Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

‘ঈদ বাজার’ দখলে ভারতের ‘ভিসা বাজার’

প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০১ এএম, ৯ জুন, ২০১৬

স্টালিন সরকার : জাতি হিসেবে ভারতীয়রা হিংসুটে এবং পরশ্রীকাতর। ‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ’ প্রবাদের মতোই ভারত নিজের অর্থনৈতিক ক্ষতি করেই বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। সেই ভারত হঠাৎ করে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি দরদী হয়ে ঈদ ভিসা নামে ‘সিনেমার টিকিটের মতো ভিসা বিক্রি’ কার্যক্রম শুরু করলো? রহস্য কি? রহস্য আর কিছু নয় ঈদ বাণিজ্য। ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ যাতে ভারতে গিয়ে সেখানেই ঈদের কেনাকাটা করেন সে উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশের যেখানে সেখানে ভিসার বাজার খুলে বসেছে চাণক্যনীতির দেশ ভারত। ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশের মানুষের কাছে পণ্য বিক্রির জন্য ভারতের এ কৌশল সফল হলে দেশের ব্যবসায়ীদের সর্বনাশ হবে। বিশেষ করে যারা শাড়ি-লুঙ্গি, কসমেটিক্স, কাপড়সহ ঈদ উপলক্ষে পণ্য উৎপাদন করেন তাদের পথে বসতে হবে। ভারতীয়দের এই কৌশলের ফাঁদে পা দেয়া কি দেশপ্রেমীদের জন্য সংগত? অবশ্য যারা দাদাদের তোষামোদী করতে অভ্যস্ত তাদের কথা ভিন্ন। কোনো দেশের দেশপ্রেমী মন্ত্রীরা কি সে দেশের নাগরিকদের ঈদের বাজার করতে অন্য দেশ ভ্রমণে উদ্বুদ্ধ করে?
রাজধানীর বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনের নতুন কমপ্লেক্স জাতিসংঘ সড়ক কার্যালয়ে ৪ জুন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ঈদ ভিসা ক্যাম্প চালু করে। ফিতা কেটে ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ ক্যাম্পের কার্যক্রম চলবে। ভিসা আবেদনকারীরা অগ্রিম সাক্ষাতের তারিখ/ই-টোকেন ছাড়াই তাদের ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন সরাসরি এ ক্যাম্পের মাধ্যমে জমা দিতে পারবেন। যা আগে দালালদের হাতে নিয়ন্ত্রিত ছিলো। ভারতীয় ভিসা প্রাপ্তির তারিখ ও ই-টোকেনের জন্য আগে খরচ করতে হতো ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। ঈদ ভিসায় সে বিড়ম্বনা নেই। ভারতীয় হাইকমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উদ্বোধনের সময় একটি লাকি ড্র’র আয়োজন করা হয়। তিন ভাগ্যবান বিজয়ীকে দেয়া হয় জেট এয়ারওয়েজের সৌজন্যে হিমাংশু চন্দ্র (ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা), রিনা আফসার (ঢাকা-মুম্বাই-ঢাকা), রাজীব খান (ঢাকা-দিল্লী-ঢাকা) টিকিট। ভিসা ক্যাম্প থেকে যে সকল যাত্রী টিকিট কিনবেন, জেট এয়ারওয়েজ তাদের জন্য বিশেষ ছাড় দিচ্ছে। ভারতের এই ভিসা বাজারে ক্যাম্প চলাকালীন ট্যুরিস্ট ভিসা আবেদনকারীরা বিনা অ্যাপয়েন্টমেন্ট সরাসরি তাদের আবেদনপত্র জমা দিতে পারেন। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া পরিচালিত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র আবেদনপত্র জমা নেবার জন্য বিশেষ কাউন্টারের ব্যবস্থা করেছে। মজার ব্যাপার হলো, ঈদ উপলক্ষে ভারতের এই ভিসা বাজারে গ্রামের মানুষের কোনো সুযোগ নেই। কারণ ভারতীয় বেনিয়ারা জানেন ঈদে বাংলাদেশের গ্রামের মানুষের বেশি টাকা খরচ করার মতো সংগতি নেই। তাদের ভিসা দিয়ে লাভ নেই। তাই ঈদের ভিসা প্রাপ্তির যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে শুধুমাত্র ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য এ ক্যাম্প খোলা থাকবে। আবেদনকারীদের সশরীরে উপস্থিত হয়ে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। তবে একসঙ্গে ভ্রমণেচ্ছু পরিবারের সদস্যদের (পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী) পক্ষে একজন আবেদনপত্র জমা দিলেই হবে।
ভারতীয় ভিসা পেতে হয়রানির খবর প্রায়ই মিডিয়ায় আসে। অথচ ঈদ উপলক্ষে হঠাৎ সিনেমার টিকিটের মতো ভারতীয় ভিসা বিক্রি শুরু হলো কেন? মূলত রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ ভারতীয় সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে অনেক আগেই। এ কড়াকড়ি থাকলে ঈদে বাংলাদেশীদের কাছে কাপড়সহ-বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে না পারলে হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের। ভারতের আনার কলি, মাচাককালী, থ্রিপিস, লেহেঙ্গাসহ নানা কাপড়ের চাহিদা বাংলাদেশে ব্যাপক। বাংলাদেশ কাপড় বিক্রি করে টিকে রয়েছে অনেক ভারতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তাই দেশটির আমজনতার কাছে ব্যবসায়ীদের সরকার হিসেবে পরিচিত বিজেপির কৌশল নিয়েছে বাংলাদেশীরা যাতে ঈদ উপলক্ষে ভারতে গিয়ে ঈদ বাজার করেন। সে উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের মানুষকে আকৃষ্ট করতে নানা রঙচঙ-এ ভারতীয় ভিসা বাজার খুলে বিজ্ঞাপনের মতো প্রচার করা হচ্ছে। সে ভিসা পেতে জুতার তলী ক্ষয়ে যেত; সেই ভিসা এখন সিনেমার টিকিটের মতো সহজলভ্য! ভারত বাংলাদেশীদের নানা ধরনের ভিসা দেয়। বিজনেস ভিসা, কনফারেন্স ভিসা, কূটনৈতিক ভিসা, চাকরি ভিসা, এন্ট্রি ভিসা, চিকিৎসা ভিসা, জরুরি ভিসা, সাংবাদিক ভিসা, মিশনারিজ ভিসা, দুই মাসের মধ্যে আবার প্রবেশের অনুমতিজনিত ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা, গবেষণা ভিসা, পর্যটক ভিসা, ট্রানজিট ভিসা (ভারতের ওপর দিয়ে অন্য কোনো দেশে যাওয়ার ভিসা) ইত্যাদি। যেহেতু ঈদের কাপড় বিক্রি টার্গেট সে জন্যই ট্যুরিস্ট ভিসা বিক্রির ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম। ৯২ ভাগ মুসলমানের এ দেশে সিয়াম সাধনার রমজানে মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে ফেলেন। মানুষ সারাদিন রোজা রেখে এমনিতেই হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র ভারত ঘুরতে যাবে এটা কেউ বিশ্বাস করবে? এখন লাইনে দাঁড়িয়ে ভারতীয় ভিসা নিতে হচ্ছে। টার্গেট সফল না হলে হয়তো ভারতীয়রা সিনেমার টিকিটের মতো ট্যুরিস্ট ভিসা ফেরি করে বিক্রি করবেন। কারণ তাদের শকুনি দৃষ্টি ঈদ বাজার। তারা ঈদে বাংলাদেশীদের হাতে তাদের পণ্য তুলে দিতে চান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতীয় দূতাবাস ভিসা ইস্যু কেন্দ্র করে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী অলিখিতভাবে ভিসা এজেন্ট নিয়োগ করে উপরি নিয়ে ওই এজেন্টেদের ভিসা সরবরাহ করে থাকেন। ভিসা কড়াকড়ি করায় ওই এজেন্টরাও ক্ষুব্ধ। ঈদ উপলক্ষে ভিসা বাজার চালু করায় ওই পর্দার ভিতরে লেনদেন করা এজেন্টদের ব্যবসা বেড়ে গেছে। তবে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের মুখপাত্র সুজিত ঘোষ এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারটি পরিচালনা করে, এ প্রতিষ্ঠানটি ভারতীয় ভিসা দেয়ার একমাত্র অনুমতিপ্রাপ্ত এজেন্ট। যেসব এজেন্ট বা ব্যক্তি ভারতীয় ভিসা পেতে সহযোগিতার কথা বলবে তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে ভিসা আবেদনকারীদের অনুরোধ জানাচ্ছি। ভারত তাদের জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেবেন; কখনো তারা ঘরের দরজা বন্ধ রাখবেন কখনো কপাট খুলে দিবেন। কিন্তু আমরা যারা নিজেদের দেশপ্রেমী দাবি করছি তারা কেন ভারতীয় পণ্য কেনার জন্য ভিসা বাজারে হুমরি খেয়ে পড়ছি? আমরা কলকাতা, দিল্লী, মুম্বাই, কেরালা, মাদ্রাজ থেকে যদি ঈদের শপিং করি তাহলে আমাদের দেশে যারা গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে কাপড় প্রস্তুত করলো তাদের কি হবে? দেশীয় শিল্প কি মাঠে মারা যাবে না? আমরা দেশপ্রেমী না ভারতীয় তাঁবেদার তার প্রমাণ হয়তো পবিত্র রমজানে হয়ে যাবে। কারণ শপিং-এর জন্য বিদেশ যাওয়া কোনো দেশপ্রেমিকের কর্ম হতে পারে না। যারা ভারতীয় ভিসার জন্য প্রচ- রোদে লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রয়েছেন আপনি নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে উত্তর খুঁজে নিন; আপনি দেশপ্রেমী না তাঁবেদার।



 

Show all comments
  • Mohammed saleh. ৯ জুন, ২০১৬, ১:২৬ পিএম says : 0
    যাদের ভিতর দেশ প্রেম নাই, দেশের প্রতি মমত্ববোধ নাই তারাই ভারতে যাবে কেনাকাটা করার জন্য ? কিন্ত ভারতীরা কি কখনো আমাদের দেশে দল ভেধে কেনাকাটার জন্য আসে ?
    Total Reply(0) Reply
  • Siraj ৯ জুন, ২০১৬, ১:৫৪ পিএম says : 5
    They are not our well wisher, they always think about their interest , they think Bangladesh is part of their business zone. So we should boycott India,
    Total Reply(0) Reply
  • Mobarok ৯ জুন, ২০১৬, ১:৫৮ পিএম says : 3
    thanks to the writer.
    Total Reply(0) Reply
  • Miznur Rohamn ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৭:৪৪ এএম says : 0
    আমাদের জন্য ভালো ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ‘ঈদ বাজার’ দখলে ভারতের ‘ভিসা বাজার’
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ