Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এক সনদের জন্য দুইবার পরীক্ষা!

প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী বছর থেকে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা উঠিয়ে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু অভিভাবকেরা চলতি বছর থেকেই এই পরীক্ষা বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। এ নিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান, স্কুলে স্কুলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলও করছেন। তারা বলছেন, এখন যারা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে, তাদের যদি এ বছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিতে হয়, তাহলে তিন বছর পর অষ্টম শ্রেণি শেষ করে আবার তাদের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় বসতে হবে। তাহলে প্রশ্ন হলো একজন শিক্ষার্থীকে কতবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিতে হবে? তবে এ বছরই প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা তুলে দেওয়া হবে কি না এখনও সেই সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা চালু হওয়ায় তা বিলুপ্ত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও মন্ত্রিসভা থেকেই নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সমাপনী পরীক্ষার এখনও অনেক দেরি আছে। আমরা চেষ্টা করছি, বন্ধ করতে তো আর সময় লাগবে না। আমরা যদি অক্টোবরে বলে দেই পরীক্ষা হবে না, তাহলেই তো হলো। এতে যদি বাচ্চাদের মঙ্গল হয়, আমাদের তো অসুবিধা নেই।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে ২০০৯ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষা। এর পরের বছর ২০১০ সাল থেকে চালু হয় মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা। জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে সরকার গত ১৮ মে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী বছর থেকে অষ্টম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। তখন এই পরীক্ষার নাম প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) হবে বলেও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
শিক্ষার প্রাথমিক স্তর পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় চলতি বছর থেকেই সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তারা ইতোমধ্যে এই পরীক্ষা বাতিলের নির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের সামনে মানববন্ধনও করছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, একজন শিক্ষার্থী চলতি বছর পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় বসলে আবার অষ্টম শ্রেণিতে তাদের সমাপনী পরীক্ষায় বসতে হবে। তাহলে একজন শিক্ষার্থীকে কি দুইবার করে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
২০১৬ সালেই প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে গতকালও (বুধবার) রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ এবং ফয়জুর রহমান আইডিয়াল স্কুলের সামনে মানববন্ধন করেছেন অভিভাবকরা। মানববন্ধন থেকে অভিভাবকরা বলেন, একদিকে কোচিং বাণিজ্যের ফাঁদ অনদিকে জিপিএ-৫ পাওয়া না পাওয়ার নিয়ে আতঙ্ক। পরীক্ষা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের সাথে সাথে অভিভাবকরাও এই পরীক্ষা নিয়ে আতঙ্কে। তারা বলেন, সরকার নিজেই শিক্ষানীতি লঙ্ঘন করছে। শিক্ষানীতিতে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণের কথা উল্লেখ নেই। তারা আরও প্রশ্ন রেখে বলেন, প্রাথমিকের একটি সনদের জন্য শিক্ষার্থীদের কতবার পরীক্ষা দিতে হবে? তারা অবিলম্বে এই পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানান।
এদিকে সমাপনী পরীক্ষা তুলে দিয়ে কোন পদ্ধতিতে পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হবে তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগে পঞ্চম শ্রেণিতে আলাদা করে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী চালুর পর থেকে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকেই বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা উঠে গেলে কিভাবে বৃত্তি দেয়া হবে এ বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরীক্ষা উঠে গেলে বৃত্তির কী হবে অনেকেই জানতে চায়। আমি বলি, পরীক্ষাই নেই, সেখানে বৃত্তির কী আছে? প্রাথমিক সমাপনী উঠে গেলে কীভাবে বৃত্তি দেওয়া যায় সে বিষয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. হুমায়ুন খালিদ বলেন, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা উঠে গেলে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, এবার পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা উঠে গেলে বাচ্চাদের মঙ্গল হবে না, কারণ বৃত্তির বিষয় আছে। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা উঠে গেলে বৃত্তি দেওয়া নিয়ে নতুন সমস্যা সৃষ্টি হবে। এ বছরের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি আছে জানিয়ে সচিব বলেন, সরকার বন্ধ করে দিলে নেব না। তবে এবার পরীক্ষা নেওয়া না হলে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি দেওয়া হবে কীভাবে?

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এক সনদের জন্য দুইবার পরীক্ষা!
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ