পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তারেক সালমান : নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে দেশে একের পর এক হত্যাকা- ঘটেই চলেছে। নানা পদক্ষেপ নিয়েও কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না গুপ্তহত্যা। কখনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে। কখনও ভিন্নমতাবলম্বীকে খুন করা হচ্ছে। আবার কখনও ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে অনলাইন ব্লগারদের টার্গেট করে চালানো হচ্ছে এ হত্যাযজ্ঞ। সবশেষে পুলিশ বাহিনীর এক চৌকস কর্মকর্তার পরিবারের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে তার স্ত্রীকে। চট্টগ্রামে জঙ্গিদমনে ভূমিকার জন্য প্রশংসিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে রোববার চট্টগ্রামে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিবারের ওপর হামলাকে জঙ্গি ও দুর্বৃত্তদের নতুন কৌশল বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। সরকারকে চাপে রাখতে পরিকল্পিতভাবে একটি গোষ্ঠী একের পর এক হত্যাকা- ঘটিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগ।
এসব হত্যাকা-ে অজ্ঞাত খুনিরা বেছে নিচ্ছে ‘নতুন কৌশল’। এর অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা এদের পরিবারের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। উদ্দেশ্য এসব বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল একবার ভেঙে পড়লে তারা আর আগের মতো সরকারকে সার্ভিস দিতে পারবে না, যাতে করে সরকারের প্রশাসনের ওপরও সরকারের লাগাম ক্রমেই ঢিলে হয়ে পড়বে। এতে চিন্তিত সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে এসব হত্যার পেছনে যারাই ইন্ধন দিচ্ছে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দল ও সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
এদিকে, দেশে শুরু হওয়া ‘গুপ্তহত্যা’ ঠেকাতে সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে নাশকতা ঠেকাতে মানুষ যেভাবে এগিয়ে এসেছিল, সেভাবে সাম্প্রতিক একের পর এক গুপ্তহত্যা বন্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ‘ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য, অগ্রগতি ব্যাহত করার জন্যই’ একের পর এক গুপ্তহত্যা ঘটানো হচ্ছে। এই গুপ্তহত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে, তারা কোথায় বসে পরিকল্পনা করে, সেই তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরবরাহ করতে সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে গত সোমবার বিকালে মদিনায় হিলটন হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সৌদি আরব সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যায় জড়িতদের রেহাই দেয়া হবে না। তিনি এ ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, গত কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা ঘটল। একজন পুলিশ অফিসারের স্ত্রী, তার তো কোনো দোষ নেই। বাচ্চাকে স্কুলে দিতে গিয়েছিল, বাচ্চার সামনে তাকে হত্যা করেছে। ইনশাআল্লাহ, এগুলি ধরা পড়বে। এটা আমি বলতে পারি, যারা অন্যায় করেছে তারা ধরা পড়বে। তাদের রেহাই আমরা দেব না।
সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, জঙ্গিরা ক্ষণে ক্ষণে তাদের স্থান ও কৌশল পরিবর্তন করছে। যে কোনো মূল্যে জঙ্গি-সন্ত্রাসী নির্মূল করবে সরকার। এর জন্যে যা যা করা দরকার তার সবই করা হবে।
সরকারকে বিব্রত অবস্থায় ফেলতে ও পুলিশের মনোবল দুর্বল করতেই পরিকল্পিতভাবে এসব হত্যাকা- ঘটানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে ও সরকারকে বিব্রত করতেই দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গি চক্র এ কাজ করছে।
মনিরুল আরও বলেন, পুলিশকে ডিমরালাইডজ (দুর্বল করা) করার কৌশল আজ নতুন নয়। অনেক আগে থেকে এই চেষ্টা চলছে। হামলা চালিয়ে কিংবা পরিবার ও নিকট আত্মীয়-স্বজনদের হত্যা করে পুলিশকে দুর্বল করা সম্ভব নয়। পুলিশ ঠিকই তাদের দায়িত্ব পালন করে যাবে। পুলিশকে দুর্বল করার এ কৌশল কাজে আসবে না।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এই টার্গেটের নেপথ্যে বড় ধরনের নাশকতার ছক রয়েছে। তবে সম্ভাব্য নাশকতা ঘটানোর আগে একের পর এক হামলা চালিয়ে পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়াসহ মানসিক চাপে রাখতে চায় দুর্বৃত্তরা। এসব টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনায় র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। প্রতিটি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার চাপ দেয়া হচ্ছে। বিদেশিরা অপরাধীদের ধরতে সরকারকে চাপ দিচ্ছে।
এদিকে সরকারি দলের অনেকে মনে করছেন, জঙ্গি দমনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ প্রদর্শন করে আসছে। পাশাপাশি জঙ্গি নির্মূলে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যখন কোনোভাবেই সরকারকে কাবু করা যাচ্ছে না, ঠিক তখন কৌশল পাল্টাচ্ছে জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা। পুলিশ বাহিনীর একজন চৌকস কর্মকর্তার পরিবারের ওপর হামলা তাদের কৌশল পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। কৌশল পরিবর্তনের অংশ হিসেবে তাদের ‘টেস্ট কেসের’ স্বীকার হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু।
তাদের মতে, একজন মানুষের স্পর্শকাতর জায়গা হলো তার স্ত্রী, পরিবার-পরিজন। জঙ্গিরা বাবুল আক্তারের সেই স্পর্শকাতর জায়গায় আঘাত করে তার এবং পুরো পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভাঙতে চেয়েছে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঝিনাইদহে পুরোহিতকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সদর উপজেলার করাতিপাড়া এলাকায় তিন মোটরসাইলে আরোহী তার ওপর হামলা চালায়। তার সঙ্গে কারও ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল না বলে জানায় তার পরিবার। এদিকে জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর আগে গত ৫ জুন নাটোরে ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার দু’দিন পর ৭ জুনই পুরোহিত হত্যার ঘটনা ঘটল। সর্বশেষ ঝিনাইদহ-নাটোর এবং চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার হত্যাকা-গুলো সরকারি দলকে অনেকটাই চিন্তিত করে তুলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতারা এখন নিজেদের এবং পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যা ও ঢাকার বাইরে জঙ্গি হামলা ছড়িয়ে দেয়া এগুলো তাদের নতুন কৌশলের অংশ। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন কৌশলের অংশ হিসেবে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের চৌকস ও মেধাবী কর্মকর্তাদের স্ত্রী ও পরিবার টার্গেট করা হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা বাদ দিয়ে ঢাকার বাইরে চালানো হচ্ছে তাদের ‘কিলিং মিশন’, যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টি করা যায়। পাশাপাশি তাদের মনোবল ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতি সাধন করা যায়।
এদিকে ঝিনাইদহে পুরোহিতকে গলা কেটে হত্যা, নাটোরে খ্রিস্টান ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজকে গলা কেটে হত্যা এবং চট্টগ্রামে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে হত্যা নতুন কৌশলেরই অংশ বলে মনে করে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নীতি-নিধারণী মহল। তাদের মতে, সরকারের বিরুদ্ধে করা আগের ষড়যন্ত্র যেমন সফল হয়নি, তেমনি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ওপর হামলা করে তাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না জঙ্গিরা। কারণ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের অন্য কর্মকর্তারা শতভাগ দায়িত্বশীল।
আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা বলছেন, সম্প্রতি জঙ্গি হামলার ধরন থেকে আরও মনে হচ্ছে তাদের টার্গেট এখন ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে জেলা শহর, মফস্বল শহরগুলোতে আতঙ্ক সৃষ্টি করা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সরকারকে অস্থিতিশীল করে তুলতে নানা চক্রান্ত অব্যাহত আছে। জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত তাদের কৌশল পাল্টাচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যখনই মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকাজ শুরু করেছে, তখন থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সফলতার সঙ্গে তা মোকাবিলা করেও আসছে।
এদিকে, সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, গোপন সংগঠনগুলো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। নরম লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে তারা বোঝাতে চেষ্টা করছে যে বাংলাদেশে সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
দেশে একের পর এক হত্যাকা-ের ঘটনা কেনো থামানো যাচ্ছে নাÑবিবিসি বাংলার এই প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীতে গুপ্তহত্যা ঠেকানো অত্যন্ত দুরূহ একটি কাজ। এই পরিকল্পিত গুপ্তহত্যার মধ্য দিয়ে এই মুহূর্তে ভীতিসঞ্চার করা ও পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে মনে করেন ইনু। দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখনই শান্ত থাকে তখনই একটা ধাক্কা দেয়ার জন্যে এরকম দুই-পাঁচটা ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, জামায়াতই এসব ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে কখনও তারা জঙ্গি, কখনও তারা সন্ত্রাসী। তারা যেমন ক্ষণে ক্ষণে মুখোশ পরিবর্তন করে, তেমনি চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে কৌশলও পরিবর্তন করে।
তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে একে একে; ঠিক তখনই তারা এসব টার্গেট করে কিলিং শুরু করেছে।
হানিফ বলেন, সব ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়ে এখন তারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দক্ষ-মেধাবী কর্মকর্তাদের স্ত্রী ও পরিবার-পরিজনের ওপর হামলা করে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার চক্রান্ত করছে। সব অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হবে বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।