পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া কৃষি অঞ্চলে এবার গত বছরের তুলনায় আলু ও পিঁয়াজের গড় উৎপাদন বেশি হলেও কাঁচা বাজারের এই দুটি নিত্যপণ্যের দাম রোজার মধ্যে কেন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেল তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না ক্রেতা সাধারণ। আর এ ব্যাপারে বাজার মনিটরিং কমিটির কোন ভূমিকা আছে কিনা তাও ভোক্তারা জানে না। পাশাপাশি চাহিদার প্রায় কাছাকাছি দেশী পিঁয়াজের উৎপাদন পৌঁছে গেলেও কেন বিপুল পরিমাণে ভারতীয় নিম্নমানের পিঁয়াজ আমদানি করে কার্যত বগুড়াকে ভারতীয় পিঁয়াজের ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত করা হচ্ছে তারও কোনো সদুত্তর মিলছে না!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ায় রোজার আগের দিনেও দেশি পিঁয়াজ প্রতিকেজি ২৮/৩০ এবং বগুড়ার বিখ্যাত ফাটা পাগড়ী আলু ১৬ টাকা এবং হল্যান্ডসহ অন্যান্য প্রজাতির আলু বিক্রি হয়েছে ১৪/১৫ টাকা কেজি দরে। কিন্তু রোজার দিনে পিঁয়াজের দাম বেড়ে দেশী ৪০ টাকা এবং আমদানি করা ভারতীয় পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৪ টাকায়। অন্যদিকে ফাটা পাগড়ী ও হল্যান্ড আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দরে। আলু-পিঁয়াজের পাশাপাশি অন্যান্য কাঁচা তরিতরকারির দামও হয়ে উঠেছে আকাশ চুম্বি!
বগুড়ার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাবনা-সিরাজগঞ্জ- জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলাকে নিয়ে গঠিত বগুড়া কৃষি অঞ্চলে এ বছর ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৫শ’ ২০ মেট্রিক টন পিঁয়াজ এবং ২২ লাখ ৮৪ হাজার ৮শ’ ৭৯ মেট্রিক আলু উৎপাদিত হয়েছে । গত বছর এই অঞ্চলে পিঁয়াজের উৎপাদন হয়েছিল ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৬শ’ ৮১ মেট্রিক টন আর আলু উৎপাদিত হয়েছিল ২১ লাখ ৬৬ হাজার ৭শ’ ৮৫ মেট্রিক টন। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে ১১ হাজার মেট্রিক টন পিঁয়াজ এবং প্রায় ১ লাখ মেট্রিন আলুর উৎপাদন হয়েছে বেশি। কাঁচা বাজারের আড়তে দেশী ও ভারতীয় পিঁয়াজের ছড়াছড়ি আলুরও কমতি নেই তারপরও দাম কেন বেশি এই প্রশ্নের কোন সদুত্তর কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।
বগুড়ার কয়েকটি ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫ জন আমদানিকারক এবার ভারতের কানপুর ও নাসিক থেকে কমপক্ষে ২ লাখ মেট্রিক কমদামি ও নিম্নমানের ভারতীয় পিঁয়াজ আমদানী করেছে। ভারতীয় পিঁয়াজ এতই নিম্নমানের যে, আড়তে রাখতেই তা’ পচে যাচ্ছে। বগুড়ার কাঁচা বাজারের বৃহত্তম আড়ত রাজাবাজারে এখন পচা পিঁয়াজের গন্ধে ঢোকাই কঠিন হয়ে পড়েছে বলে ক্রেতা/বিক্রেতাদের অভিযোগ। রাজাবাজারের আশপাশের রাস্তায় এখন ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় পড়ে আছে পচা পিঁয়াজের স্তূপ। এই স্তুপিকৃত পচা পিঁয়াজ বাছাই করে টোকাইরা বেছে বেছে পিঁয়াজ সংগ্রহ করে তা ২/১ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে গরীবদের বাজার বলে চিহ্নিত বগুড়া রেলওয়ে মার্কেটে। কিছু কিছু মিডিয়ায় এই পচা ও খাবার অযোগ্য পিঁয়াজের দামকে উল্লেখ করে ‘বগুড়ায় ২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ’ বলে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। মূলত মজুদদার সিন্ডিকেটের অপকর্ম আড়াল করতেই এই ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে ।
বগুড়া জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, পিঁয়াজের উৎপাদন, মজুদ , আমদানির যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধির তথ্য পাওয়া গেলে দায়ী মজুদদার ও কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধিকারীদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়াও প্রচুর দেশী পিঁয়াজের মজুদ থাকা সত্ত্বেও নিম্নমানের ভারতীয় পিঁয়াজ আমদানি কেন বা কারা আমদানি করছে সে সম্পর্কেও খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে ।
বগুড়ার বেশ কয়েকজন আমদানিকারক ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, ভারতের পাঞ্জাব, গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশে প্রচুর পিঁয়াজের উৎপাদন হওয়ায় সেখানে মজুদ পিঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়েছে উৎপাদক চাষী ও ব্যবসায়ী এবং রপ্তানিকারকরা। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোন দেশ ভারতীয় নিম্নমানের পিঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহী না হওয়ায় ওইসব পিঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানি ছাড়া ভারতের কোন গত্যন্তর না থাকায় এখন নানা কৌশলে বাংলাদেশকেই বানানো হচ্ছে ডাম্পিং স্টেশন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে ২৪/২৫ লাখ মেট্রিন টন পিঁয়াজের চাহিদার বিপরীতে এখন পিঁয়াজের উৎপাদন ২১/২২ লাখ মেট্রিন টনে পৌঁছে গেছে। তবে বগুড়া অঞ্চলে চাহিদার চেয়েও পিঁয়াজের উৎপাদন বেশি। অথচ এর পরেও বগুড়া থেকেই সবচে বেশি পরিমাণে ভারতীয় পিঁয়াজ আমদানি করা হয়। ১৫ থেকে ২০ জনের একটি আমদানিকারক সিন্ডিকেট ভারত থেকে পিঁয়াজ, আলু, আদা-রশুন ইত্যাদি কাঁচামাল আমদানির সাথে জড়িত বলে জানা গেছে ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।