Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চলছে আলোচনা পর্যালোচনা

প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৩ পিএম, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : অবসরে গ্রহণের পর রায় লেখা অব্যাহত রাখা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী প্রধান বিচারপতির দেয়া এ বক্তব্য নিয়ে সর্বমহলে চলছে নানা আলোচনা পর্যালোচনা। গত ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক বাণীতে এ কথা বলেন। তার এ বক্তব্যে আদালত অঙ্গন ছাড়িয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিতর্ক শুরু হয়। বিএনপিসহ কয়েকটি দলের পক্ষ বলা হয়, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় অবসরের পর লেখেছিলেন। তাই ওই রায় অবৈধ। বর্তমান সরকারও অবৈধ। তবে সরকারী দলের পক্ষ বলা হয়, অবসরের পর রায় লেখায় বাধা নেই। অতীতের কোনো রায়ে এর প্রভাব পড়বে না। প্রধান বিচারপতিকে কম কথা বলারও পরামর্শ দেন দলটির সিনিয়র এক নেতা। শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনেই নয় এ বক্তব্য নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় শুরু হয়। জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে ফুটপাতের চায়ের দোকানেও প্রধান বিচারপতির বক্তব্য নিয়ে শুরু হয় চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ। বিভিন্ন টিভি টকশোতেও এ বক্তব্য নিয়ে চলে জমজমাট বিতর্ক। আইন বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্য সরকারের জন্য বিব্রতকর। তাই সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আইনমন্ত্রী এবং দলের আইনবিশেষজ্ঞরা এ বক্তব্যের বিপক্ষে সংসদে এবং সংসদের বাইরেও বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। সর্বশেষ প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে বঙ্গভবনে নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী ও এটর্নি জেনারেলের একত্রে অংশগ্রহণ এক নতুন মাত্রার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরাও এ নিয়ে এখন নতুন করে ভাবছেন।
প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যর বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন এক সক্ষাৎকারে বলেছেন, এ বক্তব্য অতীত নয় ভবিষ্যতের দিক-নির্দেশনা। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি মূলত বলেছেন, তার অধীনে যারা কাজ করছেন, তারা ভবিষ্যতে অবসরে যাওয়ার আগেই রায় দেবেন এবং তিনি নিজেও এটা অবলম্বন করবেন। এর মধ্য দিয়ে প্রধান বিচারপতি এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন- আমি সবকিছুর রায় দিয়ে তারপর অবসরে যাব। অনেকে মনে করছেন, তিনি বিশেষ একটা রায়কে কেন্দ্র করে এটা বলেছেন। এরকম ভাবাটা ঠিক নয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেছেন, একজন বিচারপতি বিচারক হিসেবে রায় ঘোষণা করেন। ওই রায় অবসরের পর স্বাক্ষর করতে আইনগত কোন সমস্যা নেই।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পর রায় লেখা অবৈধ -তা সংবিধানে নেই, রুলসও নেই। তবে অবসরে যাওয়ার পর রায় লেখার জন্য বিচারপতিদের ‘সময় নির্ধারণ’ করে দেয়া যেতে পারে। তবে সে সময় যেন দীর্ঘ না হয়। তিনি আরও বলেন, প্রধান বিচারপতির বক্তব্য অনুসারে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ বা অসাংবিধানিক তা বলা যাবে না। শুধুমাত্র রায়ের ভিত্তিতে সংশোধন হয়নি। সংসদে বিল আকারে তা গেছে ও অধিকাংশ সংসদ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে তা পাস হয়েছে। ঢালাওভাবে প্রধান বিচারপতির এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশের সুযোগ নেই। এমন কী প্রধান বিচারপতির বক্তব্য কোনো ব্যক্তি পর্যায়ে নেয়ারও সুযোগ নেই।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, অবসরে যাওয়া বিচারপতিদের রায় লেখা এবং রায়ে স্বাক্ষর করাকে অসাংবিধানিক বলে প্রধান বিচারপতি যে বাণী দিয়েছেন তা সঠিক। অবসরে যাওয়া বিচারপতিরা রায় লিখলে বা রায়ে স্বাক্ষর করলে তা অনৈতিক হবে। তিনি বলেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি একটি মামলার রায় যে দিন দেন সেই দিনই অবসরে যান। কিন্তু পরে তিনি রায়ে আর স্বাক্ষর করেননি। মাহবুব হোসেন আরো বলেন, প্রধান বিচারপতি যেটা বলেছেন আইনের বিধান মোতাবেক অবসরে যেয়ে রায় লেখা আইন সম্মত হবে না। বিচারপতিরা শপথের পর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অবসরে গেলে আর শপথ থাকে না। এজন্য অবসরে যাওয়ার পর রায় লেখা বা স্বাক্ষর করা আইনসম্মত নয়। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় অবসরে যাওয়ার পর লেখা হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। এতে বিচার প্রার্থীরা হয়রানির শিকার হয়েছে।
অবসরের গিয়ে রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থী প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্য নিয়ে সংসদে ব্যাপক আলোচনা হয়। গত ২৬ জানুয়ারি পয়েন্ট অব অর্ডারে এ নিয়ে বক্তব্য দেন স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তুম আলী ফরাজী, আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক আইন মন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু। সংসদে বক্তারা প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিতর্কের অবসান চেয়ে বলেন, আপিল বিভাগের রায় এজলাসেই দিতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। সংক্ষিপ্ত রায় দিতে হবে। প্রধান বিচারপতি যে কারণে এ কথা বলছেন, সে সমস্যা আমরা অনুধাবন করছি। কোনো কোনো বিচারপতির রায় লেখায় বিলম্বের কারণে জনগণের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে তিনি একথা বলেছেন। রায় দ্রুত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তার এই বক্তব্য নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা পরিষ্কার পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছেন। আইনমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে সংবিধান তার কোনো আর্টিকেলে এ কথা লেখা নাই যে বিচারপতি তার অবসরে গ্রহণের পর রায় লিখতে পারবেন না। তা যদি হয় তাহলে এটা আর যাই হোক অসাংবিধানিক হতে পারে না।
আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে বিচার বিভাগকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তা পৃথিবীর অন্য দেশে দেয়া হয়নি। সার্বভৌম সংসদের আইন সংবিধানসম্মত না হলে আদালত তা বাতিল করতে পারে। প্রধান বিচারপতির বক্তব্যকে শপথের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেন সুরুঞ্জিত। তিনি বলেন, সংবিধানের রক্ষক সুপ্রিম কোটের্র প্রধান বিচারপতি যে কথা বলে বসলেন, এ কথা বলা শপথের পরিপন্থী। এটি যদি অসাংবিধানিক হয়, তাহলে রাষ্ট্রের সব কিছুই অসাংবিধানিক হয়ে যায়। বিরোধী দল কথাটি লুফে নিয়ে নিয়ে বলল, এই সরকার নাকি অবৈধ। কারণ ওই রায়টা নাকি লেখা হয়েছে, অবসরের পর। প্রধান বিচারপতি বক্তব্যের পেছেনে ‘উস্কানি’ থাকতে থাকতে পারে বলে মনে করেন সুরুঞ্জিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখন স্থিতিশীল হয়ে এসেছে, তখন একটি বিশাল উস্কানি। আমরা ঘর পোড়া গরু। কোনো অসাংবিধানিক শক্তির সঙ্গে আঁতাত করে সাংবিধানিক শক্তি এ ধরনের কথা বলছেন বলে মনে করতে হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চলছে আলোচনা পর্যালোচনা

৩০ জানুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ