স্বতন্ত্র উৎসব ঈদ
এল ঈদুল ফিতর, এল ঈদ ঈদ ঈদসারা বছর যে ঈদের আশায় ছিল নাক’ নিদ। হ্যাঁ, সুদীর্ঘ
শ্যামল কান্তি দাশ
আমার মায়ের ভাষা
আমার ফসলগুলি, সারাদিন আমার শরীর
আমার মাটির বাড়ি কাদাজলে আমার শরীর
দু’দিকে গহন জল, জলটুকু আমার জীবন-
আমি এই জল ছেড়ে পুলকিত প্রাণে উঠে আসি
আমার গানের ভাষা নলিছেঁড়া প্রতিবাদে লেখা
আমি এই প্রতিবাদ বুকফাটা সুরে লিখে রাখি
আমার লেখার ভাষা মেঘে রোদে আগুনে পোড়ে না
দাঁতে দাঁত, চোখে চোখ, পড়ো এই জীবনমরণ
আমার মুখের ভাষা ভেঙে যাওয়া আমার স্বদেশ
আমার বুকের ভাষা টান টান লুকোনো পাঁজর
রক্তে রঙিন দিন, চারপাশে সবুজ নিশান-
ধোঁয়া ও বারুদ থেকে ভালোবাসা প্রাণ খুলে দেখি
আমার মায়ের ভাষা চিরদিন আমার শরীর
শরীরের লেখাগুলি দিকে দিকে তোমার আমার!
জামালউদ্দিন বারী
ভাঙ্গনের কাল
শাপলা শালুকের দেশে ধেয়ে আসে ভাঙ্গনের কাল
অগণন স্বপ্ন ভাঙ্গা মানুষ,
কংক্রীট নগরে গড়ে তোলে পরিযায়ী আশ্রয়
ভোগের চোরাবালি গিলে খায় রাজনীতির মিথ্যা ফানুস।
পদ্মা- যমুনা-তিস্তার চরে বুড়িগঙ্গা,শীতলক্ষ্যার তীরে
ভেসে আসে আতঙ্কবাজ বেওয়ারিশ লাশ,
র্যাব কমান্ডো ডিটেকটিভ বন্দুক গ্রেনেড বারুদ
নর্দমার মশার কাছে আত্মঘাতে পরাজিত
অত্যাচারি উদ্ধত নমরূদ।
মোটা তাজা গরুগুলো সন্ধ্যায় জাবর কাটে সকালের ঘাস
এইসব দেখে দেখে রাজার সভাসদ
হুক্কায় টান দিয়ে বলে ওঠে বলিহারি আহা-বেশ বেশ।
দ্বীপ সরকার
নদীপুরানের যাত্রী
সরিসৃপ হাওয়ার নৌকো
এঁকেবেঁকে নদীপুরানের যাত্রী চলছে সজোড়ে উজানেÑ
নুইয়ে এসেছে মেঘÑদ্বীপচূড়ায় স্থির দেয়াল
ন’ড়ে চ’ড়ে উঠলে কাঁপে আঙৃলের নিরব ভূমিকম্প
ঢেউ আছড়ে পড়ে কিনারে
যাত্রীরা সন্দেশ ভেবে চুষে খায় মেঘের চোয়ানিÑ
তর্জনীর ছায়ায় ন’ড়ে খুঁত খুঁতে স্বভাব
দিকবিদিক ঘোরকুয়াশার হেলান ছই
মাঝির চোখে দ্রৌপদী দূরের ঝাপসা
বালুর স্তূপে নৌকা থামেÑনিঃশ্বাস
ফসকে বেরোয় নাক থেকে
মাহমুদ কামাল
তিনি কবি আল মাহমুদ
বাঁধের কিনারে থেকে ব্যাধের ব্যাসার্ধ থেকে
তীব্র তীরের আঘাতে পরাক্রম দৃপ্ত শব্দাবলী
যেন তীর থেকে উঠে আসা নাবিকের ঐশ্বর্য সঙ্গীত
বাংলার নতুন প্রকৃতি
তিনি কবি আল মাহমুদ।
সাহস ও সৌন্দর্য়ের মেলবন্ধনে
কবিতাকল্পনালতা প্রকাশিত জীবনের ঠোঁটে
শ্রদ্ধাহীন সময়ের আন্ধকার থেকে
আলো হয়ে শব্দ করে কার পক্তিমালা?
তিনি কবি আল মাহমুদ।
রকি মাহমুদ
তোমাকে অভিবাদন হে বরষা
তোমাকে অভিবাদন হে বরষা, খরতাপে খন্ডিত এ চরাচরে
চিরাচরিত আটপৌরে রূপ ও রসে তোমায় দিব্যি মানাবে।
অখন্ড অবসরে সহজিয়া আবেগে ছন্দময় বিলাসী বেশে
নৈঃশব্দ্যে পুড়ে যাওয়া প্রকৃতির বুকে জীবনলব্ধ শব্দকুহক বুনে।
অতলান্ত শীতল হোক মনস্তাপে দগ্ধ মনোভূমি; গার্হস্থ্য শিল্প
অসহ্য নির্জনতা ভেঙ্গে জন্মান্তর বিস্তৃত হোক সম্পর্কের অদৃশ্য সেতু
আষাঢ়ী পূর্ণিমায় ভেসে যাক নিবিড় অন্ধকারের দূরত্বটুকু।
প্রশান্ত প্রশ্রয়ে জেগে উঠুক থোকা থোকা মৃদুগন্ধি কদম পাপড়ি
সবুজে সবুজে প্রতœবতী হোক পৃথিবী, ধুয়ে যাক তাবৎ পাপবোধ।
কামরুল আলম কিরণ
তুমিই বলো
হায় রে ভীরু গোলাপ কলি
ফুটলে নাকো তুমি আর,
কোন কাননে ফুটছো তুমি
বলো না তা একটি বার।
আমি না হয় কষ্ট পেয়ে
এমন কোনো শ্রাবণ দিনে,
পরবো ঝরে চিরতরে
তোমার ভালোবাসা বিনে।
হায় রে আমার নীহারিকা
তোমার কক্ষপথে ঘুরে,
হচ্ছি নিঃশেষ এই যে আমি
আর কতোকাল রাখবে দূরে।
নাও না কাছে এমনি করে
চলবো কতো সমান্তরাল?
তোমার সাথে হবে মিলন
প্রতীক্ষাটা আর কতোকাল?
শাহবুদ্দিন নাগরী
এই হাত এই ভাগ্যরেখা
আমি প্রতিদিন অবাক হয়ে আমার হাত দেখি,
হাতের ভেতর রেখা, রেখার ভেতর আমার ভাগ্য,
ষড়ঋতুর খেলায় পাল্টে যায় ত্বকের সূক্ষè অনুভূতি,
কখনো রোদ কখনো জোছানা আটকে রাখি মুঠোয়,
বৃদ্ধিতে ভেজাই, কখনও মুড়ে রাখি হাতমোজায়।
এ এক আশ্চার্য হাত, আঙুলগুলো ছাড়িয়ে পড়ে
মেশিনগানের ব্যারেলের মতো করতল ফুটন্ত তেলের
কড়াই হয়ে গড়িয়ে দেয় ক্রোধের উত্তাপ, আকাশ
থেকে খাবলে তুলে নেয় শাদা শাদা মেঘ, জমির
নিপুণ কৃষিকাজ নষ্ট করে ধূর্ত শেয়ালের মতো।
এ এমন এক হাত যে গাড়ির ওয়াইপারের মতো
আলাগোছে, আঙুল দিয়ে বাতাসে লিখতে পারে
প্রেমের কবিতা। এই অবাক করা হাত খেলা করে
রেখা নিয়ে, প্রতিদিন বদলে যায় রেখা, অথচ রেখার
গভীর লুকানো ভাগ্য একচুল নড়ে না আমার,
থেকে থাকে নষ্ট-অচল পুরোনা দেয়াল ঘড়ির মতো।
সুমন আমীন
বিলাপ
কথার কারুকার্যে সময় উড়ে
সময়ের আড়ালে হাসে কাপুরুষ হৃদয়
মৌর্য পাল মুঘল স্মৃতির
আলোছায়াময় এই দিঘী সাক্ষী;
সাক্ষী ভৈরব নদের শৌর্যময় ইতিহাস
এক কিশোরীর গোপন প্রণয়ের সাথে
খেলা করে বিশ্বাসহীন চেঙ্গিসীয় তলোয়ার
যার বিষাক্ত ছোবলে সবুজ হৃদয় ধু ধু সাহারা
সেই আজ প্রেমিক পুরুষ সেজে প্রেম খোঁজে!
প্রতœখননে মনু ভালোবাসা নেই
পুরোটাই ছলনার বিদীর্ণ বিলাপ।
আরাফাত বিন আবু তাহের
বর্ষার কবিতা
এই বর্ষায় চলো জল ধারে আচমকা ধরে বলো তারে ভালোবাসি।
পৃথিবীর সব বাঁধে এই যারে এই বারিষ ধারে বারে বারে কাছে আসি।
শহরতলি ছেড়ে ঐ বনপুর ভেসে যাই দু’জনে বহুদূর চল সাঁতরাই।
আয়েশি বন বাদাড়ে ভরপুর ঝরাজল ছোঁব চল জলপুর জল যাত্রায়।
সেখানেও বাড়বে বর্ষার ঋণ টুপটাপ ঝরবে টানা তিনদিন জল বৃষ্টির।
কাটবে দিন সব দুঃখবিহীন উলাসে বাজে রিমঝিম বীণ মহা সৃষ্টির।
ভিজে গাছ ভিজে ডালপালা নেই পাখি ঘাস গালিছা গালা-বাদ কেউ!
এ জল ধারা, এ চুপচাপ জ্বালা ভিজুক আমার সুখের একচালা-গাঙ্গে ঢেউ!
ফাহিম ফিরোজ
আমার বসন্ত
এতো সর্ষেফুল! কত সর্ষেফুল? পদ্মার উত্তর চড়ে...
নামছে সোনালু লতা, এতদিন পর দুইবাহু
শৈশব লতিয়ে। আগুন দুপুর; তবু কি মধুর বায়ু
ব্যাধির শরীরে আমার বাড়ায় আয়ু। কি মধুর বায়ু
একে বেঁকে খুলে সেই ন্যাংটা কাল। ঝাঁপি, মাখামাখি
খুব কাঁপি। খোলে রাধা ঝাঁপি। লাজে মরে যাই
সেই দিন ধরে রাখতে পারিনি তার, শূন্যে রক্ত ঝরে
অঙ্গ শোভন আজ আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে ঢুকে
নাকের ফোঁকড় দিয়ে, আমার মাথায় প্রজাপতি তাজ
এই বালিগৃহে, কই যে তারে রাখুম
আইছে সোনালু লতা ঢেউ তোলা প্রতেœর সুন্দরী
রাতকে এখন বেঁধে দেই হারানো দিনের ক্যাসেটের লগে।
গুমড়ে ভেঙে কাঁদে। গহন রাত্রির ফুসফুস
গ্রীবায় টসটস কষ্ট নামে। ছেঁচড়া পবন থেকে
প্যাটিকোট টেনে দেই পিসিমারে গোঁড়ালি চুড়ায়। মমতায় ক্ষমতায়
গোপন চুলোর অগ্নি কষ্টেই দমিয়ে রাখি
শুধু পবিত্র আলোর সুতো দু’জনের মাঝে স্থির থাকে
এই লঘুলায়ে। কোথায় রাখম তিনার?
এত কথা কয় সোনা, কত কথা কয়ে যায় শিশুকণ্ঠ ধার নিয়ে
হাফপ্যান্ট হয়ে আসে রাত। আমি কাত সেই মুখের নিকট
কোন কুমার গড়েছে তার, শতবর্ষ পরম যতনে
কপোল-অধর থেকে উপছে পড়ছে জ্যো¯œা ঘি
নদীতে এবার খুব বন্যা হবে। মায়াবিনীর দু’চোখে বর্ষা
গ্রাম ছাড়ছে সে। পৃথুলা শরীর আছড়ে পাছড়ে
সত্যি আমি নুয়ে পড়া প্যারাস্যুট।
গ্রাম ছাড়ছে সে। উৎসুক জানালাগুলোর বুক ভেঙ্গে।
সেই দিন ধরে রাখতে পারিনি তার।
যায়রে, সোনার প্রতিমা, যায় রে, আহা রূপম বাহার!
মাহবুবা করিম
দেশ টলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে
দেশ পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে!
তার কপালে হাত রাখবে কেউ নেই!
দেশ টলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে;
তাকে বাঁচাবার কেউ নেই!
তাকে জীয়নকাঠি ছোঁয়াও
তাকে মৃত্যুর কোল থেকে তুলে নিয়ে আসো
জীবনের প্রারম্ভে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।