Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বৃষ্টিতে নাকাল গরুর হাট

রাজধানীতে এখনো জমেনি : ক্রেতার চেয়ে দর্শক বেশি : পাইকারদের ভোগান্তি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনে ২৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। এই ২৩টির বাইরে রাজধানীর স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতেও এবার প্রচুর দেশীয় গরু নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। এখনো জমে ওঠেনি কোরবানির পশুর হাটগুলো। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে কোরবানির পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সাথে হাটে আসা ক্রেতারাও পড়েছেন ভোগান্তিতে। কোনো কোনো হাট বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। হাঁটু পানিতে রাখা হয়েছে গরু। ক্রেতাদের হাটে ঘুরতে হচ্ছে কাদা পেরিয়ে। সব মিলে বৃষ্টিতে নাকাল গরুর হাট।

ব্যবসায়ীরা জানান, আবহাওয়া খারাপের কারণে ক্রেতা সমাগম কম। যারা হাটে আসছেন তারা দাম জানতে চেয়ে চলে যাচ্ছেন। অর্থাৎ ক্রেতার চেয়ে দর্শক বেশি। বিক্রেতাদের আশা আবহাওয়া ভালো হলে জমে ওঠবে পশু বেচাকেনা। দুপুরে রাজধানীর কমলাপুর হাটে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু, ছাগল, মহিষ নিয়ে ব্যবসায়ীরা হাটে এসেছেন। ক্রয়ের উদ্দেশে ক্রেতা না থাকলেও অনেককে দাম-দর করতে দেখা যায়। তবে বিক্রির আগ্রহ নিয়েই অপেক্ষায় আছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ ক্রেতা কম থাকলেও দু-একটি গরু বিক্রিও হচ্ছে।

বৃষ্টির কারণে কমলাপুর হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বৃষ্টির পানি থেকে গরুগুলোকে রক্ষার জন্য বেপারীদের আপ্রাণ চেষ্টা। কেউ ত্রিপল দিয়ে, কেউ মোটা কাপড়-পলিথিন দিয়ে বৃষ্টিকে মানানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তারপরেও কেউই রক্ষা পায়নি। বিক্রেতা, ক্রেতা-দর্শনার্থী সবাই ভিজেছেন। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ায় ইতোমধ্যে অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আফতাবনগর হাটে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে গরুর জ্বরের ওষুধ সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।

কমলাপুর হাটে কুষ্টিয়া মেহেরপুর থেকে আসা নজরুল ইসলাম খামারির রাখাল রিপনের বলেন, ৮টি গরু এনেছি। গড়ে দাম ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা। তবে এখনো বিক্রি করার মতো দাম-দর কোনো ক্রেতা করেননি।

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার খামারি রফিকুল আলম বলেন, আমার নিজের ঘরে পালিত তিনটি গরু নিয়ে এসেছি। এবার কোরবানি ও ১৫ আগস্ট পাশাপাশি। কোরবানিতে পশু তো বিক্রি হবেই। সাথে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে অনেক গরু জবাই হয়। সে জন্য এবার বাজার (দাম) পাওয়ার আশা থাকছে। তবে বর্ডারের (ভারতীয়) গরু বড় ফ্যাক্টর। বর্ডারের গরু না এলে লাভের আশা বেশি থাকে।

গাবতলী হাটে ৯০ হাজারে একটি মাঝারি সাইজের গরু কিনে পাইকপাড়ার বাসিন্দা আনিসুর রহমান ঘরে ফিরছিলেন। কত দামে কিনেছেন তা জানতেই অনেকের ভিড়। তিনি বলেন, আমি নিজেও পোশাক ব্যবসায়ী। নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকব বলে আগেভাগেই গরুটি কেনা। শনিরআখড়া হাট বসেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপরে। হাটের সীমানা ছাপিয়ে গরু চলে গেছে দনিয়া এলাকার ভিতরে। সেখানে রাস্তায় পানি জমে গেছে। বৃষ্টির মধ্যেই ভিজছে গরুগুলো। গরুর হাটের কারণে এলাকার দোকানগুলো প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ। এ কারণে পাইকারদের বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়ও কম। গরু রেখে আবার বেশিদুর যাওয়াও ঝুঁকি। দুপুরে অঝোর বৃষ্টিতে অনেক ব্যবসায়ীকে ভিজতে দেখা গেছে। জব্বার নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আগের রাতে (বুধবার) গরু বৃষ্টিতে ভিজেছে। প্রচÐ গরমে সেটা ছিল আরামের। কিন্তু এখন বৃষ্টিতে ভেজা মানেই জ্বর আসতে পারে, ঠান্ডা লাগতে পারে। সে কারণে চিন্তাই আছি। কেরানীগঞ্জ থেকে গরু নিয়ে শনিরআখড়া হাটে আসা নায়েব আলী বলেন, বৃষ্টির কারণে ভোগান্তি অনেক বেড়েছে। আগামী কয়দিন কি হয় আল্লাহ জানেন। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে ওপরের শেড কিংবা ত্রিপল কোনো কাজে আসছে না। গরুও ভিজছে, মানুষও ভিজছে। এভাবে চলতে থাকলে গরু নিয়ে আরও তিনদিন (ঈদের আগের দিন পর্যন্ত) কাটানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তাতে দাম যে পড়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

এদিকে, বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় পশুর হাটের অনেক জায়গাতেই পানি জমে গেছে। কোথাও কোথাও হাঁটুপানির সঙ্গে পশুর মল-মূত্র মিশে যাওয়ায় হাটে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। একই সঙ্গে, গত দুই দিনে বেড়েছে মশার উপদ্রবও। একদিকে বৃষ্টির বাগড়া, সঙ্গে মশার উপদ্রব। সাথে ডেঙ্গুর আতঙ্কতো আছেই। তবে, হাট কমিটি আশ্বস্ত করেছেন বিক্রেতাদের। তাদের মতে, অনেকের অফিস এখনও ছুটি হয়নি। তাছাড়া বৃষ্টির কারণেই বের হচ্ছেন না অনেকে। আজ শুক্রবার থেকে বেচা কেনা জমে উঠবে।



 

Show all comments
  • মাহিন আদনান ৯ আগস্ট, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
    আজকে যারা ঢাকা শহরে যারা চলাচল করেছে তারা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে। গরুর হাটের অবস্থা তো বলার অবকাশ রাখে না।
    Total Reply(0) Reply
  • মাহিন আদনান ৯ আগস্ট, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
    আজকে যারা ঢাকা শহরে যারা চলাচল করেছে তারা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে। গরুর হাটের অবস্থা তো বলার অবকাশ রাখে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Shishir Babu ৯ আগস্ট, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
    বর্ষায় ফসলের ক্ষতি ? ফসলের লাভ ? জানতে হলে কোন কৃষি বিজ্ঞানী নয়, মসনদ মালিকের কাছে যান।
    Total Reply(0) Reply
  • Masud Parvez ৯ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
    সাপ যখন জীবিত থাকে তখন সে পিঁপড়া খায়। আবার সাপ যখন মরে যায় তখন পিঁপড়া সাপকে খায়। একটি গাছ দিয়ে যেমন কয়েক লাখ ম্যাচের কাঠি তৈরি করা যায়, তেমনি একটি ম্যাচের কাঠি দিয়েও কয়েক লাখ গাছ পুড়িয়ে দেয়া যায়। সব সময় সবার সুদিন থাকে না, সময় একদিন বদলায়.....
    Total Reply(0) Reply
  • Karim Khan ৯ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
    একতে বৃষ্টি, গরুর হাট। তার ওপরে আমরা এখানকার মানুষ যেভাবে যেখানে খুশি ময়লা ফেলি আর নির্লিপ্ত ভাবে যেই ভাগাড়ে বাস করি তা দুনিয়ার কোন কর্তৃপক্ষের ঠিক করা সম্ভব নয়। আমরা যেরকম কর্তৃপক্ষ সেরকম , তারা যেরকম আমরাও সেরকম। হয়তোবা প্রকৃতি সেজন্যই এডিশ মশা পাঠিয়েছে যাতে আমরা লাইন আসি এবং কর্তৃপক্ষও লাইনে আসে এবং পরিষ্কার রাখে চারিপাশ। এডিশ মশাতো আর পার্থক্য বুঝেনা কে রাজা কে প্রজা।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ জামান হোসেন জন ৯ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
    হে আল্লাহ গরু ব্যবসায়ীদের রক্ষা কর। তারা সারাদেশ থেকে অনেক আশা নিয়ে এসেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৯ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
    এইতো কাল থেকে পশুরহাট জমা শুরু হবে। শুধু বৃষ্টি না থাকলেই হয।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৯ আগস্ট, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
    এইতো কাল থেকে পশুরহাট জমা শুরু হবে। শুধু বৃষ্টি না থাকলেই হয।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ