পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কয়েকটি কারখানার মালামাল পুড়ে ছাই
দাহ্য পদার্থের জন্য আগুন দ্রæত ছড়ায়
ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি গঠন
রাজধানীর পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ৬ মাস না যেতেই এবার লালবাগের পোস্তা এলাকায় প্লাস্টিক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে কয়েকটি কারাখানার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঈদের ছুটিতে কারখানায় কোনো লোকজন না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। গত বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে পোস্তা ঢালের ৬৯/১ টিপু হাজীর বাড়ি নামে পরিচিত এই বাড়িতে থাকা কারখানায় এ আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট রাত ১২টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোতে প্লাস্টিকের মগ, বালতি, খেলনা, জুতাসহ মেডিক্যাল সামগ্রী বানানো হতো বলে জানা গেছে। অগ্নি নির্বাপনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় এ আগুন লাগে বলে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, রাত পৌনে ১১টার দিকে আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। রাত ১২টার দিকে প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে পরিপূর্ণ নির্বাপনে আরও সময় লাগে। ফায়ার সূত্র জানায়, জায়গাটি গিঞ্জি হওয়াতে ঘটনাস্থল পর্যন্ত গাড়ি নেওয়া যায়নি। পাইপ সংযোগ দিয়ে পানি দিতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। ভেতরে প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ঈদের ছুটিতে কারখানায় বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা সবাই গ্রামের বাড়িতে গেছে।
গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত প্লাস্টিক কারখানাগুলো পোস্তা ঢালের শেষ মাথায়। পোস্তা ওয়াসা পাম্পের বিপরীত পাশের সরু পথ দিয়ে ভেতরে যেতে হয়। কোন ধরণের ফাউন্ডেশন ছাড়া ইটের গাঁথুনির দোতালা ভবন। এর ওপরে টিনের শেড দিয়ে আরও কয়েকতলা করা হয়েছে। লোহার সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার রাস্তা। ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোর পাশাপাশি অন্তত অর্ধশত প্লাস্টিক, পলিথিন ও কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের কারখানা ও আড়ত রয়েছে। একটি সরু গলি দিয়ে ভেতরে যাওয়ার রাস্তা থাকলেও বের হওয়ার বিকল্প কোন রাস্তা নেই। অগ্নিকাÐের সময় ওই কারখানার আশেপাশে বিপুল পরিমাণ মানুষ ছিলো। কিন্তু প্লাস্টিক কারখানার দাহ্য পদার্থের আগুনের তীব্রতার কারণে কেউ আগুন নেভানোর সাহস করেনি। তারা দ্রæত নিরাপদে আশ্রয় নেন। কারখানাগুলোর কোনোটিতেই অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাও ছিল না বলে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, টিপু হাজীর বাড়ি নামে পরিচিত এই বাড়িটির নিচতলায় প্লাস্টিক কারখানা এবং ওপরে গুদাম। ভবনটির গা-ঘেঁষে তিনটি বড়বড় ট্রান্সফরমার। এসব ট্রান্সফরমার দিয়েই এই কারখানায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, বুধবার রাত ৯টার দিকে ভবনটির পেছনের একটি ট্রান্সফরমারে আগুনের ফুলকি দেখা যায়। এরপর পাশের কারখানার একজন কেয়ারটেকার বিষয়টি তার মালিককে জানান। তার মালিক বিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানান। তারা এসে সংযোগটি ঠিক করে দিয়ে যাওয়ার দুই ঘণ্টা পরই আগুন লাগে বলে জানিয়েছেন ওই প্রত্যদক্ষদর্শী। বাড়িটিতে মামুন নামে এক ব্যক্তি প্লাস্টিক তৈরির কারখানা দিয়েছেন। গত ১০ বছর ধরে তিনিই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে আছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। কোন হতাহতের ঘটনা না থাকলেও কারখানাটির পাশ্ববর্তী অপর কারখানার চিত্তরঞ্জন নামে এক কেয়ারটেকারকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
কারখানা মালিকের বোন পরিচয় দেওয়া সায়মা আক্তার মালা নামে এক নারী বলেন, ঈদে কারখানা বন্ধ করে তার ভাই বশির আলম (মেডিক্যাল সরঞ্জাম তৈরি কারখানার মালিক) মুন্সিগঞ্জ গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন। আগুনে কারখানার ভেতরে রাখা সব মালামাল পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, তার ভাই ব্যাংক ঋণ নিয়ে মেডিক্যাল সরঞ্জাম তৈরির কারখানা করেছেন। এখনও ব্যাংকের ঋণ শোধ হয়নি। ঈদের আগে অনেক মালামাল তৈরি করে রাখা ছিল ঈদের পর বিক্রির জন্য। অথচ কারখানার পেছনের ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণে ভেতরে থাকা প্রায় তিন কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।
স্থানীয়রা বলেন, রাত ৯টার সময় ট্রান্সফরমারে আগুন জ্বলতে দেখে মালিককে ফোনে জানানো হয়। কিছুক্ষণ পর বিদ্যুতের লোক এসে ট্রান্সফরমার ঠিক করে দিয়ে যায়। এর দেড় দুই ঘণ্টা পরই বিকট শব্দ করে মামুনের প্লাস্টিকের কারখানার ভেতরে আগুন জ্বলে ওঠে। এসময় টহল পুলিশ এসে লোকজনকে সরিয়ে দেয়। এরপর ফায়ার সার্ভিস এসে পানি দেওয়া শুরু করে। আগুনের সময় কেউ ভেতরে ছিল না। বাড়িটিতে একজন কেয়ারটেকার আছেন, তবে তাকে ঘটনার সময় তিনি দেখেননি। আগুনের তাপ বেশি থাকায় আমরা পানি দেওয়ার সাহস করিনি। প্লাস্টিক থাকায় পুড়েছে অনেক। আবার শব্দও হয়েছে, তাই ভয়ে কেউ কাছে যায়নি। কাদের নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, প্লাস্টিক কারখানার একজন কারিগরকে অগ্নিকান্ডের পরপরই অচেতন অবস্থায় বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। ভেতরে আর কাউকে দেখিনি।
ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. হাবীবুর রহমান বলেন, জায়গাটি গিঞ্জি হওয়াতে ঘটনাস্থল পর্যন্ত গাড়ি নেওয়া যায়নি। পাইপ সংযোগ দিয়ে পানি দিতে হয়েছে। এতে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
চকবাজার থানার ওসি সোহরাব হোসেন বলেন, আগুনে চারটি প্লাস্টিক কারখানা ও গুদাম পুড়েছে। এর মধ্যে দুটি বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মেশিনসহ প্লাস্টিকের পণ্য পুড়ে গেছে। এছাড়া অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা ব্যক্তি ছিলেন উৎসুক জনতা। মানুষের হুড়াহুড়িতে তিনি ভেতরে ঢুকে গেলে ফায়ার সার্ভিসের টিম তাকে উদ্ধার করে। তিনি বলেন, ট্রান্সফরমারে আগুনের খবরে বিদ্যুতের লোকজন আসেন। কিন্তু তারা এসে ট্রান্সফরমার ও লাইন ঠিক করার সময় পাশে থাকা ওই কারখানায় আগুন ছড়িয়ে যায়। তখন তারা দ্রæত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এদিকে এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (অপারেশন) দিলিপ কুমার বোশকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সহকারী পরিচালক (এডি) আব্দুল হালিম এবং উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) নিউটন দাসকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ফেব্রæয়ারিতে লালবাগের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাÐে ৭৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। ওই সময় আগুনের কারণ হিসেবে প্লাস্টিক দানা ও কেমিক্যাল গোডাউনকে দায়ি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হলে পুরান ঢাকায় প্লাস্টিক কারখানার বিরুদ্ধে একযোগে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু কারখানার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। সে সময় ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাটিরও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। তবে প্লাস্টিক ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে সিটি করপোরেশন পিুছ হটে আবারও সব প্লাস্টিক ও পলিথিন কারখানায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়।
চুরিহাট্টর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন রাতে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুনে ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। সে সময়ে মূলত রাসায়নিক দ্রব্যের অপরিকল্পিত গুদাম ও প্লাস্টিক কারখানার কারণে অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটেছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।