Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৭৬ শতাংশ রোগী বাড়ি ফিরেছেন

ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালের চিত্র

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

২০১৯ সালের শুরু থেকে গতকাল ১০ আগস্ট শনিবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৬ হাজার ৬৬৮ জন রোগী। আর চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৭ হাজার ৮৭৬ জন। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরা মানুষর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। গত ৯ আগস্ট শুক্রবার পর্যন্ত ৭৬ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। গতকাল শনিবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত নিয়মিত পর্যালোচনা সভায় স্বাস্থ্য অধিদফতর এই তথ্য জানায়।

সভায় জানানো হয়, গত ৭ আগস্টের তুলনায় গত ৮ এবং ৯ আগস্ট হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরা রোগীর হার বেড়েছে যথাক্রমে ২৪ শতাংশ ও ১৯ শতাংশ। সারা দেশে বর্তমানে মোট রোগী ভর্তি আছেন ৮ হাজার ৭৬৩ জন। ঢাকার ৪০টি সরকারি বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে এ মুহূর্তে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৭৬ জন।

তবে, রাজধানী ঢাকার বাইরে সারা দেশে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৬৮৭ জন। যা গত ৮ আগস্টে ছিল ৩ হাজার ৬২৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় (৮ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে ৯ আগস্ট সকাল ৮টা) পর্যন্ত নতুন করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাপসাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ২ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হবার সংখ্যাও হ্রাস পাচ্ছে। গত ৭ ও ৮ আগস্টের তুলনায় গতকাল ৯ আগস্ট দেশে নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর হার কমেছে যথাক্রমে ১৮ এবং ১৪ শতাংশ। আর স্বাস্থ্য অধিদফতর এ পর্যন্ত ২৯ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে।
সভায় আরও জানানো হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার আয়োজনে বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় ঢাকার দুটি বেসরকারি হাপসাতালে শিশু বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বিশেষ পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু বিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা, হেলথ ইমারর্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার, ডেঙ্গু বিষয়ক কার্যক্রমের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান প্রমুখ।

এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চলতি মাসের ১০ দিনেই ২০ হাজার ৩৮৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন ১৬ হাজার ২৫৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ১৭৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার আগের দিন (৯ আগস্ট) এই সংখ্যা ছিল দিন ২ হাজার ২ জন। রাজধানী ঢাকাতেই এক হাজার ৬৫ জন রোগী এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার ১১১ জন ভর্তি হয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। এই হিসেবে দেখা যায় প্রতি ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন ৯০ জনের ওপরে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৫৩ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৬৩ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে২৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৭৮ জন, বিএসএমএমইউতে ৩০ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১৪ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১১৩ জন, বিজিবি হাসপাতালে ২ জন, সিএমএইচে ৩৪ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৭২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। এ ছাড়াও রাজধানী ঢাকার বাইরে ২৭৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২২৬ জন, খুলনা বিভাগে ১২৬ জন, রংপুর বিভাগে ৭১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১১৪ জন, বরিশাল বিভাগে ১৭৮ জন, সিলেট বিভাগে ৩২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী গতকাল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন।
সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮ হাজার ৮৪৪ জন। বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। মৃতের সংখ্যা এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২৯ জন বললেও বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ৮২।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরো বাড়ছে। গণকাল শনিবার সকালের পূর্ববর্তি ২৪ঘন্টায় বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠীতে আরো ১৬৮জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে। যা এর পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় ছিল ১৬৪। শনিবার দুপুর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দেড় হাজার অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরই ভর্তি হয়েছেন ৭শতাধীক রোগী। এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালটিতে শণিবার দুপুরে ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন ছিল সাড়ে ৩শরও বেশী। এ সময় দক্ষিণাঞ্চলের জেলা-উপজেলা হাসপাতালগুলোতে মোট চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ছিল ৭শতাধীক। বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ১০ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতালটিতে ৪ জনসহ দক্ষিণাঞ্চলে মোট ৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হল।
শনিবার সকালের পূর্ববর্তি ২৪ঘন্টায় নতুনকরে যে ১৬৮ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দক্ষিণাঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন তার মধ্যে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ছিল ৯৮জন। এছাড়া ভোলাতে ১৯, পটুয়াখালীতে ১৭, পিরোজপুরে ১৪ এবং বরিশাল ও বরগুনার জেলা-উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ৯জন করে আর ঝালকাঠীতে দুজন ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন।

পাবনা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানায়, পাবনা জেনারেল হাসপাতালে গণ ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। নারী-পুরুষ ও শিশু মিলিয়ে এখন এই হাসপাতালে ৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী রয়েছেন। ভালো হয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার পর আবার নতুন ডেঙ্গু রোগে নতুন রোগী আসছেন। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আল আকসাদ মাসুর আনান গণকাল শনিবার বিকাল ৪টায় এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগ দেখা দিয়েছে। জেলার ফরিদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন গণ ৪৮ ঘন্টায়। এদের মধ্যে ২ জনকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। অন্যরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আজ বাড়ি চলে গেছেন। পাবনার সিভিল সার্জন মেহেদী ইকবাল জানিয়েছিলেন, এ পর্যন্ত ১০টি স্থানে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করা হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ আতঙ্কিত না হয়ে সাবধান থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন। সবশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, এডিস মশা নির্মলের ওষুধ এখনও পাবনা পৌঁছেনি।

ভান্ডারিয়া (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানায়, পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু জ্বর। শনিবার দুইজন ডেঙ্গু রোগী ভান্ডারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছে। ডেঙ্গু আতঙ্কে সাধারণ জ্বর হলেও রোগীরা ডেঙ্গুজ্বর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভীড় জমাচ্ছে হাসপাতালে।
ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বর শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। প্রথম দিকে ভান্ডারিয়ায় তেমন কোনো ডেঙ্গু রোগী না এলেও গণ ২ সপ্তাহে মধ্যে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। আক্রান্তরা হচ্ছে- উপজেলা শিয়ালকাঠী গ্রামের সানজিদা (২০), সুজন মিস্ত্রি (২৪), ধাওয়া গ্রামের শহিদ (২৩), পৌর শহরের মিলন হাওলাদার (৩৯), খোকন (১৭), রাবেয়া (২৪), তেলিখালী গ্রামের কালাম (৪২) ,ইমন (১৬), জুনিয়া গ্রামের ফেরদৌসী (৩০) ভিটাবাড়ীয়া গ্রামের নজবুল­াহ (২৫) ,খায়রুল (১২) পশারীবুনিয়া গ্রামের হাফসা (১৬), বোতলা গ্রামের মানিক (৪০) ও নদম‚লা গ্রামের মারুফা (৩৫) ।
মঠবাড়িয়ায় (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মঠবাড়িয়ায় গত ২৪ ঘন্টায় ২ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তরা হলেন মো. হিরু (৫০) ও রেখা রেগম (২৭)। এছাড়া শুক্রবারে ৬ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গু

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ