলা চিকিৎসকদের কাছ থেকে অন্তত ১৫৪ জন মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছে।
আগস্ট মাস ডেঙ্গুর মৌসুম হলেও মশা নিধনে নানা তৎপরতায় পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার।
তিনি বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া মানুষের মধ্যে সচেতনতাও বেড়েছে। এসব কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।
এদিকে চলতি বছরে রাজধানীর ডেঙ্গু আক্রান্তের চিত্র এই রোগ আবির্ভাবের পর গত ১৯ বছরের মধ্যে ভয়াবহ। দেশে প্রথম ২০০২ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। এরপর গত বছর ২০১৮ সাল পর্যন্ত যে পরিমাণ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, চলতি বছরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তার চেয়েও বেশি। রাজধানীর চিত্র এমন হয়েছে যে, প্রতিটি পরিবারের কেউ না কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
সূত্র মতে, আমাদের দেশে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা আগেই শুরু হয়েছে। জুলাই-আগস্ট মাসে এর প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক পরিচালক প্রফেসর ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, ডেঙ্গুর এ প্রকোপ সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে থাকবে। তবে অনুকূল আবহাওয়া এবং কার্যকর মশা নিধন অভিযানসহ সবকিছু ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।