Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমি সবসময় নির্বাচন চাই

প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০১ এএম, ৯ জুন, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : আমি সব সময় নির্বাচন চাই। নির্বাচন ছাড়া আমি আর কোনকিছু মানতে চাই না- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটা অনির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে আমার কাছে বারবার আপসের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তাদের প্রস্তাব এমন ছিলো যে, আমাকে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে রাখবে, আমি যেন নির্বাচন না করি। আমি বলেছিলাম, সেই মর্যাদাতো একটা এয়ার কন্ডিশনড্ বাড়ি, একখানা গাড়ি, এই তো- এগুলোতো আমার দরকার নাই। আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। আমার মূল লক্ষ্য দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করা। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। কিন্তু ওইভাবে একটা কাঠ পুতুলের মতো বসে থাকার মানুষ আমি নই। কারণ আমার কিসের অভাব, আমি বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্টের কন্যা, আমি নিজে প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে তিনি এসব কথা বলেন।
গুপ্তহত্যা বন্ধে চেতনা জাগাতে হবে
অপরদিকে বুলগেরিয়া, জাপান ও সউদী আরব সফরের অর্জন তুলে ধরতে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুপ্তহত্যা বন্ধে চেতনা জাগ্রত করতে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে নাশকতা ঠেকাতে মানুষ যেভাবে এগিয়ে এসেছিল, সেভাবে সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যা বন্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সত্যিকারের ধর্মে বিশ্বাসী, সবাইকে আহ্বান জানাব, তাদের পরিবারের কোনো সদস্য জঙ্গিবাদের পথে যাচ্ছে কি না, সেটা দেখাও তাদের কর্তব্য। মানুষের মধ্যে এই চেতনাটা জাগ্রত করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ‘ভাবমর্যাদা নষ্ট’ এবং ‘অগ্রগতি ব্যাহত করার জন্যই’ একের পর এক গুপ্তহত্যা ঘটানো হচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, যারা তা চায়নি, তাদেরই একটা নীল নকশা এটা। সেই নীল নকশা তারা কায়েম করার চেষ্টা করে যাচ্ছ। বিভিন্ন নামে হলেও হত্যাকা-ের প্রক্রিয়ায় একই রকম মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা প্রকাশ্য দিবালোকে পুড়িয়ে মানুষ মারতে পারে, তারাই আছে এর সঙ্গে। প্রকাশ্যে আগে মানুষ হত্যা করতে যেয়ে তারা দেখল, জনগণের রুদ্ররোষের শিকার হন। এখন তারা কৌশল পরিবর্তন করে গুপ্তহত্যা শুরু করেছে। এমন এমন মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, যাতে বিশ্বব্যাপী একটা তোলপাড় শুরু হয়, ভয়ভীতি সৃষ্টি হয়। এই গুপ্তহত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে, তারা কোথায় বসে পরিকল্পনা করেÑ সেই তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরবরাহ করতে সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
দেশের মানুষ সচেতন হলে গুপ্তহত্যাকারীরা সেই ‘নীল নকশা’ আর বাস্তবায়ন করতে পারবে না, বলেন তিনি। একইসঙ্গে সরকারের তৎপরতা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার কিন্তু বসে নেই। আমাদের যা যা করণীয়, আমরা কিন্তু করে যাচ্ছি। গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে সবাই এ ব্যাপারে যথেষ্ট তৎপর। ইতোমধ্যে অনেকগুলো ঘটনায় দোষীরা ধরা পড়েছে। যারাই এ ঘটনা ঘটাচ্ছে, আমরা তাদের ধরতে সক্ষম হচ্ছি।
ইসলামের নামে এসব হত্যাকা-ের নিন্দা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কাউকে হত্যা করার অধিকার কারও নেই। মাত্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জন্য আজকে মুসলিম আজ অন্যদের কাছে হেয় হচ্ছে। সত্যিকারে যারা ইসলামে বিশ্বাসী, মসজিদের ইমাম, ইসলাম প্রচার করে এবং অভিভাবকবৃন্দসহ সকলকে আহ্বান জানাব, তাদের পরিবারের সদস্যরা এই ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকা-ের দিকে যাচ্ছে কি-না, এটা যেন তারা দেখে; একইভাবে মানুষের মাঝে সেই চেতনাও জাগ্রত করতে হবে।
পরিবারের ক্ষতি করলে পাই পাই করে হিসেব নেবো :
পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যার ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হত্যাকারীদের হুঁশিয়ার করে বলেছেন, গুপ্তহত্যা করে কেউ পার পাবে না। এভাবে পরিবারের ওপর হাত দিতে শুরু করলে কারও হাতই থেমে থাকবে না। জনগণকে থামিয়ে রাখতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হত্যাকারী এবং তাদের প্রভু যে-ই হোক, তাদের আমরা রেহাই দেব না। যারা পরিবারের ক্ষতি করছে, তাদের হিসাব পাই পাই করে নেব। জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ ফজিলাতুনে নেসা বাপ্পীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনের মামলা ‘কখনো তামাদি হয় না’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। জাতির পিতাকে যারা হত্যা করেছিল সেই খুনিদের বিচার আমরা করেছি। আজ যারা গুপ্তহত্যায় জড়িত, তারা যদি মনে করে যে গুপ্তহত্যা করে পার পেয়ে যাবেন, ইনশাআল্লাহ তারা পার পাবেন না। তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতে হবেই হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, মসজিদের ইমাম, প্যাগোডা, মন্দিরের পুরোহিত, গির্জার ফাদারকে আক্রমণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষককে হত্যা করা হচ্ছে। এমনকি এর আগে যেটা কখনো দেখা যায়নি, পুলিশ অফিসার, যিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন, তার স্ত্রীকে কীভাবে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। তাকে কুপিয়ে আর গুলি করে প্রকাশ্য দিবালোকে ছোট্ট শিশুর সামনে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশের কাজ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, সন্ত্রাস দমন করা। যারা সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানোর চেষ্টা করেছে, এই পুলিশ অফিসার তাদের গ্রেপ্তার করেছেন। বোমা বানানোর সরঞ্জাম থেকে শুরু করে বহু কিছু উদ্ধার করেছেন। এরা তার পরিবারের ওপর হাত দিয়েছে। একটা কথা এখানে বলতে চাই, সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকা- ঘটাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, হত্যার ধরন একই রকম। তারা ঠিক একই জায়গায় কোপ দেয়, একইভাবে গুলি করে মারে। এ ধরনের কয়েকটি গুপ্তহত্যা ঘটেছে। তার অনেকগুলোর আসামি ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, অবশ্যই তারা গ্রেপ্তার হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু একটি কথা হলো, আজকে যারা পরিবারের ওপর হাত দিয়েছে, তারা কি ভুলে যায় তাদেরও পরিবার আছে? তাদেরও বাপ, মা, ভাই, বোন আছে। তাদেরও স্ত্রী আছে। একবার একদিক থেকে যদি আঘাত আসে, তাহলে অন্যদিক থেকেও আঘাত যেতে পারে। এটা কি তারা ভুলে যাচ্ছে? কাজেই যারা এ ধরনের সন্ত্রাসী ও গুপ্তহত্যার সঙ্গে জড়িত, আমি তাদের পরিবার, বাবা, মা, ভাইবোন ও স্ত্রীকে বলব, এর থেকে যেন তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরত থাকতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গুপ্তহত্যা করে যদি কেউ মনে করে দেশ একেবারে উল্টে দেবে, তা কিন্তু তারা পারবে না। হত্যাকারী ঠিকই ধরা পড়বে। তারা সাজা পাবে। সর্বোচ্চ সাজা এই হত্যাকারীরা ভোগ করবে। খুনের মামলা কখনো তামাদি হয় না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। জাতির পিতাকে যারা হত্যা করেছিল, সেই খুনিদেরও আমরা বিচার করেছি।
গুপ্তহত্যাকা-ের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার তথ্যপ্রমাণ আছে :
সাম্প্রতিক সময়ের গুপ্তহত্যার ঘটনায় দুটি দলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না। আমি হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট (সরকারপ্রধান)। আমার কাছে নিশ্চয়ই তথ্য আছে। তদন্তের স্বার্থে হয়তো সব কথা সব তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু সূত্রটা জানা যায়। আর সেই সূত্র ধরেই আমরা কথা বলি।
এসপির স্ত্রীসহ গুপ্তহত্যাগুলোর ঘটনায় রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার কারণে মূল অপরাধীরা আড়ালে চলে যায় উল্লেখ করে এক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, যারা এ ধরনের কথা বলেন, তাঁরা যদি তথ্য পেয়ে থাকেন, তাহলে তা প্রকাশ করুন। পার পেয়ে যাওয়া জঙ্গিরা কারা? পরিচয় পেলে জানান। হত্যাকারী যে পরিচয়েরই হোক, রেহাই পাবে না। সরকার বসে নেই, গোয়েন্দা সংস্থাও বসে নেই।
জাপান, বুলগেরিয়া ও সউদী আরব সফর সম্পর্কে অবহিত করতে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
গুপ্তহত্যার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন নাম নিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করলেও এদের হত্যার প্রক্রিয়া একই রকম। ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে, তাদের সঙ্গে দুটি রাজনৈতিক দলের যোগসূত্র রয়েছে। এই জঘন্য ঘটনার সঙ্গে কোন জঙ্গি এবং সন্ত্রাসীর জড়িত থাকা সম্পর্কে কারো কাছে কোন তথ্য থাকলে তাদের নাম-ঠিকানা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে পারেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের মদদে বাংলাদেশে জঙ্গিদের মাথা তুলে দাঁড়ানো ঘটনা কেউ ভুলে যেতে পারে না। তাদের শাসনামলে পুলিশি প্রহরায় জঙ্গিরা মিছিল করেছে এবং দু’টি দলই যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সুরক্ষা দিয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকা-, এসএএমএস কিবরিয়া হত্যাকা- এবং কোটালীপাড়ায় বোম হামলার প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং সম্প্রতিক জঙ্গিবাদি কর্মকা-ের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই, তার কি যুক্তি আ আবার অনেকে ওই দলগুলোকে বাঁচাতে চায়। এর মধ্যে ‘লাল গোলাপে শুভেচ্ছা জানিয়ে বেড়ান’ এক ব্যক্তি সজীব ওয়াজেদ জয়ের হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িত। যুক্তরাষ্ট্রে সজিব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্রের সঙ্গে বিএনপির দু’জন শীর্ষ বুদ্ধিজীবী জড়িত রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এই রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। ফলে গুপ্তহত্যাকা-ের সাথে তাদের সব জেনেও অনেকে ওই ব্যক্তির গ্রেপ্তার হওয়ায় ব্যাকুলতা প্রকাশ করেন।
জাপান, সউদী আরব ও বুলগেরিয়া সফরে দেশগুলোর নেতাসহ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আলোচনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পর পর তিনটি সফর আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটি সফরে বাংলাদেশের অনেক অর্জন আছে।
তিনি বলেন, এই তিনটি সফরে যেসব নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, সেই বিশ্বনেতাদের সবাই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাদের অবাক করেছে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে থাকাটা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সউদী আরব সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। সউদী বাদশাহসহ সরকারের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ফলপ্রসূ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সফরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সউদী সরকার বাংলাদেশ থেকে দক্ষ-অদক্ষ বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রমিক নেবে বলে জানিয়েছে। সউদী ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী জেদ্দা চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেসিসিআই)’র সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, সেখানকার ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশ ‘সেকেন্ড হোম’ হতে পারে। এখানকার সুযোগ-সুবিধা খতিয়ে দেখার জন্য জেসিসিআই বাংলাদেশে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল প্রেরণের কথা জানায়।
প্রধানমন্ত্রী জানান, নির্মাণ শিল্পে প্রকৌশলী এবং স্থাপত্যবিদসহ দক্ষ জনশক্তি সরবরাহে সউদী আরবের বাওয়ানি গ্রুপ এবং বাংলাদেশের সেনা কল্যাণ সংস্থার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়।
তিনি বলেন, বুলগেরিয়া সফরে দেশটির সোফিয়ায় ‘গ্লোবাল উইমেন লিডার্স ফোরামে’ বাংলাদেশের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হয়েছে। ফোরামে বাংলাদেশে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতায়নে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সেসব পদক্ষেপ তুমুল প্রশংসিত হয়েছে ফোরামে।
বুলগেরিয়া সফর নিয়ে বক্তৃতার আগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বুলগেরিয়া ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। বুলগেরিয়া বাংলাদেশকে ইউরোপের দ্বিতীয় স্বীকৃতি প্রদানকারী দেশ। সেই বুলগেরিয়ায় গ্লোবাল উইমেন লিডার্স ফোরামে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ফোরামে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের নানা পদক্ষেপের যেমন প্রশংসা করেছেন বিশ্বনেতারা, তেমনি ভূয়সীপ্রশংসা করেছেন বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট।
প্রধানমন্ত্রী বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের কথা তুলে ধরে বলেন, এসব বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়। সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও বুলগেরিয়ার সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে।
জাপান সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেখানে জি-৭ অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সাতটি দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা সবাই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং দেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের ফ্যিজিবিলিটি স্টাডিসম্পন্ন করাসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে জাপানের সহযোগিতা কামনা করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং বাই ব্যাক অ্যারেঞ্জমেন্টসহ প্রধানমন্ত্রীর আরও কয়েকটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের উদ্যোগ সম্পর্কে খোঁজ-খবর করতে জাইকাকে নির্দেশ দেন।
জি-৭ আউটরিচ বৈঠকের সাইড লাইন বৈঠক হিসেবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইইউতে থাকা না থাকা নিয়ে অচিরেই ব্রিটেনে গণভোট হচ্ছে। তবে, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অভিমত ইইউতে থাকার পক্ষে। তিনি তাঁর সেই ব্যক্তিগত অভিমত সম্পর্কে আমার মতামত জানতে চাইলে আমি বলি, আমারও অভিমত ব্রিটেন ইইউতে থেকে যাক। এতে করে ব্রিটেনের জনগণ যেমন লাভবান হবে তেমনি লাভ হবে বাংলাদেশেরও। এই বিষয়ে ব্রিটেন প্রবাসী বাংলাদেশী এবং বাংলাদেশী বংশদ্ভুত ব্রিটিশ তিন এমপি ও ব্রিটেনের ইইউতে থেকে যাওয়ার পক্ষেই বলেও তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে জানান।
প্রধানমন্ত্রী সউদী আরবে জনশক্তি নিয়োগ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সউদী আরবে বাংলাদেশ সম্পর্কে অতীত ধারণাটাই পাল্টে গেছে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এখন বড়ো ধরনের পরিবর্তন দৃশ্যমান। তাঁরা এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগের চিন্তা-ভাবনা করছে। বাংলাদেশে সকল উপজেলায় ইসলামিক সেন্টার নির্মাণে সরকারের পদক্ষেপ এবং সউদী অন্যান্য সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশে সউদী প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আগমণ করবেন বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সউদী আরবে বাংলাদেশের ২০ লাখ শ্রমিক কাজ করছে আমরা আরো স্কিলড নন স্কিলড শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে নিতে আগ্রহী। সউদী শ্রমমন্ত্রী আরো ৫ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। আগে সউদী আরবে শ্রমিকদের আকামা পরিবর্তন করা যেত না এখন করা যাচ্ছে। যে ৪২ হাজার নারী শ্রমিক গৃহকাজে যুক্ত রয়েছেন তারা চাইলে এখন থেকে নিজের পরিবার/স্বামীকে কর্মস্থলে নিয়ে যেতে পারবেন।
সউদীর সন্ত্রাস বিরোধী জোটে যোগ দেয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই জোটে ৪০টি দেশ এ পর্যন্ত যোগ দিয়েছে। আমরা মনে করি এটা যুগোপযোগী পদক্ষেপ। সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবিরোধী যেকোন পদক্ষেপেই আমরা সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত এমনটি সামরিক সহযোগিতা দিতেও আমরা প্রস্তুত রয়েছি বলে ও তিনি উল্লেখ করেন।
অস্ট্রেলিয়াতে নিজস্ব চ্যান্সেরি ভবন নির্মাণ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অস্ট্রেলিয়াতেও আমরা নিজস্ব চ্যান্সেরি ভবন করার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে, ’৯৬ মেয়াদে সরকারে আসার পর এই চ্যান্সেরি নির্মাণের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করা হলেও বিএনপি একটিইটও না লাগানোতে এই চ্যান্সেরির অর্ধেক জমি বেহাত হয়ে যাওয়ায় এখন বাকী অর্ধেক জমিতেই চ্যান্সেরি কমপ্লেক্স নির্মাণ হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দেশব্যাপী সৃষ্ট সহিংসতার ঘটনাকে অনভিপ্রেত এবং এটা মানা যায় না এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, সেই বিষয়ে সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের নির্বাচন সংস্কৃতির অতীত দৃষ্টান্ত এমন বলেই মন্তব্য করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ের জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের ভোটারবিহীন নির্বাচন, অতীতের প্রেসিডেন্টশাসিত সরকারের অধীন নির্বাচন, ২০০৩ সালের ইউপি নির্বাচন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়ার সময়কার গণভোট- প্রভৃতি নির্বাচনকালীর সন্ত্রাসের চিত্র তুলে ধরেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • জাবেদ ৯ জুন, ২০১৬, ১১:৩৮ এএম says : 1
    তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন
    Total Reply(0) Reply
  • সুজন ৯ জুন, ২০১৬, ১১:৫৭ এএম says : 1
    দ্রুত গুপ্তহত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আমি সবসময় নির্বাচন চাই
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ