Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দৃষ্টি সবার পশুর হাটে

বাজারে দেশি গরুর চাহিদা ও সরবরাহ বেশি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ঈদুল আজহার আর মাত্র দুইদিন বাকি। এখনো কোরবানীর হাটের বেচা-কেনা জমে ওঠেনি। তবে গতকাল থেকে হাটে ক্রেতাদের পদচারণা বেড়েছে। বিক্রিও হয়েছে টুকটাক। আজ থেকে বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়ার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর প্রতিটি হাটেই দেশি গরুতে ছেয়ে গেছে। কোরবানীর হাটের জন্য নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে না যেতে সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসন থেকে বার বার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হলেও থোড়াই কেয়ার করছেন হাটের ইজারাদাররা। প্রভাবশালীদের দাপটে ক্রমেই হাটগুলো নির্ধারিত এলাকা ছেড়ে পাড়া-মহল্লা ও সড়কের ওপর চলে গেছে।

স্থায়ী হাট গাবতলী, গোপিবাগ ও কমলাপুর হাট, কাউয়ার টেক হাট ও সাদেক হোসেন খেলার মাঠ ও আফতাব নগর হাটসহ রাজধানীর সব হাটেই কোরবানীর পশুতে ছেয়ে গেছে। নির্ধারিত স্থান অতিক্রম করে হাটগুলো আশেপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। এতে করে ওই সমস্ত এলাকায় বসবাসকারীরা পড়েছে চরম ভোগান্তির মধ্যে। প্রতিবাদ তো দুরের কথা, হাটগুলোর ইজারাদারেরা প্রভাবশালী হওয়ায় এনিয়ে কেউ টু শব্দটিও করার সাহস করছে না। কমলাপুর কবরস্থান এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, হাট বাড়তে বাড়তে আমার বাড়ির সামনে পর্যন্ত এসে গেছে। আমার বাড়ির একেবারে আঙ্গিনায় গরু তোলা হয়েছে। অথচ এনিয়ে আমি কোন প্রতিবাদ করতে পারছি না। কারণ যারা হাটের ইজারা নিয়েছে তাদেরকে এ নিয়ে কিছু বলার ক্ষমতা আমার নেই। আমাদের শুধু সহ্য করা ছাড়া আর কোন ক্ষমতাই নেই।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সুনির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে কোন হাটই নেই। রাজধানীর সবকটি হাটই সীমানা পেরিয়ে আশেপাশের অলি গলি ও প্রধান সড়কে পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। কোনও হাটেরই সীমানা ঠিক নেই। কাউয়ার টেক ও সাদেক হোসেন খোকা মাঠের ভেতর হাট বসানোর অনুমোদন দেওয়া হলেও হাট চলে গেছে ধোলাইখাল সড়কে। নারিন্দার অলিগলিতেও হাটের খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। গোপীবাগ-কমলাপুর হাটের গরু বাঁধা হয়েছে মতিঝিল প্রধান সড়কের ধারে। পাশাপাশি কমলাপুর বক্সকালভার্ট সড়ক পরিণত হয়েছে কোরবানির পশুর হাটে। এ সড়ক দিয়ে এখন আর যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। পোস্তগোলা শ্মশানঘাট হাটের পশু বেড়িবাঁধের দু’ধারে বাঁধা হয়েছে। পুলিশের উদ্যোগে হাটগুলোতে চলছে জাল টাকা শনাক্তের কাজ।

সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশের নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও রাস্তার ওপর কেন হাট বসানো হলো জানতে চাইলে কাউয়ার টেক ও সাদেক হোসেন খোকা মাঠ হাটের স্বেচ্ছাসেবক অনন্ত বিপ্লব বলেন, প্রচুর গরু আসছে। এত গরু এই ছোট মাঠে রাখার জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে কয়েকদিনের জন্য আমরা রাস্তা ব্যবহার করছি। তবে রাস্তায় গরুর কারণে যাতে যানজট না হয় সে জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা আছে। ধোলাইখাল এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাট যারা ইজারা নিয়েছে তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা মুশকিল।

প্রসঙ্গত, হাট ইজারা দিতে সিটি কর্পোরেশন যে কয়টি শর্ত দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল সীমানা অতিক্রম না করা। এ ছাড়া সিটি কর্পোরেশন থেকে বলা হয়েছে, কোরবানির পশু হাটের বাইরে এলেই আটক করা হবে। কিন্তু মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার পুলিশ কিংবা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সীমানা লংঘনকারী ইজারাদারদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল সাবরিন বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে তাদের মোবাইল টিমের তৎপরতা চলছে। কোনও অসঙ্গতি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোমবার থেকে হাটে কোরবানির পশু উঠা শুরু হলেও গতকাল পর্যন্ত ক্রেতার উপস্থিতি ছিল কম। হাটে ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থই বেশি। আজ শনিবার থেকে হাটে ক্রেতা বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ধূপখোলা হাটে আসা কুষ্টিয়ার বেপারি আলাল হোসেন।

গাবতলী পশুহাট ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন জাতের গরুতে ভরে উঠেছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক থেকে শুরু করে রায়েরবাজার অভিমুখে এক কিলোমিটার পর্যন্ত এগিয়েছে হাটের বিস্তৃৃতি। রাস্তার দুপাশেও পশু রাখার শেড করা হয়েছে। এসব শেডে এখন কেবলই পশু। এছাড়া ট্রাকে ট্রাকে গরু আসছেই। সেগুলো তোলা হচ্ছে হাটে। ছোট, বড়, মাঝারি বিভিন্ন আকৃতির গরুতে পূর্ণ হাট। বেচাকেনা তেমন জমে ওঠেনি। তবে দুয়েকটি বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন হাটের ইজারাদার লুৎফর রহমান। তার অভিমত শনি ও রোববার হবে মূল বেচা কেনা। মূলত ওই দুটি দিনকে উদ্দেশ্য করেই এখন কেবল হাটে পশু জমায়েত করছেন ব্যাপারী ও খামারিরা।

পশুগুলো যাতে সারিবদ্ধভাবে রাখা যায়, সে জন্য বাঁশের শেড করে দেয়া হয়েছে। বালু দিয়ে দেয়া হয়েছে নিচে। তারপরও প্রবেশপথ ও হাটের বিভিন্ন স্থান কাদাপানিতে সয়লাব হয়ে আছে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের খামারি পল্টু জানান, হাটে এখন পর্যন্ত তেমন অব্যবস্থাপনা চোখে পড়েনি। জাল নোট শনাক্তের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক বুথ বসিয়েছে। ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। পশু আমদানি প্রচুর হলেও দাম উঠছে না। ক্রেতারও দেখা নেই।

কুষ্টিয়ার আরেক খামারি বাবর জানান, তিনি নিজের খামারের দুটি গরু হাটে এনেছেন। পথে কোনো চাঁদাও দিতে হয়নি। তবে পশুর দাম উঠছে না। ভারতীয় গরুও অনেক হাটে উঠেছে বলে এমন অবস্থা বলে তার অভিমত।
গত সপ্তাহখানেক ধরেই রাজধানীর হাটে এসেছে ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের পশু। এ কয়দিন কাজের ব্যস্ততা আর বৃষ্টির কারণে হাটে ক্রেতার আনাগোনা কিছুটা কম ছিল। তবে, গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে প্রতিটি হাটেই ক্রেতা বেড়েছে। ছোট আকারের, বিশেষ করে ৬৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকা দামের গরু বিক্রি বেশি হচ্ছে। তবে, বড় গরুর বেচাকেনা এখনো শুরু হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন জামাল উদ্দিন ব্যাপারী। এক দিন আগে ২৪টি ছোট গরু হাটে তুলেছেন। এর মধ্যে চারটা বিক্রি হয়ে গেছে। জামাল উদ্দিন বলেন, গতকাল শুক্রবার থেকে হাটের অবস্থা ভালো। বেচাকেনা বেড়েছে। কুষ্টিয়ার খোকসা থেকে ১৫টি গরু এনেছিলেন আমিরুল ইসলাম ব্যাপারী। এর মধ্যে ছয়টি গরু বিক্রি করেছেন। আমিরুল বলেন, ছোট গরুর বেচাকেনা ভালো।

এদিকে আফতাবনগর পশুর হাটে ট্রাকে করে দেশের নানা প্রান্ত থেকে গরু ও ছাগল নিয়ে আসছেন ব্যাপারীরা। এ হাটে প্রচুর গরু ও ছাগল থাকলেও ক্রেতা কম। তবে ব্যাপারীরা আশা করছেন, বেচাকেনা ভালো হবে। এছাড়া আবহাওয়া ভালো থাকায় স্বস্তিতে রয়েছেন তারা। আফতাবনগরের শেষ প্রান্তে রাস্তায় বসেছে কোরবানির পশুর হাট। রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধ ভাবে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে গরু ও ছাগল। এ হাটে দেশি গরুর সংখ্যাই বেশি। ক্রেতাদেরও চাহিদা দেশি গরু। তবে ঈদ ঘনিয়ে আসায় ও গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বিকেল থেকে হাট ভালই জমেছে বলে জানা গেছে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খামারি দুলাল মিয়া নিজ খামারের ১০টি গরু নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে আফতাবনগর হাটে এসেন। সকাল থেকে তিনি কোনো গরু বিক্রি করতে পারেননি। তবে গতকাল বিকেলে একটি গরু বিক্রি করছেন। দুলাল জানান, তিনি তার প্রতিটি গরু দুই লাখ থেকে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম চাচ্ছেন।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা থেকে আব্দুল মজিদ তার খামারের মাঝারি সাইজের কয়েকটি গরু নিয়ে আফতাবনগর পশুর হাটে এসেছেন। তার প্রতিটি গরু ৭৫ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত তিনি দাম হাঁকাচ্ছেন। কুষ্টিয়ার ব্যাপারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আবতাফনগর হাটে ১৯টি গরু নিয়ে এসেছি। এখনো বিক্রি শুরু হয়নি।



 

Show all comments
  • Al Amin ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
    তবে গরুর দাম তুলনামুলক ভাবে গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি.... ইন্ডিয়া থেকে গরু না আসায় খামারীরা গরুর মূল্য দ্বিগুন করে দিয়েছে... এর ফলে সাধারণ মানুষ ও যারা ছোটখাটো চাকরি করে তারা চড়া দামে গরু কিনতে পারছে না.. সরকারি ভাবে গরুর মূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে... তাহলে কোরবানির পশুর হাট আরো জমে উঠবে...
    Total Reply(1) Reply
    • Yourchoice51 ১০ আগস্ট, ২০১৯, ৯:২০ এএম says : 4
      What percentage of middle class people can afford qurbani in Bangladesh with Halal income? Does anyone have the answer?
  • Zowadul Karim Khan ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
    কোরবানি তো দিতেই হবে। দাম অত্যধিক।
    Total Reply(0) Reply
  • Md RI Riyad ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
    পুশু কুরবানির সাথে মনের পুশুটাকেও কুরবানী করা জরুরি।
    Total Reply(0) Reply
  • Hafijur Rahaman ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
    আপনার আশপাশে যদি অসহায় গরিব দুঃখী মানুষ না খেয়ে থাকে, আপনি কুরবানি দেন আর হজ্ করেন এর কোনোটাই আল্লাহর দরবারে কবুল হবেনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Ahmed Sunny ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
    ভাই, গরুটা কত নিলো? - ৮০ হাজার। জিতসেন, ভাই। অনেক কমেই পাইসেন। গরুর ক্রেতা খুশি হয়ে গেলেন। চোখে মুখে ফুটে উঠলো একটি জয়ী জয়ী ভাব। ভাই, কত? - ১ লাখ বিশ। নাহ, বেশি নিসে। কমপক্ষে বিশ হাজার টাকা ঠকসেন। ক্রেতার মুখটা চুপসে গেল। চোখে মুখে হতাশা। সকালে যে নিয়্যত বা ইচ্ছা নিয়ে এই দুই ক্রেতা বের হয়েছিলেন, আশেপাশের মানুষের কথায় তা মুহুর্তে পাল্টে গেল। তাদের কাছে জয়-পরাজয় নির্ধারন হচ্ছে এখন মুল্যের ভিত্তিতে। কুরবানি তো আল্লাহর জন্য। টাকা কম হোক বেশি হোক,ইখলাসটাই এখানে আসল। কী উদ্দেশ্যে আপনার কুরবানি, কার জন্যও এ কুরবানি - এটার ভিত্তিতেই নির্ধারণ হবে আপনার জয় পরাজয়। যদি সেই উদ্দেশ্য ঠিক না থাকে,কম দামে কিনে জিতে আসলেও কেউ হারতে পারে, বেশি দামে কিনে ঠকে আসলেও কেউ হতে পারে জয়ী। "ও সব পশুর রক্ত, গোশত আল্লাহর কাছে কিছুই পৌঁছে না। বরং তোমাদের পক্ষ থেকে তোমাদের তাকওয়াই তাঁর কাছে পৌঁছে”। - সুরা আল হজ্জ
    Total Reply(0) Reply
  • Mostak Ahmad ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
    পশুর হাটে পশুর চাইতে মানুষ বেশি।।আগে ভাবতাম, পশুর হাটে পশুরাই কেনাবেচা করে।।এখন দেখি পশুর হাটে পশুরাই পণ্য! কি আজিব!
    Total Reply(0) Reply
  • Yourchoice51 ১০ আগস্ট, ২০১৯, ৮:০৪ এএম says : 0
    Where all these people get money to buy qurbani animals at such high prices? …..Profiteering, Bribe, cheating and what not?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদুল আজহা

৯ জুলাই, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ