Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নেই

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

১৮ মাস ধরে কারাবন্দি রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কারাবন্দি অবস্থায় ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ায় এখন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সেখানে তিনি যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না দাবি করে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে বিএনপি। এরই মধ্যে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ভীষণ অবনতি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন দলটির নেতারা। এতোটাই অবনতি যে, স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা পর্যন্ত করতে পারছেন না। ইনস্যুলিন ব্যবহারের পরেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ তো হচ্ছেই না, বরং তা বিপজ্জনক মাত্রায় অবস্থান করছে। ইতোপূর্বে তার মুখে সৃষ্টি হওয়া ক্ষত সেরে যাওয়ার পর আবারও নতুন করে কয়েক জায়গায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। যা তার মুখে প্রচন্ড ব্যথার সৃষ্টি করছে। এছাড়া হাড়ের ব্যথাসহ শারীরিক অন্যান্য অসুস্থতার কারণে তিনি হাঁটাচলা পর্যন্ত করতে পারছেন না। তাঁর শারীরিক অবস্থার এই অবনতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিএনপি সারা দেশের নেতাকর্মীরা। এই অবস্থায় গত ৬ আগস্ট হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত করেন তার পরিবারের সদস্যরা। সাক্ষাত শেষে বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তারাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বিএনপি ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসকদের সূত্রে জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়া এখনও গুরুতর অসুস্থ। বারবার ইনস্যুলিন পরিবর্তন এবং ইনস্যুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করার পরেও কোনো অবস্থাতেই তার সুগার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো সময় এটি ২৩ মিলিমোল পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে খাবারের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেয়াতে শরীরের ওজন অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে। ব্যথার কারণে রাত্রে তার ঘুম হচ্ছে না এবং সারাক্ষণ তিনি অস্থির থাকছেন। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। হুইল চেয়ারে করে তাকে চলাফেরা করতে হচ্ছে।

বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর সভাপতি ডা: মো: হারুন আল রশিদ জানান, বেগম জিয়ার ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণই হচ্ছে না। ১৬ থেকে ২৬ মিলিমোল পর্যন্ত প্রতিনিয়ত থাকছে। কোনোভাবেই সুগার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। ইনস্যুলিন নেয়ার পরও তা কাজে আসছে না। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। এতে তিনি স্বাভাবিক খাবার খেতে পারছেন না। তিনি আরও জানান, বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার আগে নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করতেন। কিন্তু দেড় বছর ধরে কারাবন্দি থাকায় তার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। এর মধ্যে তার বেশ কিছু দাঁতের তীক্ষতা বেড়ে যাওয়ায় মুখে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। যেগুলোর নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হয়। যা তিনি এখন পাচ্ছেন না।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যথাযথ চিকিৎসার বিষয়ে আমরা বারবার দাবি করা সত্তে¡ও উন্নতমানের যন্ত্রপাতি বিশিষ্ট দেশের কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। দেশনেত্রীর সুস্থ জীবন প্রত্যাশা করছে দেশবাসী সবাই। কিন্তু সরকারের নির্মম আচরণে নিরাশ হয়ে পড়েছে তারা। দেশবাসী দেশনেত্রীর জীবনের পরিণতি নিয়ে এখনও অজানা আতঙ্ক ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে গভীর মাস্টারপ্ল্যানে ব্যস্ত। এই মাস্টারপ্ল্যান হচ্ছে- গণতন্ত্রের ধ্বংসস্তূপের ওপর জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূল করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অন্যের কাছে বিকিয়ে দেয়া। এই মধ্যরাতের সরকার নতুন কাশিমবাজার কুঠি সৃষ্টি করে দেশের মানুষকে পরাধীন করতে এক সর্বনাশা পথে হাঁটছে বলেই গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রোগে-শোকে-ব্যথা-বেদনায় জর্জরিত রেখে কারাগারে আটকিয়ে রেখেছে। তার জামিনে বাধা দেয়া হচ্ছে।

বিএনপির চিকিৎসক ও আইনজীবীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কারাগারে অবস্থানকালীন তার (খালেদা জিয়া) কক্ষের বাথরুমে তিনি পড়ে গিয়ে প্রচন্ড ব্যথা পান। নির্জন, নিঃসঙ্গ, নিরাপত্তাহীন পরিবেশে দীর্ঘদিন নিদ্রাহীনতা, উদ্বেগ, বিষন্নতাসহ মানসিক রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। বিরূপ, নিপীড়নমূলক পরিবেশ ও অস্বাভাবিক মানসিক চাপের ফলে তাঁর আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। মারাত্মক জীবন-বিনাশী জীবানুদ্বারা ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়াও ধারণা করা হয় যে, কারাগারে থাকার সময় সেখানকার পরিবেশের জন্য ভয়ঙ্কর মাত্রার ভিটামিন-ডি ও ক্যালসিয়ামের শূন্যতা দেখা দিয়েছে যা’ তার হাড়ের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তাছাড়া অনেক আগে থেকেই তিনি বাম কাঁধ ও হাতের ব্যথায় ভুগতেন। এখন সেই ব্যথা ডান কাঁধ ও হাতেও সম্প্রসারিত হয়েছে। তিনি এখন দুই হাতেই নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থার ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। তিনি হুইল চেয়ার ছাড়া চলাচল করতে পারেন না। নিজে নিজে বিছানা থেকে ওঠতে পারছেন না। তাকে সব সময় দুইজন সাহায্য করতে হয়। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে স¤প্রতি তার জিহ্বায় আলসার হয়েছে। তিনি তেমন ভালোভাবে খেতে পারেন না। তার দুটি দাঁতের ভয়াবহ অবস্থা। আমরা এ বিষয়ে কয়েকবার হাসপাতালের চিকিৎসকদের জানিয়েছি। তারা এটার ব্যবস্থা নেবেন বলে এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করেননি। ইদানিং ম্যাডামের আরেকটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেটা হলো-তার বøাড সুগার নামছেই না। তিনি পা সোজা করতে পারেন না। তার কাঁধে সমস্যা দেখা দিয়েছে। মোটকথা তিনি ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আমরা এখনো বুঝতে পারতেছি না যে কেন তার চিকিৎসা নিয়ে এমন করা হচ্ছে? তারা কি চায়। তারা কি ম্যাডামকে মেরে ফেলতে চায়? চিকিৎসাটা তো তার প্রাপ্য। কিন্তু তাকে এই প্রাপ্য চিকিৎসাটাই দেয়া হচ্ছে না। আমরা আরো উন্নত স্পেশালাইজড হাসপাতালে তার চিকিৎসার এবং অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।



 

Show all comments
  • Rashedul Islam ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
    আমগো কিছু নেতাতো ঠিকি ভালো আছে।তাদেরতো ব্যবসা ভালোই চলে
    Total Reply(0) Reply
  • AL Imran H Arafat ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
    Allah ekmatro tumi e hefazatkari
    Total Reply(0) Reply
  • Sani Mir ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
    আমি বাংলাদেশ টাকে খুব শান্তি প্রিয় দেশ মনে করতাম কিন্তু এখন দেখছি পৃথিবীর সবথেকে নোংরা দেশ হিসেবে মনেকরি। আমার বাড়ি ভারত বর্ষে সত্যি আমি বাংলাদেশ কে ঘৃণ্য করি
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah All Numan ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
    আমাদের দেশের যে পরিস্থিতি এর চেয়ে আর কিবা আসা করা জায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Imam Uddin Salim ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
    আজ বিএনপি ভূলে গেছে বেগম খালেদা জিয়া জেলে আছেন আমার বড় কষ্ট হয় নিজের উপর?
    Total Reply(0) Reply
  • খালেদ হোসেন ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
    প্রিয় নেতা, অন্তরের তীব্র ভালোবাসা ও দোয়া ছাড়া আপনাকে দেয়ার মতো আমার সামর্থ্য নেই। মহান আল্লাহ্ যেন আপনার মনোবল হিমালয়ের মতো অটল রাখেন এই দোয়া করি। এই অভাগা দেশের কোটি কোটি মানুষ আপনাকে প্রধানমন্ত্রী দেখার অপেক্ষায়।
    Total Reply(0) Reply
  • খালেদ হোসেন ১০ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
    প্রিয় নেতা, অন্তরের তীব্র ভালোবাসা ও দোয়া ছাড়া আপনাকে দেয়ার মতো আমার সামর্থ্য নেই। মহান আল্লাহ্ যেন আপনার মনোবল হিমালয়ের মতো অটল রাখেন এই দোয়া করি। এই অভাগা দেশের কোটি কোটি মানুষ আপনাকে প্রধানমন্ত্রী দেখার অপেক্ষায়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ